যেভাবে আটক হয়েছিলেন পিন্টু

২০০৯ সালে আলোচিত পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দীন আহম্মেদ পিন্টুর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠে।

এ বিষয়ে সরকারি তদন্ত কমিটির রিপোর্টে পিন্টুর ‍বিরুদ্ধে বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করার অভিযোগ আনা হয়। সরকারের তদন্ত কমিটির রিপোর্টে বলা হয়, বিএনপির প্রাক্তন ওয়ার্ড কমিশনার সুরাইয়া বেগম, তার দুই ছেলে, স্থানীয় সন্ত্রাসী মাসুদ, লেদার লিটন বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যদের কাপড়, পানি ও খাবার সরবরাহ করেছিল।

বিদ্রোহ চলাকালে বিডিআরের পক্ষে মিছিল বের করে পিন্টুর সমর্থকরা। বেশকিছু বিদ্রোহী বিডিআর সদস্য বুড়িগঙ্গা নদী ইঞ্জিনচালিত নৌকা দিয়ে পার হয়েছেন। এসব ইঞ্জিনচালিত নৌকার মালিক ছিলেন নাসির উদ্দীন আহম্মেদ পিন্টু। তিনি বিডিআর সদস্যদের নদী পার করে দেয়ার জন্য তার ইঞ্জিনচালিত নৌকা ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলেন।

সরকারের এ তদন্ত রিপোর্টে বিদ্রোহের সঙ্গে পিন্টুর জড়িত থাকার তথ্য বেরিয়ে আসার পর তিনি কয়েকদিন ধরে হাইকোর্টে যাতায়াত করছিলেন। পিলখানার ঘটনায় যেন তাকে হয়রানি না করা হয়, এ ব্যাপারে আইনি সহায়তার জন্য তিনি তিনদিন ধরে হাইকোর্টে একজন আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করেন। সরকারের তদন্ত কমিটির রিপোর্টে বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যদের পালিয়ে যেতে সহায়তাকারী হিসেবে পিন্টুর নাম উল্লেখ করায় তিনি এ মামলায় তাকে হয়রানি না করার জন্য হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন।

২০০৯ সালের ২ জুন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে রিটটির শুনানি হয়। ওইদিন নাসির উদ্দীন পিন্টু হাইকোর্টে আসেন। পিন্টু হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে অবস্থানকালে তার সহযোগীদের মাধ্যমে জানতে পারেন যে, তাকে গ্রেফতার করতে হাইকোর্ট প্রাঙ্গণের বাইরে পুলিশ অবস্থান করছে। এ খবর পেয়ে তিনি তার ব্যবহৃত মাইক্রোবাস বাদ দিয়ে একজন সহযোগীর মোটরসাইকেলে চড়েন। মোটরসাইকেলটি হাইকোর্টের মাজার গেট দিয়ে বের হয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সাদা পোশাকে অবস্থানরত ডিবি পুলিশ পিন্টুকে চিনে ফেলে। পিন্টুকে গ্রেফতার করে ডিবির একটি মাইক্রোবাসে ওঠানো হয়। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে। পরে সন্ধ্যায় তাকে সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়।

পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় ১ মার্চ লালবাগ থানায় একটি মামলা হয়। পিলখানার অবস্থান নিউ মার্কেট থানা এলাকায় হওয়ায় এ মামলাটি লালবাগ থানা থেকে স্থানান্তর করা হয়। এই মামলাতেই পিন্টুকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর পিলখানা হত্যা মামলায় নাসির উদ্দীন পিন্টুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ঢাকা মহানগর তৃতীয় দায়রা জজ ড. আক্তারুজ্জামানের আদালত। সবশেষ পিন্টু রাজশাহী কারাগারে অবস্থান করছিলেন।

২০১৫ সালের ৩ মে বুকের ব্যথা অনুভব করলে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

২০০১ সালে লালবাগ-হাজারীবাগ এলাকা থেকে নাসির উদ্দীন আহম্মেদ পিন্টু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ২০০৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি যৌথবাহিনী পিন্টুকে গ্রেফতার করে। তার বিরম্নদ্ধে হত্যা, ত্রাণের টিন আত্মসাৎ, চাঁদাবাজি, প্রায় ২০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগসহ ১৫টি মামলা হয়। উচ্চ আদালতের নির্দেশে একটি মামলা স্থগিত থাকলেও বাকিগুলো আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই