যে ধরনের মানুষরা ডিভোর্স নেন

মনোবিজ্ঞানী অ্যাবি রোডম্যান বোঝার চেষ্টা করেছেন, কোন ধরনের মানুষরা ডিভোর্স ঘটানোর চেষ্টা করেন। বিবাহিত জীবনে বিচ্ছেদ নিতে ইচ্ছুক মানুষদের ধরন সম্পর্কে তিনি ধারণা দিয়েছে এক ব্লগ পোস্টে।

এখানে তার বক্তব্য তার মতো করেই উপস্থাপন করা হলো।
আমার কি ডিভোর্স নেওয়া উচিত? এ প্রশ্নের উত্তর পেতে যেন হাজার বছর অপেক্ষায় আছি বলেই মনে হয়। আমার অনেক প্রশ্ন আছে কিন্তু উত্তর নেই।

যারা সুখকর পরিবেশে বিয়ে করেন, তারা বিবাহিত জীবনটি টিকিয়ে রাখবেন বলে অবচেতন মনে এক ওজনহীন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। আর যাদের বিয়েটা বাজে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যায়, তারা বিরামহীন দুশ্চিন্তা এবং সন্দেহ নিয়ে দিন পার করেন। আমি জানি, এন পরিস্থিতিতে মানুষ ওপর যেন দুঃখবোধ, উদ্বেগ এবং অস্থিরতার ঢোল বাজতে থাকে। মনে হয়, আমি পাগল হয়ে যাবো।

আমার কি থেকে যাওয়া উচিত? উত্তর- ‘না’।

পরিস্থিতি কি ভালো হবে? উত্তর- অবশ্যই না।

আমার কি কি পথ খোলা আছে? উত্তর- গুটিকয়েক।

আমি কি সুখী? উত্তর- মোটেও না।

সে কি সুখী হতে পারবে? উত্তর- সুখী থাকার কোনো উপায় নেই।

এটা কি স্বাভাবিক বিষয়? উত্তর- আসলেই কি তাই?

আমার কি করা উচিত? উত্তর- ডিভোর্স নিয়ে নাও।

বিবাহিত জীবনটা বাজে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেলে এমন প্রশ্ন এবং জবাব মিলে যায়। কিন্তু এসব উত্তরকে আমি অবহেলা করে যাই। দীর্ঘ দিন ধরে আমার বিশ্বাস, আমি তেমন মানুষটি নই যে কিনা ডিভোর্স নেবে।

কিন্তু বিষয়টি বোকামির চিন্তা ছাড়া আর কিছুই নয়। দুনিয়ায় এমন কোনো বিশেষ ধরনের মানুষ নেই যারা কেবল ডিভোর্স নেন। আমিও তা জানি। সবাই তা জানেন। কিন্তু আমার মনে হয়েছিল, আমিই হয়তো ভিন্ন। আমি খুবই সিরিয়াস টাইপের মানুষ। আমি ছেলেমানুষীপূর্ণ মানুষ ছিলাম না। আমি ছিলাম সংগ্রামী। প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে যেতাম।

আসলে বিবাহিত জীবনের জন্য সংগ্রাম করতে গেলে বিয়ের প্রয়োজন নেই। এ ক্ষেত্রে মানুষ এক আঠালো বিষয়ের জন্য সংগ্রাম করে। দুজের সম্পর্ক, অন্তরঙ্গতা, ভালোবাসা ইত্যাদির নিয়ে যুদ্ধ করে। কিংবা কেউ সেই আঠালো বিষয়ের স্মৃতির জন্য সংগ্রাম করে।

কিন্তু তখনই সহজে তার সন্ধান মেলে না, যখন বিষয়টিকে কখনোই আপনি গুরুত্বের চোখে দেখেননি। কিন্তু বহু আগেই এ বিষয়ে মন উঠে গিয়েছে আপনার। আপনি আসলে কিসের জন্য যুদ্ধ করছেন? গত বছরের সেই উপহারটির জন্য? ছুটির স্মৃতির জন্য? নাকি সন্তানদের জন্য? হ্যাঁ, সন্তানদের বিষয়ে সব সময় রয়ে গেছে। তারাও বাবা-মায়ের বিষাক্ত সময়ের মধ্যে অসুস্থ হচ্ছে।

কোনো অসুখী দম্পতির দিকে মনোযোগ দিন। কত সহজেই তাদের বিষয়গুলো বোঝা যায়। তাদের বুঝতে প্রত্যকের মনের কথা জানার দরকার হয় না। বিবাহিত জীবনে তাদের দুঃস্বপ্নের কথা বলতে হয় না। তাদের মনভাঙা কণ্ঠ সহজেই কানে ধরা পড়ে। তাদের অন্তরঙ্গতার অভাব স্পষ্ট বোঝা যায়। আলাপচারিতায় তাদের দূরত্ব সহজেই আনুধাবন করা যায়। আর চোখে রাঙানোর ভাষা তো চোখের সামনেই দেখা যায়।

এ সমস্যা নিয়ে আসা আমার এক ক্লায়েন্ট বললেন, কেউ বিশ্বাস করবেন না যে আমরা ডিভোর্স নিতে চলেছি। এ খবর কাউকে বলার অস্তত্বির কথা জানাচ্ছিলেন তিনি আমাকে। ক্লায়েন্টের ধারণা, পরিচিতরা সব চমকে যাবে। আমিও চমকে গিয়েছিলাম। আপনিও হয়তো কখনো চমকে গিয়েছিলেন। আসলে অন্যদের আঘাতের কথা চিন্তা করেই তারা ডিভোর্সটাকে যতটা সম্ভব দেরি করানোর চেষ্টা করছেন।

আমি নিজেই ডিভোর্স নিয়েছি। আমি কখনোই ভাবিনি যে আমিও সেই দলে পড়বো যারা ডিভোর্স নেয়। কিন্তু আমি তখন বুঝতে পারতাম, আমি কেমন ছিলাম আর কেমন আছি। আমি বুঝতাম যে ওই অবস্থায় কখনোই সুখী হতে পারবো না। এখন আমি সেই মানুষ যে কিনা ডিভোর্স নিয়েছে। আর ব্যক্তিত্বের এই ধরন নিয়ে আমি তুষ্ট।

আপনিও কি সেই ধরনের মানুষ যিনি ডিভোর্স নিতে চান? এর জবাব পেতে বাথরুমের আয়নার চোখ রাখাই যথেষ্ট। কিংবা অন্য কারো দিকে খেয়াল দিন। সেই মানুষটিকে পেয়ে যাবেন। এরা সেই মানুষ যারা আরো ভালো কিছু আশা করেছিলেন। সূত্র: হাফিংটন পোস্ট



মন্তব্য চালু নেই