যেখানে দিনে মরে দশ হাজার গবাদি
গরুর মাংস এবং গরুকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে নানরকম সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর কিছু রাজ্যে গরুর মাংস খাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর থেকে হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে এই গরু নিয়ে নানান সহিংসতা দেখা দিচ্ছে। কিন্তু যে দেশে গরু নিয়ে এতো তোলপাড় সেই দেশেই প্রতিদিন মারা যাচ্ছে দশ হাজার গবাদি পশু। এই বিপুল সংখ্যক গবাদি পশু মারা যাওয়ার ঘটনা দেশটিতে এর আগে কখনো ঘটেনি। তবে এই গবাদি পশু মৃত্যুর ঘটনা গোটা ভারতে নয়, শুধু বুন্দেলখন্দেই প্রতিদিন মারা যায় এই সংখ্যক গবাদি পশু।
বেসরকারি সংস্থার একজন কর্মী যোগেন্দ্র যদব বলেন, পুরো মে মাস জুড়েই ভারতের বেশ কিছু রাজ্যে পানির অভাবে তীব্র খরা দেখা দেয়। আর এই খরায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় গবাদি পশুরা। পুরো মে মাস জুড়ে প্রায় তিনলাখের মতো গবাদি পশু মারা গিয়েছে। এদিকে গরুর প্রতি রয়েছে বর্তমান বিজেপি সরকারের পক্ষপাতিত্ব। গরুর প্রতি তাদের এই ভালোবাসা শুধুমাত্র টেলিভিশন চ্যানেল ও সংবাদমাধ্যমের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও সেই ভালোবাসা প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌছায় না। বুন্দেলখন্দে মে মাসের খড়ায় যে হারে গরু মারা গেল তার খবর কি রাখে বিজেপি নেতারা?
কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ঘর ওয়াপসি থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিতর্কিত কার্যক্রম পরিচালনা করলেও দেশটির কৃষি বাঁচাতে কোনো পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত নেয়নি। উল্টো বিজেপি সরকারের আমলে কৃষক আত্মহত্যার হার যেমন বহুগুন বেড়েছে তেমনি গবাদি পশুর প্রতি অবহেলার হারও বেড়েছে অনেক বেশি। মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ এবং দাক্ষিণাত্য থেকে শুরু করে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে গত দুবছর ধরে অব্যাহত খরায় কৃষির উৎপাদন অনেক কমে গেছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, গত মাসে কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে উপদ্রুত অঞ্চলগুলোতে ট্রেন বোঝাই করে খাদ্যশস্য এবং পানি পাঠানো হয়েছিল।
উত্তর প্রদেশের বিজেপি পার্টি মুখপাত্র চন্দ্রমোহন বলেন, এই পরিস্থিতির জন্য রাজ্য সরকার দায়ী। বুন্দেলখন্দের বরবাদির জন্য রাজ্য সরকারই দায়ী। আমরা তাকে পানির ট্রেন আনার জন্য প্রস্তাব দিয়েছি কিন্তু তিনি আমাদের এই প্রস্তাবে রাজি হয়নি। ফলে পানি ও খাবারে অভাব শুধু গবাদি পশু নয় অনেক মানুষও মারা যাচ্ছে। তবে প্রশাসন বলছে ভিন্ন কথা। তারা বলছেন খরায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘাস উৎপাদন না হওয়ায় গরু খাবারের অভাবে মারা যাচ্ছে। এদিকে উপরের দিকের প্রশাসনরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে খরা সমস্যা থেকে খুব জলদি বুন্দেলখন্দকে বের করে নিয়ে আসতে পারবেন তারা।
উল্লেখ্য যে বুন্দেলখন্দ রাজ্যে রয়েছে ১১ হাজার গ্রাম। গ্রামগুলোর প্রতিটিতেই দিনে ১০ থেকে ১০০ টি করে গরু মারা যাচ্ছে। আর সবমিলিয়ে পুরো মে মাস জুড়ে এর সংখ্যা দাড়ায় তিন লাখ। তবে প্রশাসন ইতোমধ্যে গ্রামটিতে গবাদি পশুর জন্য খাদ্য পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে। আর যেসব পরিবারের গবাদি পশু নেই তাদের খাবারের বিনিময়ে টাকা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এই টাকার বিনিময়ে কি কৃষক ও গবাদি পশুদের জীবন বাঁচবে এমন প্রশ্ন সাধারণ জনগণের। উত্তরপ্রদেশের গ্রামগুলি এখনও ব্রাহ্মণ্যরীতিতে শাসিত হয় বলে, সাধারণ নিম্নশ্রেণির কৃষকদের পক্ষে ধনীদের পানির আধার ব্যবহার করা খুব একটা সহজ নয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসেও এক নিম্নবর্গের হিন্দু কৃষককে উচ্চবর্গের এক পরিবারের পানির আধার ব্যবহারের জন্য পিটিয়ে হত্যা করা হয়। যে রাষ্ট্রে আজও মানুষকে পশুর তুলনায় কম প্রয়োজনীয় বা মানুষকে প্রয়োজনের নীরিখে মাপা হয় সেখানে প্রতিদিন দশ হাজার গবাদি পশুর মৃত্যুতে শাসক গোষ্ঠির কি আদৌ কিছু আসবে যাবে?
মন্তব্য চালু নেই