যে কারণে সকাল দশটার আগে কাজ শুরু করা উচিত নয়

সকালে ঘুম ঘুম চোখে অফিসে আসা, এসে কাজের ফাঁকে ফাঁকে টেবিলে মাথা রেখে ঘুম বা হালকা ঝিমুনি, এসব প্রায় অফিসে দেখা যাচ্ছে। তবে কর্মীরা এর জন্য নিজেদেরকে দোষারোপ না করে বরং অফিসের সময়কে দোষারোপ করতে পারেন।

নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, অধিকাংশ সময়ই অফিসের সময় কর্মীদের ‘দেহের ঘড়ি’র সঙ্গে মিলে না। বিশেষজ্ঞরা কর্মীদের এখনই সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।

ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের ‘ফস্টার স্কুল অব বিজনেস’র অধ্যাপক ক্রিস্টোফার বার্নস তার গবেষণাপত্রে এসব কথা উল্লেখ করেছেন। ঘুমকে তিনি ‘কৌশলী সম্পদ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

কর্মীদের জন্য ঘুমের প্রয়োজনীয়তার উপর হোয়াইট পেপার নামে একটা প্রকাশনা আছে তার। সেখানে তিনি লিখেছেন, মানুষের স্বাভাবিক ঘুমের সময়ের সাথে মিলিয়ে যদি অফিসের সময় নির্ধারণ করা যায়, তাহলে কর্মীদের কাছ থেকে বেশি ও আরও সৃজনশীল কাজ আদায় করা সম্ভব। এর উল্টোটার ফল অনেক সময় বিপজ্জনক হতে পারে। ঘুমতাড়িত কোনো কর্মী নিজের অজান্তেই মারাত্মক ভুল করে বসতে পারে, যার খেসারত দিতে হতে পারে পুরো প্রতিষ্ঠানকেই। নিজের গবেষণায় এ অধ্যাপক দেখেছেন, নিশাচর প্রাণীরা দিনের বেলায় অস্বাভাবিক আচরণ করে।

ইউনিভার্সিটি অব মিউনিখের ক্রোনোবায়োলজির অধ্যাপক টিল রোনেবার্গ বলেন, ‘ক্ষুদ্র ব্যাকটেরিয়া থেকে শুরু করে পূর্ণাঙ্গ মানুষ পর্যন্ত প্রত্যেকেরই আলাদা আলাদা ‘দৈহিক ঘড়ি’ আছে। এ দেহ ঘড়িটি অধিকাংশ মানুষকে অনেকটা প্রভাবিত করে’।

রোনেবার্গের মতে, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের কর্মঘণ্টা হচ্ছে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা, যা মানুষের ‘দেহ ঘড়ি’র বিপক্ষে।

এ অমিলের সাথে অতিরিক্ত কাজের চাপ মিলে মানুষ অনেক সময়ই অস্বাভাবিক আচরণ করে। তার গবেষণায় তিনি দেখছেন, শতকরা ৭০ ভাগ মানুষ পর্যাপ্ত সময়ের চেয়ে আগে ঘুম থেকে উঠেন এবং তাদের দক্ষতা বেশি সময় ঘুমিয়েছেন বা বিশ্রাম নিয়েছেন, তাদের তুলণায় আশঙ্কাজনকভাবে কম।

প্রাপ্ত বয়স্করাই এ সমস্যায় আক্রান্ত তা নয়। যুক্তরাজ্যের হাইস্কুল পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরা প্রতিদিন প্রয়োজনের চেয়ে অন্তত তিন ঘণ্টা কম ঘুমায়। এতে তারা কোনো কিছুতে গভীর মনোযোগ দিতে পারে না, স্থূলতা বা ডায়েবেটিসের মতো স্থায়ী রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ পল কেলি মনে করেন, অধিকাংশ কর্মজীবীই নির্ধারিত সময়ের আগে ঘুম থেকে উঠেন। তার মতে, প্রত্যেকেরই সকাল দশটা থেকে কাজ করা উচিত, তার আগে নয়।

তিনি বলেন, ‘সকাল আটটায় কাজ শুরু করাটা অবিবেচকের মতো কাজ। সার্কাডিয়ান রিদমস ( প্রাকৃতিকভাবে মানুষের ২৪ ঘন্টার দৈহিক গতিপ্রকৃতি) সম্পূর্ণরূপে জীববিজ্ঞান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। মানুষ কখনও এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না’।

গবেষণার ফলাফল বাস্তবে মিলিয়ে দেখতে রোনেবার্গ জার্মানির ভক্সওয়াগন গাড়ির কারখানা ও একটি স্টিল কারখানার শ্রমিকদের উপর একটি পরীক্ষা চালান। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের যার যার ‘দেহ ঘড়ি’ অনুসারে কাজের সময় পারিবর্তন করলেন তিনি। যারা স্বাভাবিকভাবে দেরিতে ঘুম থেকে উঠেন, তাদেরকে বিকেলের শিফটে এবং যারা স্বাভাবিকভাবে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠেন, তাদেরকে সকালের শিফটে কাজ করান তিনি। ফলাফল অত্যন্ত চমকপ্রদ। প্রতিটি শ্রমিকের উৎপাদনক্ষমতা বেড়ে গেল। এমনকি কাজে ক্লান্তিভাবও দূর হয়ে গেল তাদের।

যুক্তরাষ্ট্রের অরেগন ইনস্টিটিউট অব অকুপেশনাল হেল্থ সায়েন্সের বিজ্ঞানী রায়ান অলসন একবছর ধরে একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের উপর একইভাবে চালানো এক পরীক্ষায় ইতিবাচক ফলাফল পেয়েছেন। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে এরকম কঠোর নিয়মের (৮টা-৫টা অফিস) কোনো দরকার আছে বলে মনে করেন না এ বিজ্ঞানী।
সূত্র: বিবিসি



মন্তব্য চালু নেই