যে ১০ টি কারণে সারা বিশ্বে পৌরুষত্ব হারাচ্ছেন পুরুষেরা

সারা বিশ্বে নারীদের অধিকারের জন্য মানুষ অনেক অনেক বেশি সোচ্চার। এ ব্যাপারটি ভালো নিঃসন্দেহে। কিন্তু এই ভালো কাজটি করতে গিয়ে নীরবে সৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে একটি দুঃখজনক পরিস্থিতি। কী সেই পরিস্থিতি? পৃথিবীজোড়া পুরুষেরা হারাচ্ছেন নিজেদের পৌরুষত্ব। শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক মর্যাদার দিক দিয়ে নিজেদের পূর্ব অবস্থান হারিয়ে ফেলছেন পুরুষেরা। আসুন দেখে নেওয়া যাক সমাজ বিজ্ঞানীদের চোখে এর কারণগুলো।

১) কমে যাচ্ছে উর্বরতা
ফার্টিলিটি বা উর্বরতা কমে যাওয়া আধুনিক সমাজে পুরুষদের মাঝে ক্রমাগত দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে চলেছে। স্পার্ম কাউন্ট কমে যাওয়ার এই ব্যাপারটার পেছনে কারণ হিসেবে অতিরিক্ত কীটনাশক একটি কারণ। এন্ডরফিন নামের হরমোন কমিয়ে দিতে সক্ষম রাসায়নিক যেমন বিসফেনল এ, এবং এমন অনেক রাসায়নিক, কৃত্রিম পদার্থ আমাদের খাদ্য এবং পানির উৎসে থেকে আমাদের ক্ষতি করে চলেছে প্রতিনিয়ত।

২) রাসায়নিক প্রভাবে পুরুষের মাঝে বেড়ে যাচ্ছে “নারীত্ব”
ফথ্যালেট নামের এক ধরনের রাসায়নিকের সংস্পর্শে বেশি সময় কাটানোর কারণে ছেলেদের স্বাভাবিক টেস্টোস্টেরন নিঃসরণ কমে যাচ্ছে এবং যৌনাঙ্গের মাঝে দেখা দিচ্ছে অস্বাভাবিকতা। বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিকে এসব ফথ্যালেট পাওয়া যায়। এমনকি গর্ভে অবস্থান করার সময়ে মায়ের শরীরেও যদি এর প্রভাব পড়ে, তবে সেই বাচ্চা ছেলের মাঝে পুরুষসুলভ আচরণের ঘাটতি থাকবে।

৩) পুরুষ “রোল মডেল” এর অবক্ষয়
আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগেও টেলিভিশনে মূল চরিত্রে দেখা যেত এমন সব পুরুষ চরিত্রকে যাদের দেখে অনুপ্রাণিত হতে পারতো তরুণ প্রজন্ম। কিন্তু এখনকার সময়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রেই পুরুষদের উপস্থাপন করা হয় মাথামোটা, কিছুটা নির্বোধ হিসেবে আবার কিছু ক্ষেত্রে তাদেরকে উপস্থাপন করা হয় যৌন নির্যাতনকারি হিসেবে। এসব দেখে যেসব ছেলেরা বড় হচ্ছে তারা মনে করছে এমন হওয়াটাই বুঝি স্বাভাবিক!

৪) “মেট্রোসেক্সুয়াল” অস্থিরতা
এখনকার সামাজিক অবস্থার কারণে, ভদ্র এবং নম্র দেখানোর চেষ্টায় অনেক পুরুষই পরিণত হয়েছেন “মেট্রোসেক্সুয়াল” মানুষে। এসব পুরুষেরা একই নারীর সাথে জীবন কাটিয়ে দেওয়ার চিন্তায় শঙ্কিত হন এবং বারবার সঙ্গিনী পরিবর্তন করতে থাকেন। ফলে সমাজে সৃষ্টি হচ্ছে অস্থিরতা এবং নারীরাও জীবনে স্থায়ী হবার জন্য পুরুষ সঙ্গি খুঁজে পাচ্ছেন না। এসব পুরুষেরা একেবারেই ভুলে যান যে, অনেকগুলো সঙ্গিনীর রেকর্ড থাকা নয় বরং একজন নারীর প্রতি বিশ্বস্ত থাকাটাই আসলে পৌরুষত্বের লক্ষণ।

৫) সাংস্কৃতিক মার্ক্সবাদ
ধরেই নেওয়া হয় যে সমাজে নারীর খারাপ অবস্থানের কারণ হলো আমাদের পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা। এর পেছনে অন্য যে কারণগুলো রয়েছে তাকে সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে যাওয়া হয় এবং শুধুই পুরুষদের দোষারোপ করা হয়।

৬) “পুরুষ বেশি বেতন পায়”
লিঙ্গ-বৈষম্যের কারণে নারীরা সব সময়েই পুরুষের চাইতে কম বেতন পায়- এ ধারনাটি বদ্ধমূল হয়ে গেছে আমাদের মাঝে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, পুরুষের বেতন কিছুটা বেশি হবার পেছনে রয়েছে এমন সব কারন যেখানে বৈষম্যের কোনো চিহ্নই নেই। পুরুষেরা অনেক সময়ে রাত করে অথবা বেশ সময় ধরে কাজ করেন যা নারীদের পক্ষে সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে পুরুষের কিছুটা বেশি বেতন পাওয়াটাই স্বাভাবিক। এমনকি অনেক সময়ে দেখা যায়, পুরুষদের অনেক কম বেতনে অনেক বেশি খাটিয়ে নেওয়া হচ্ছে জার ফলে তাদের মধ্যে সৃষ্টি হয় চরম হতাশা।

৭) “বিশেষ সুবিধা” ফাঁদ
বিভিন্ন ক্ষেত্রেই দেখা যায়, পুরুষরা নাকি “বিশেষ সুবিধা” পেয়ে থাকেন এবং এ কারণে সমাজের “সংখ্যালঘু” মানুষের ব্যাপারে তারা মোটেই চিন্তা করেন না। এই “বিশেষ সুবিধার” কোন অস্তিত্ব আসলে নেই। পুরুষ হয়ে জন্মানোর ফলে প্রকৃতি তাকে যতটা সুবিধা দেয়, তার বেশি কোনো ক্ষমতা পুরুষের থাকে না এবং তারা তেমন কোনো বিশেষ সুবিধে ভোগ করেন না।

৮) বিচার ব্যবস্থা পুরুষদের কম সুবিধা দেয়
বিশেষ করে বিবাহবিচ্ছেদ এবং তার পরে সন্তানের দায়ভার নেওয়ার ব্যাপারে দেখা যায়, আদালত নারীদেরকেই সুবিধে দিয়ে থাকে। প্রাক্তন স্ত্রী সচ্ছল এবং কর্মরত হলেও দেখা যায়, তার জন্য বড় একটি অঙ্কের টাকা স্বামীকে দিয়ে যেতে হয় সর্বদা। এটা বেশি হয় পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে। অন্যান্য ক্ষেত্রেও মেয়েদেরকে দেখা হয় “নিষ্পাপ” হিসেবে এবং পুরুষটিকে দোষী ধরে নেওয়া যায় সহজেই।

৯) “পৌরুষত্ব” হয়ে উঠেছে একটি গালি
বর্তমান সময়ে পুরুষেরা নিজেদের স্বরূপ হারিয়ে ফেলছে। ধরেই নেওয়া হচ্ছে যার মাঝে পৌরুষত্ব আছে সে ভীষণ হিংস্র, বর্তমান সুন্দর-সুশীল সমাজে তার জায়গা নেই, এমনকি পেশগত ক্ষেত্রেও তাদের এসব বৈশিষ্ট্য দমিয়ে রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়। সমাজে নারী এবং পুরুষের মাঝে যে প্রাকৃতিক পার্থক্য, তাকেও নির্মূল করার এই চেষ্টায় “পৌরুষত্ব” কথাটিই এখন আর ভালো চোখে দেখা হয় না।

১০) পুরুষের বিরুদ্ধে পারিবারিক নির্যাতন
পরিবারের মানুষের থেকে নির্যাতনের শিকার হলে একজন নারী বিভিন্ন সংগঠনের কাছে সাহায্য পেতে পারেন। একটু একটু করে হলেও এই আশাজনক ব্যাপারটি আমাদের দেশেও দেখা যাচ্ছে। কিন্তু একজন পুরুষ যদি পরিবারে নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন তবে তার জন্য কি আছে? বলতে গেলে কিছুই নেই। বাংলাদেশে পুরুষ নির্যাতনের ঘটনা কম হলেও সারা বিশ্বে এর অস্তিত্ব আছে, তা অনস্বীকার্য। কিন্তু এর পরেও তাদের জন্য নেই কোনো সাহায্যের সম্ভাবনা।



মন্তব্য চালু নেই