যে কারণে তারতিলের সঙ্গে কুরআন পড়া জরুরি

কুরআন আল্লাহ তাআলার কিতাব। কুরআন হিফাজতের দায়িত্বও নিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। তিনিই মানুষকে তারতিলের সঙ্গে কুরআন তিলাওয়াত করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। তিনি বলেন, ‘এবং কুরআন আবৃত্তি করুন সুবিন্যস্ত ভাবে ও সুস্পষ্টভাবে। (সুরা মুয্‌যাম্মিল : আয়াত ৪)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তারতিলের সঙ্গে (থেমে থেমে) কুরআনের সুরা পাঠ করতেন। সুরাটি মূলত যতটুকু লম্বা (তারতিলের সঙ্গে পড়ার কারণে) তার চেয়ে অধিক লম্বা মনে হত। কেননা কুরআন নাজিলের উদ্দেশ্য হলো তা মনোযোগ সহকারে পড়া ও বুঝা এবং সে অনুযায়ী আমল করা। তাছাড়া কুরআনের অর্থ বুঝার সর্বোত্তম একটি মাধ্যম হলো তা তিলাওয়াত এবং মুখস্থ করা ।

মানুষের দৈনন্দিন জীবনে আমল করার জন্যই কুরআনুল কারিম অবর্তীণ হয়েছে। এ কারণেই পূর্ববর্তী যুগের আলেমগণ কুরআনের তিলাওয়াতকেও আমল মনে করতেন। হজরত শু’বা রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আবু হামজাহ আমাকে বলেছেন, আমি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললাম, ‘আমি দ্রুত (কুরআন) পড়ায় অভ্যস্ত। কখনো কখনো এক রাতেই একবার অথবা দুইবার সম্পূর্ণ কুরআন পড়া শেষ করি।

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু তখন বললেন, ‘তুমি যা করে থাক; তার চেয়ে আমার নিকট একটি সুরা পড়াই অধিক প্রিয়। তুমি যদি দ্রুত পড়তেই চাও; তাহলে এভাবে পড়- যাতে তোমার কান উহা (তিলাওয়াত) শুনে এবং তোমার অন্তর তা অনুধাবন করতে সক্ষম হয়।

একদিন হজরত আলকামা রহমাতুল্লাহি আলাইহি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর সামনে কুরআন তিলাওয়াত করলেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু তিলাওয়াত শুনে বললেন, ‘আমার পিতা-মাতা তোমার জন্য কুরবান হোক! তারতিলের সঙ্গে কুরআন পড়। কেননা এতেই কুরআনের সৌন্দর্য।

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু আরো বলেন, ‘কবিতা আবৃত্তির মত করে কুরআন পড়ো না এবং সাধারণ কথা-বার্তার ন্যায়ও তিলাওয়াত করো না; বরং কুরআন পড়ার সময় বিস্ময়কর বিষয়গুলোর নিকট একটু থামো এবং তার দ্বারা অন্তরে সাড়া জাগাও। সুরা শেষ করাই যেন তোমাদের কারও উদ্দেশ্য না হয়।

তিনি আরো বলেন, ‘যখন তুমি শুনবে যে আল্লাহ তাআলা বলছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তখন তোমার কানকেও আল্লাহর এ বাণীটি শুনাও। কারণ এটি হয়ত তোমাকে কোনো কল্যাণের আদেশ দিচ্ছে না হয় তোমাকে কোনো অকল্যাণ হতে বারণ করছে।

আব্দুর রাহমান বিন আবু লায়লা রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘আমার কাছে এক মহিলা আসল। তখন আমি সুরা হুদ পড়ছিলাম। ভদ্র মহিলা আমাকে বলল, ‘হে আব্দুর রাহমান! তুমি এভাবে সুরা হুদ পড়ছো? আল্লাহর শপথ! আমি ছয় মাস যাবৎ এ সুরাটি পড়ছি। এখনো তা শেষ করতে পারিনি।

পরিশেষে…
উল্লেখিত আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে, তারতিলের সঙ্গে কুরআন তিলাওয়াতের গুরুত্ব অত্যাধিক। তাছাড়া কুরআনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বুঝতে এবং মুমিনদেরকে সম্বোধন করে দেয়া বক্তব্য ও আদেশ-নিষেধগুলো হৃদয় দিয়ে উপলব্দি করতে তারতিলের (ধীরস্থিরভাবে) সঙ্গে কুরআন তিলাওয়াত করা জরুরি।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ন্যায় ধীরস্থিরভাবে থেমে থেমে কুরআন তিলাওয়াত করার তাওফিক দান করুন। কুরআনের মর্মার্থ বুঝে সে অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।



মন্তব্য চালু নেই