যুবদলের নেতৃত্বে আসতে পারেন যারা

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতি তিন বছর পর পর কমিটি হওয়ার কথা থাকলেও বিএনপির অন্যতম শক্তিশালী অঙ্গ সংগঠন যুবদলের বর্তমান কমিটি পেরিয়েছে ছয় বছরেরও বেশি সময়। মেয়াদ শেষের পরও তিনবছর কমিটি বহাল থাকলেও দৃশ্যত সময়টা তাদের জন্য খুব একটা সুবিধার ছিল না। কয়েক বার আন্দোলনে নেমে ব্যর্থ হতে হয়েছে মূল সংগঠন বিএনপিকে।

গত ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বিএনপির চেয়ারপারসন পদে খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে তারেক রহমান পুনর্নির্বাচিত হন। যুবদলের নতুন কমিটি গঠন প্রক্রিয়াও প্রায় চূড়ান্ত। তবে পরিস্থিতি বুঝে সুপার ফাইভ কমিটি বা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। দলীয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এর আগে ২০১০ সালের মার্চে গঠিত কমিটিতে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে সভাপতি ও সাইফুল আলম নীরবকে সাধারণ সম্পাদক করে ২১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি গঠন করা হয়েছিল নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৪ বছর পর। পরবর্তীতে নানাভাবে আরো ৬৫ জনকে বিভিন্ন পদে পদায়ন করা হয়।

এদিকে দলটির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের কারণে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া বিলম্ব হচ্ছে এমন অভিযোগ করা হলেও অভ্যন্তরীণ নানা জটিলতার কারণে এখনো কমিটি ঘোষণা করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে খুব শিগগিরই যুবদলে কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে গুলশান কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র মতে, নবগঠিত কমিটিতে বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরবকে সভাপতি করার প্রক্রিয়া অনেকটাই চূড়ান্ত। তবে এ পদে আরো কয়েকজন প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন।

এদিকে বিএনপির সহ ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর নাম সেক্রেটারি হিসেবে শোনা গেলেও তাকে যুবদলে পদ দেয়া হলে এ সংগঠনে কমিটি বাণিজ্য শুরু হবে বলে শঙ্কা অনেকের।

এছাড়া নতুন কমিটিতে সংগঠনটির নেতাকর্মী ও পদ প্রত্যাশীদের মাঝে অনেকের নাম নিয়ে বেশ আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। যাদের নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বেশ আলোচনা হচ্ছে তারা হলেন- বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, যুবদল বর্তমান কমিটির ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মামুন হাসান, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব, সাবেক ছাত্রনেতা নুরুল ইসলাম নয়ন, বর্তমান কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, সহ-সভাপতি সেলিমুজ্জামান সেলিম, ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি সানাউল হক নীরু, বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী খোকন, মোরতাজুল করিম বদরু, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাহাঙ্গীর, বর্তমান কমিটির সহ-দফতর সম্পাদক কামরুজ্জামান দুলাল, সাবেক ছাত্রদল নেতা হাসান মামুন, বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি আবদুল খালেক, মনিরুজ্জামান মনির, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাহিত্য সম্পাদক রফিকুল আলম মজনু, দফতর সম্পাদক কাজী রফিক, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবু, সহ-সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান সুরুজ, গণ শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা জাকির সিদ্দিকী।

এদিকে বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে যুবদল জোরালো ভূমিকা না রাখায় সংগঠনটির নেতৃত্ব নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠছে। তবে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের দাবি সত্যিকারার্থে যারা রাজপথে পরীক্ষিত, যোগ্য, ত্যাগী ও মেধাবী তাদের হাতেই যেন সংগঠনটির গুরুভার দেয়া হয়। অন্যথায় কমিটি গঠন করলেও বিএনপির আশা পূরণ হবে না।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সভাপতি হিসেবে যার নাম মোটামুটি চূড়ান্ত করা হয়েছে তিনি গত কোনো আন্দোলন সংগ্রামে জোরালো ভূমিকা রাখতে পারেননি। এরজন্য অবশ্য তার অনুসারীরা দায়ী করেন বর্তমান কমিটির সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে। তাদের অভিযোগ, আলালের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।

এদিকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে নিয়েও অনেকে বাঁকা কথা বলছেন। নেতাকর্মীদের অভিযোগ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও বিএনপির সহ ছাত্র বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালনে টুকু অর্থের বিনিময়ে অনেক নেতাকে ছাত্রদলে পদায়ন করেছেন। ছাত্রদলের চেইন অব কমান্ড ভেঙেছেন তিনি।

যুবদলের নতুন নেতৃত্বে যারা আসবেন তাদের যথার্থ মূল্যায়ন করা হলে সংগঠনটি চমক দেখাতে পারে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের। অবশ্য যোগ্যদের দিয়ে কমিটি গঠন না হলে বিদ্রোহ করার আগাম হুমকিও দিয়েছেন পদপ্রত্যাশী অনেক নেতা।



মন্তব্য চালু নেই