যে ৮ ক্ষেত্রে অনন্য ব্রাজিল বিশ্বকাপ

প্রত্যেকটি বিশ্বকাপেই আগের থেকে নতুন কোনো চমক থাকে। ব্রাজিল বিশ্বকাপও তার থেকে ব্যতিক্রম নয়। এই বিশ্বকাপেও বেশকিছু বিষয় লক্ষ্য করা যাবে যা আগের আসরে হয়নি। ব্রাজিল বিশ্বকাপের ৮টি অনন্য বৈশিষ্ট্য নিয়ে এবারের আয়োজন।

১. গোল লাইন প্রযুক্তির ব্যবহার: গোল লাইন প্রযুক্তি ব্যবহার করার কারণে গোল নিয়ে বিতর্কের আর কোনো সুযোগ থাকবে না।

গত বিশ্বকাপে ল্যাম্পার্ডের সেই ‘ভৌতিক ঘটনার’ কথা নিশ্চই আপনাদের মনে আছে। দূরে থেকে নেয়া শটটি প্রথমে বার পোস্টে লেগে ভেতরে ঢোকে তারপর বের হয়ে আসে। কিন্তু রেফারি সেটাকে গোল হিসেবে স্বীকৃতি দেননি। ফলাফল, বিশ্বকাপ থেকে ইংল্যান্ডের বিদায়। অবশ্য ইংল্যান্ডও বিতর্কিত একটি গোলের সুবিধা নিয়েই ১৯৬৬ সালে নিজেদের একমাত্র শিরোপাটি দখল করেছিল।

ল্যাম্পার্ডের ‘ভৌতিক ঘটনাটি’ই ফিফাকে বাধ্য করেছে ব্রাজিল বিশ্বকাপে গোল লাইন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে। এবং বিশ্বকাপে প্রযুক্তিটির ব্যবহার যাতে কোনো ঝামেলার কারণ না হতে পারে সে জন্য কনফেডারেশন কাপেও এ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। অবশ্য বিশ্বকাপের ৩২ রেফারির সবার এ প্রযুক্তি ব্যবহারের অভিজ্ঞতা নেই!

২. অতিরিক্ত গোল বল আর নয়: গত বিশ্বকাপে ব্যবহৃত জাবুলানি বলটি নিয়ে বেশকিছু অভিযোগ ছিল। ইংল্যান্ড তারকা খেলোয়াড় ওয়েন রুনি বলটির দোষ সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘ধরেন আপনি বক্সের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন হেড করার জন্য। হেড করার চেষ্টা করবেন তারপর দেখবেন বলটার গতি পাল্টে গেছে।’
স্পেন অধিনায়ক ইকার ক্যাসিয়াস তো রীতিমতো বলটিকে ‘বাজে বল’ আখ্যা দিয়েছিলেন। ওয়েন রুনি এবং ক্যাসিয়াস কারো অভিযোগই মিথ্যা নয়। বিষয়টি নজরে নিয়েছিল অ্যাডিডাস। তাই জাবুলানির সমস্যা ব্রাজুকার মধ্যে থাকবে না বলেই আশ্বাস দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

আরো একটি মজার বিষয় হচ্ছে, বিশ্বকাপে ৬৪ ম্যাচ হওয়ার পর থেকে সবচেয়ে কম সংখ্যক গোল হয়েছিল ২০১০ বিশ্বকাপেই। যেহেতু বলের ধরন পাল্টাচ্ছে সে হিসেবে গোল সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এমন আশা করতেই পারবে ফুটবল পাগলরা।

৩. স্টেডিয়ামে বাদ্যযন্ত্র নয়: ভুভুজেলার কথা মনে আছে? ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে কান ফাটানো সেই আফ্রিকান বাদ্য যন্ত্রটি। ব্রাজিল বিশ্বকাপে সে রকম কোনো বাদ্যযন্ত্র থাকছে না। যদিও ভুভুজেলার মতো এক ধরনের বাদ্যযন্ত্র ফিফা বিক্রি করছে। তবে সেটা বাজাতে হলে স্টেডিয়ামের বাইরেই বাজাতে হবে। কারণ লীগের ম্যাচ চলাকালীন মাঠের মধ্যে এক ভক্তের বাদ্যযন্ত্র ছুড়ে মারার ঘটনায় দেশটির বিচার মন্ত্রণালয় স্টেডিয়ামে বাদ্যযন্ত্র নিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে।

৪. দুই ম্যাচে গোল শূন্য ড্র নিশ্চিত করতে পারে বিদায়: না নতুন কোনো আইন নয় এটা। বরং মৃত্যুকূপ কুখ্যাতি পাওয়া গ্রুপ ‘ডি’ এর দলগুলোর হিসাব এটা। এমনিতে ৩ পয়েন্ট নিয়েও দ্বিতীয় রাউন্ড খেলার উদাহরণ থাকেলও এই গ্রুপটির ক্ষেত্রে সে সুযোগ থাকছে না। গ্রুপটিতে পড়েছে ইংল্যান্ড, ইতালি আর উরুগুয়ের মতো শক্তিধর তিনটি দল আর তুলনামূলক দুর্বল কোস্টারিকা। এখন তিনটি দলই যদি কোস্টারিকাকে হারায় এবং নিজেদের মধ্যে ড্র করে। তাহলে প্রত্যেকের পয়েন্ট হবে পাঁচ করে। তখন গোল ব্যবধানই হবে একমাত্র সম্বল। আর যদি তিন দলের কোনো একটি দুইটি খেলায় ড্র করে ফেলে, তাহলে দেশে ফেরার টিকিট কাটার জন্য দেরী করার সুযোগ থাকবে না।

৫. স্প্রের ব্যবহার: ফ্রি কিকের সময় বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়দের এগিয়ে আসা এবং সেটা নিয়ে সৃষ্ট ঝামেলা রেফারিদের জন্য বহু পুরনো। কিন্তু ব্রাজিল বিশ্বকাপে সে ঝামেলা থাকছে না। বিশেষ এক ধরনের স্প্রের মাধ্যমে ফ্রি কিক নেয়ার স্থান ও বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়দের ফ্রি কিক প্রতিহত করার জায়গা চিহ্নিত করবেন রেফারিরা। এই স্প্রের ব্যবহারে সাদা এক ধরনের দাগ তৈরি হবে যার ফলে খেলোয়াড়রা আর দাগের বাইরে আসতে পারবেন। আর এক মিনিট পর দাগ মিলিয়ে যাওয়ার কারণে মাঠের সৌন্দর্যও নষ্ট হবে না।

৬. বিজ্ঞাপন বিরতি ও পানি পান বিরতি: এ পর্যন্ত প্রত্যেকটি বিশ্বকাপেই শুধুমাত্র খেলার দুই অর্ধেকের মাঝে ১৫ মিনিটের বিরতি ছিল। কিন্তু ব্রাজিল বিশ্বকাপে তার ব্যতিক্রম ঘটতে যাচ্ছে। ১৫ মিনিটের বিরতি ছাড়াও আরো দু’টি বিরতি থাকতে পারে। প্রথমটি ৩০ মিনিটে এবং দ্বিতীয়টি খেলার ৭৫ মিনিটে। ব্রাজিলের গরমে খেলোয়াড়দের মানিয়ে নেয়ার জন্য তিন মিনিটে পানীয় পরিবেশন করা হবে। পাশাপাশি ওই সময়ে প্রচারিত ৩০ সেকেন্ডের বিজ্ঞাপন থেকেও মোটা টাকা কামানোর সুযোগ হাতছাড়া করবে না ফিফা। অবশ্য এই দু’টি বিরতির জন্য তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হতে হবে। ম্যাচ শুরু হওয়ার একঘণ্টা আগেই তাপমাত্রা মাপা হবে।

৭. এক দেশ, তিন রকম সময়: বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশ ব্রাজিল নয়, তবে দেশটিতে তিনটি আঞ্চলিক সময় অনুসরণ করা হয়। এ কারণেই বিশ্বকাপের ম্যাচগুলোর কোনোটা রাত ১০টা, কোনোটা রাত ১টা আবার কোনোটা ভোর ৪টায় অনুষ্ঠিত হবে। ব্রাজিলের আঞ্চলিক সময়গুলোর প্রথমটির সঙ্গে বাংলাদেশ সময়ের পার্থক্য ১০ ঘণ্টা, দ্বিতীয়টির সঙ্গে ৯ ঘণ্টা এবং শেষটির সঙ্গে ৮ ঘণ্টা।

৮. বিশ্বকাপের জন্য গান বাঁধেনি ইংল্যান্ড: বিশ্বকাপে প্রত্যেকটি দলকে অনুপ্রেরণা দেয়ার জন্যই একটা করে দলীয় সঙ্গীত থাকে। কিন্তু ২০১০ সালের ন্যায় এবারও ইংল্যান্ড দলের জন্য কোনো অনুপ্রেরণামূলক সঙ্গীত থাকছে না। সর্বশেষ ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপেই ইংল্যান্ডের কোনো খেলোয়াড় দলের আনুষ্ঠানিক সঙ্গীত গেয়েছিল।



মন্তব্য চালু নেই