যেভাবে ‘পরমাণু বোমা’ ও ‘হাইড্রোজেন বোমা’ তৈরি করেন বিজ্ঞানীরা

জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে ১৯৪৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু বোমা হামলা চালালে পরমাণু বোমার ভয়বহতা দেখতে পায় বিশ্ববাসী। জাপানের ওই দুটি অঞ্চলে এখন পর্যন্ত বিকলঙ্গ শিশুর জন্ম হয়। এবার যুক্তরাষ্ট্রের সেই পরমাণু বোমার চেয়েও অধিক শক্তিশালী ‘হাইড্রোজেন’ বোমার সফল পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া।

এই বোমাটি পরীক্ষা চালানোর সময় সৃষ্ট হয় ৫ এর কিছুটা বেশি মাত্রার ভূমিকম্প। তবে পরমাণু বোমা ও হাইড্রোজেন বোমা তৈরির প্রক্রিয়া কিন্তু আলাদা। মূলত পরমাণু বোমা আর হাইড্রোজেন বোমা- এই দু’টি শক্তিশালী বোমা বানানো হয় একেবারেই দুটি আলাদা উপায়ে। একটির নাম- ‘নিউক্লিয়ার ফিশন’। যে উপায়ে বানানো হয় তুলনায় কম শক্তিশালী পরমাণু বোমা।

এই পদ্ধতিতে একটা ক্ষুদ্র পরমাণুকে দুই বা ততোধিক ক্ষুদ্রতর ও হাল্কা পরমাণুতে ভাঙা হয়। তার ফলে বেরিয়ে আসে প্রচুর পরিমাণে শক্তি। আরেকটি পদ্ধতির নাম- ‘নিউক্লিয়ার ফিউশন’।

যে উপায়ে বানানো হয় অনেক বেশি শক্তিশালী হাইড্রোজেন বোমা। এই পদ্ধতিতে দুই বা ততোধিক ক্ষুদ্র পরমাণুকে জুড়ে অনেক বড় ও ভারী পরমাণু বানানো হয়। এতে বেরিয়ে আসে আরও অনেক বেশি শক্তি। তাই হাইড্রোজেন বোমা হয় অনেক বেশি শক্তিশালী। যে হেতু এই পদ্ধতিতে দুই বা ততোধিক হাইড্রোজেন পরমাণুকে জোড়া হয়, তাই এর নাম- ‘হাইড্রোজেন বোমা’।

কোনটা বানানো বেশি কঠিন- পরমাণু বোমা নাকি হাইড্রোজেন বোমা? এর উত্তরটা হল- হাইড্রোজেন বোমা। কেন কঠিন? কারণ, ‘নিউক্লিয়ার ফিউশন’-এর জন্য প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণ তাপমাত্রা। দশ লক্ষ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি। গবেষণাগারে্ও চট করে যে তাপমাত্রায় পৌঁছতে পারা যায় না। কঠিন জিনিসই তো বেশি কাজের হয়! তবে ‘ফিশন’ ছাড়া ‘ফিউশন’ হয় না। এর মানে, ‘নিউক্লিয়ার ফিউশন’ পদ্ধতিতে হাইড্রোজেন বোমা বানানোর জন্য যে বিপুল তাপমাত্রার প্রয়োজন, তা ‘নিউক্লিয়ার ফিশন’-এর মাধ্যমে পরমাণু বোমা বানিয়েই জোগাড় করা হয়।

আবার খুব ছোট্ট হাইড্রোজেন বোমাও বানানো যায় বলে হাইড্রোজেন বোমাকে ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যেও পুরে ফেলা যায়। এর ফলে, কোনও এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েও হাইড্রোজেন বোমা সেখানে ফেলে দেওয়া যায়। এখনও পর্যন্ত কোনও দেশই যুদ্ধে হাইড্রোজেন বোমা ব্যবহার করেনি। হিরোশিমা, নাগাসাকি দেখেছিল অনেক কম ভয়াবহতা, পরমাণু বোমা পড়ার ফলে।



মন্তব্য চালু নেই