যুদ্ধাপরাধে সাজাপ্রাপ্ত গোলাম আযমকে ভাষা সৈনিক স্বীকৃতির দাবি!
যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর আমির গোলাম আযমকে ভাষা সৈনিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি করেছে জামায়াতে ইসলামী। এক আলোচনা সভায় দলটির নেতারা এ দাবি জানান। মঙ্গলবার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত ‘২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও মহান ভাষা দিবস’ এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। অজ্ঞাত স্থানে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।খবর বাংলাট্রিবিউনের।
সভায় জামায়াতের নেতারা দাবি, তাদের সাবেক আমির গোলাম আযমকে ভাষাসৈনিক হিসেবে স্বীকৃতিদানের। অধ্যাপক গোলাম আযম ছিলেন ভাষা আন্দোলেনর অন্যতম পুরোধা। তিনি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ডাকসুর জিএস হিসাবে লিয়াকত আলীর খানের কাছে স্মারকলিপি পেশ করেছিলেন। মূলত ইসলমপন্থীরাই ছিলেন ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্বে।
প্রসঙ্গত, গোলাম আযম মুক্তিযুদ্ধের সময় মাবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত ছিলেন।
মঙ্গলবার সভায় জামায়াতের মহানগরের নেতারা এসব দাবি করেন। একুশের দিন সকালেই রাজধানীর পৃথক দুটি অজ্ঞাতস্থানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর জামায়াতের আয়োজনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মহানগর দক্ষিণের আলোচনায় সভায় সেলিম উদ্দীন বলেন, ‘মহান একুশের চেতনায় স্বাধীনতা আন্দোলনের উন্মেষ ঘটে। ১৯৭১ সালে মুক্তিসংগ্রামের মাধ্যমে তা পূর্ণতা লাভ করে। ভাষা আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম নেতৃত্বাধীন তমুদ্দন মজলিশের মাধ্যমে। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহও মহান ভাষা আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিলেন। ডাকসুর সাবেক জিএস অধ্যাপক গোলাম আযম ছিলেন ভাষা আন্দোলেনর অন্যতম পুরোধা।’
সেলিম উদ্দিনের অভিযোগ, মহলবিশেষ ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস বিকৃত করে প্রকৃত ভাষা সৈনিকদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার পরিবর্তে তাদের কাউকে কাউকে অবমূল্যায়ন করছে। মূলত যে জাতি গুণিজনের কদর করে না, সে জাতির মধ্যে গুণিজন জন্মায়ও না এবং সে জাতি আত্মনির্ভরশীল ও আত্মমর্যাদাবান জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। তাই দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে মহান ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে বিকৃতি রোধ এবং প্রকৃত ভাষা সৈনিকদের যথাযথ সন্মান প্রদর্শনের কোনও বিকল্প নেই।
একই মন্তব্য করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া। তিনিও দাবি করেন, ভাষা আন্দোলনে অধ্যাপক গোলাম আযম ছিলেন পুরোধা ব্যক্তিত্ব। তিনি অধ্যাপক গোলাম আযমকে ভাষা সৈনিক হিসেবে স্বীকৃতিদান ও মরনোত্তর একুশে পদক প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেছেন, ‘১৯৫২’র ভাষা শহীদরা মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় আত্মোৎস্বর্গের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন তা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। মূলত তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী আমাদেরকে ভাষার ভিত্তিতে বিভক্ত করতে চেয়েছিল। যা মোটেই বাস্তবসম্মত ও যৌক্তিক ছিল না। এসময় সেলিম উদ্দিন ভাষা শহীদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং শহীদদের পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারি আসলেই বাংলা ভাষার মর্যাদা সম্পর্কে অনেক কথায় বলা হয়। কিন্তু ভাষার উৎকর্ষ ও বিকাশ সাধনে কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রীয় মর্যাদা লাভ করলেও রাষ্ট্রের সব পর্যায়ে এখনও বাংলা ভাষার প্রচলন করা সম্ভব হয়নি। আমরা বিদেশি ভাষা ও সংস্কৃতিতে ক্রমেই অভ্যস্ত হয়ে উঠছি। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের কাছে তা রীতিমত ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। যা আমাদের ভাষা, সমাজ ও সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পূর্ণ সঙ্গতিহীন। তিনি সবাইকে এই হীনমন্যতা পরিহার করার আহ্বান জানান।
মন্তব্য চালু নেই