যে কারণে কমেছে প্রবাসী আয়
চলতি বছরের আগস্টে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে পাঠিয়েছেন ১১৮ কোটি ৩৬ লাখ মার্কিন ডলার। অথচ ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে তারা রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন ১১৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এক বছরের ব্যবধানে রেমিটেন্স প্রবাহ কমেছে ১ কোটি ১৪ লাখ মার্কিন ডলার। রবিবার প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।খবর বাংলা ট্রিবিউনের।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়া এবং ডলারের বিপরীতে মুদ্রার মান কমার কারণে প্রবাসীরা দেশে আগের চেয়ে কম রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। দেশে রেমিটেন্স কমার পেছনে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনৈতিক দুর্বলতাকে দায়ী করছেন কেউ কেউ।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টার প্রেস নেটওয়ার্কের সিনিয়র গবেষক আনোয়ারুল হক বলেন, ‘প্রবাসী শ্রমিকদের একটা বড় অংশ রয়েছে জ্বালানি তেল নির্ভর দেশগুলোতে। কিন্তু বর্তমানে এই দেশগুলো নিজেরাই পড়েছে সংকটে। যার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ে।’
আনোয়ারুল হকের মতো বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ মনে করেন, ‘ডলারের বিপরীতে টাকার মান শক্তিশালী হওয়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে রেমিটেন্স প্রবাহে।’ তিনি বলেন, ‘প্রবাসী আয় কমার আরেকটি কারণ, বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমে যাওয়া। জ্বালানি তেলের দাম কমার ফলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে থাকা প্রবাসীদের বেতন ও মজুরিও কমেছে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, ওমান, বাহরাইন, ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যের আটটি দেশ থেকে প্রবাসীরা ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৯০৭ কোটি মার্কিন ডলার পাঠিয়েছিলেন বাংলাদেশে। কিন্তু ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এসব দেশ থেকে তারা ৫২ কোটি ডলার কম পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তার আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় আড়াই শতাংশ কম প্রবাসী আয় আসে। গেল অর্থবছরের পুরো সময়ে রেমিট্যান্স আসে ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরে যা ছিল এক হাজার ৫৩১ কোটি ডলার।
এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এখনও এক ধরনেরর মন্দাভাব চলছে। বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে প্রবাসীদের বেতন ও মজুরি কমেছে।’ তিনি বলেন, ‘ওইসব দেশ নিজেরাই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। সেসব দেশের অনেক প্রতিষ্ঠানই এখন তাদের কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছে না। যার প্রভাব পড়েছে আমাদের দেশের রেমিটেন্স প্রবাহে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিভাগের তৈরি করা এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগস্ট মাসে প্রবাসীরা যে পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন তা আগের অর্থবছরের একই মাসের চেয়ে প্রায় ১ শতাংশ কম। এছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসের (জুলাই-আগস্ট) হিসাবে আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১৫ শতাংশ কম। যদিও জুলাইয়ের চেয়ে আগস্টে প্রবাসী আয় বেড়েছে।
চলতি অর্থবছরের আগস্টে প্রবাসীরা ১১৮ কোটি ৩৬ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। রেমিটেন্স প্রবাহের গতি জুলাইতে ছিল আরও করুণ। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে রেমিটেন্স আসে মাত্র ১০০ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। সবমিলে চলতি অর্থবছরের (জুলাই-আগস্ট) প্রথম দুই মাসে রেমিটেন্স এসেছে ২১৮ কোটি ৯১ লাখ ডলার। যা গেল অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৯ কোটি ৫৪ লাখ ডলার কম। গেল অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট এই দুই মাসে প্রবাসী আয় এসেছিল ২৫৪ কোটি ৪৫ লাখ ডলার।
আগস্টে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিটেন্স এসেছে ৭৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৩৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার, বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ১১ লাখ এবং বিদেশি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। একক ব্যাংক হিসেবে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে। এই ব্যাংকটির মাধ্যমে এসেছে ২৭ কোটি ৬৭ লাখ ডলার । রেমিটেন্স আহরণে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক। এই ব্যাংকটির মাধ্যমে রেমিটেন্স এসেছে ১৩ কোটি ৪৪ লাখ মার্কিন ডলার। এছাড়া, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ১০ কোটি ৭৮ লাখ ডলার, জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে ১০ কোটি ২৬ লাখ ডলার, ডাচ্ বাংলা ও ন্যাশনাল ব্যাংকের মাধ্যমে ৫ কোটি ডলারের কিছু বেশি রেমিটেন্স দেশে এসেছে।
গত জুন মাসে প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন ১৪৬ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। মে মাসে প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন ১২০ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। গত এপ্রিল মাসে রেমিটেন্স এসেছিল ১১৯ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। গত মার্চে এসেছিল ১২৮ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। ফেব্রুয়ারি মাসে এসেছিল ১১৩ কোটি ৩১ লাখ ডলার। জানুয়ারিতে এসেছিল ১১৫ কোটি ২০ লাখ ডলার।
মন্তব্য চালু নেই