যে কারণে হজ পালনকারীর জন্য জান্নাতের নিশ্চয়তা

আল্লাহ তাআলার ডাকে সাড়া দিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে লাখো মুসলিম সমবেত হয় পবিত্র নগরী মক্কায়। যেখানে সবার মুখে থাকে একই আওয়াজ- ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক; লাব্বাইক লা শারিকা লাকা লাব্বাইক; ইন্নাল হামদা ওয়ান্‌নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক্‌; লা শারিকা লাক; অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, হে আল্লাহ আমি হাজির, নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা, নিয়া’মত, কর্তৃত্ব ও রাজত্ব সব তোমারই জন্য, তোমার কোনো শরিক নেই।’

মুসলিম উম্মাহর গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত হলো হজ। যা মহান রবের পক্ষ থেকে শারীরিক ও আর্থিকভাবে চূড়ান্ত ত্যাগের নির্দেশ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘(হে নবি আপনি) মানুষের মাঝে হজের ঘোষণা দিয়ে দিন। লোকেরা পায়ে হেঁটে, বিভিন্ন যানবাহনে পৃথিবীর সব অঞ্চল থেকে দলে দলে আপনার দিকে (হজের জন্য) ছুটে আসবে। (সুরা হজ : আয়াত ২৭) এ হজ পালনে একজন হাজি নিষ্পাপ, নিষ্কলুষ শিশুর ন্যায় পূতপবিত্র হয়ে চিরস্থায়ী জান্নাতের মেহমান হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করবে।

পবিত্র নগরী মক্কায় অনুষ্ঠিত হজের এই বিশ্ব মুসলিম সম্মিলনে মহান রবের ডাকে সাড়া দেয়া ব্যতিত একজন হাজির দুনিয়ার কোনো স্বার্থ বা লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থাকে না। উদ্দেশ্য শুধুমাত্র একটাই আর তা হলো আল্লাহ নির্দেশ পালন, তাঁর একত্ববাদের স্বীকৃতি, মাহাত্ম্য ও একক কর্তৃত্বের ঘোষণা করা।

পবিত্র নগরী মক্কায় উপস্থিতি সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্যে নির্ধারিত হয়েছে, সেটাই হচ্ছে এ ঘর, যা মক্কায় অবস্থিত এবং সারা জাহানের মানুষের জন্য হেদায়েত ও বরকতময়। এতে রয়েছে মকামে ইবরাহিমের মত প্রকৃষ্ট নিদর্শন। আর যে, লোক এর ভেতরে প্রবেশ করেছে, সে নিরাপত্তা লাভ করেছে। আর এ ঘরের হজ্ব করা হলো মানুষের উপর আল্লাহর নির্দেশ; যে লোকের এ পর্যন্ত পৌছার সামর্থ্য রয়েছে। (সুরা আল ইমরান : আয়াত ৯৬-৯৭)

যেহেতু হজ মুসলিম উম্মাহর মহাসম্মিলন। তাই সারা দুনিয়ার মুসলমানরা এখানে সমবেত হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর তাআলার একত্ববাদের ঘোষণা দেয়। বিশ্বব্যাপী আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের বাণী পৌছিয়ে দেয়। হজের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ তাওহিদের যে মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয় তা হলো-

বাইতুল্লাহর লাব্বাইক ঘোষণা পৃথিবীর সব জায়গায় সকল কাজে এ রকম ঘোষণার দৃপ্ত শপথ নেয়ার পাশাপাশি আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোনো কিছুর শরিক না করার সম্মিলিতভাবে শপথ গ্রহণ করা।

শিরকমুক্ত থাকা ও শিরকমুক্ত ইবাদত করার জন্য নিজেদের তৈরির সঙ্গে সঙ্গে সকল প্রশংসা, মালিকানা, কর্তৃত্ব, রাজত্ব শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই; তা মনে প্রাণে বিশ্বাস করা এবং জীবনের বাকি সময়গুলো সাধ্যমত সর্বোচ্চ ত্যাগ করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে জীবন-যাপন করার শপথ নেয়া।

পরিশেষে…
হজ পালনের মাধ্যমে যারা উল্লেখিত বিষয়সমূহ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম, তাদের জন্যই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যিনি হজ করলেন, ঝগড়া-ঝাটি, অন্যায়, ফাসেকি ও নাফরমানির কোনো কাজ করেননি, তিনি মায়ের পেট থেকে সদ্য ভূমিষ্ঠ নিষ্পাপ শিশুর ন্যায় হয়ে যাবেন।

হজ পালনে যারা নিষ্পাপ শিশুর মতো হয়ে যাবেন, তাঁদের ব্যাপারেই বিশ্বনবি জান্নাতের নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর হজ পালনকারী সকল হাজিকে নিষ্পাপ থাকার এবং পরকালীন জীবনে জান্নাত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।



মন্তব্য চালু নেই