‘হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে আপস করিনি’
ধর্মভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে আপস করার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, দেশে ৭০ হাজার কওমি মাদ্রাসায় যে ১৪ লাখ ছাত্রছাত্র পড়াশোনা করে, তাদেরকে উপেক্ষার সুযোগ নেই। তাদেরকে স্বীকৃতি না দেয়াটাই বাস্তবতাবিরোধী।
বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।
গত মঙ্গলবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন হেফাজতে ইসলামের আমির আহমেদ শাহ শফীর নেতৃত্বে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রীক আলেম ওলামারা। এই অনুষ্ঠানেই তিনি কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ডিগ্রি দাওরাসে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান দেয়ার ঘোষণা করেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তাদেরকে (কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী) আমরা ইগনোর করতে পারি না, সরকারি স্বীকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে পারি না। সেটা অবশ্যই বাস্তবতাবিবর্জিত হবে।’ তিনি বলেন, ‘এসব মাদ্রাসায় একটা বৃহৎ জনগোষ্ঠী পড়াশোনা করে। তাদের ভবিষ্যৎকে সরকার অন্ধকারে ঠেলে দিতে পারে না। তাদের শিক্ষার স্বীকৃতি দেওয়া উচিত।’
২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের শাপলা চত্বরে অবস্থানকে কেন্দ্র করে ব্যাপক হট্টগোল হয়। দিনভর হেফাজত কর্মীরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তা-ব চালায়, তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা করে, সড়কদ্বীপের গাছ কেটে ও বিদ্যুতের তারেও আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হয় পাঁচ জন। তাদের মরদেহ নিয়ে হেফাজত কর্মীরা শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়ে সরকার পতনের ডাক দেয়। পরে গভীর রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে মুক্ত হয় শাপলা চত্বর।
এই অভিযানে বিপুল পরিমাণ প্রাণহানির অভিযোগ নিয়ে পরের কয়েক বছর বেশ আলোচনা-সমালোচনার জন্ম হয়। হেফাজত প্রথমে অভিযোগ করে তাদের আড়াই হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। একটি মানবাধিকার সংগঠন পরে জানায়, এই সংখ্যা ৬২। কিন্তু এই তালিকা পর্যালোচনা করে পরে জানা যায়, এদের মধ্যে অনেকে জীবিত। আর দিনের বেলায় সংঘর্ষ এবং শাপলা চত্বর থেকে উচ্ছেদের পর নারায়ণগঞ্জ এবং চট্টগ্রামে হাটহাজারীতে নিহতদের নাম তুলে তা তৈরি করা হয়।
এই ঘটনার পর দুই বছর ধরে সরকারের সঙ্গে হেফাজতের সম্পর্ক ছিল ‘অবিশ্বাসের’। তবে কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতির বিষয়টিকে ঘিরে ভুল বোঝাবুঝির অবসানের আশা করছে সরকার।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘হেফাজত মূল বিষয় নয়, আমাদের মূল বিষয় কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি। এখানে হেফাজতের সঙ্গে আমাদের কোনো এলায়েন্স হয়নি। তাদের (হেফাজত) চিন্তা-ধারার সঙ্গে আমাদের চিন্তা-ধারার একটা মিলমিশ হয়ে গেছে -এ ধরণের ধারণা কোথা থেকে এলো?’।
বাংলা নববর্ষ উদযাপনে মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন গোষ্ঠীর আপত্তি নিয়েও কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘মঙ্গল শোভাযাত্রার সঙ্গে ধর্মের কন্ট্রাডিকশন আছে-এটা যারা বলে তারা সত্য কথা বলে না। ধর্মের জায়গাকে আমরা আধুনিক করতে চাই, মূল জায়গায় ফিরিয়ে আনতে চাই। ইসলাম আধুনিকতাকে একসেপ্ট করে। আমরা ধর্মের আধুনিকায়ন চাই। ধর্মীয় শিক্ষাকেও আধুনিকায়নের দিকে যেতে হবে, এটা বাস্তবতা।’
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সমালোচনা করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেত্রীর সংবাদ সম্মেলনের পাঁচ পৃষ্ঠার বক্তব্য গতানুগতিক, মিথ্যাচার, অন্তঃসারশূন্য আর অজ্ঞাত তথ্যে ভরপুর। তার বক্তব্যে কোন সারমর্ম ছিলো না। তিনি কিছু চটকদার বায়বীয়, বানোয়াট তথ্য উপস্থাপন করেছেন, যা তার কাছে প্রত্যাশিত ছিলো না।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, ভারতের সাথে যে ধরনের এমওইউ ও চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, ঠিক একই ধরনের চুক্তি ও এমওইউ পৃথিবীর অন্যান্য বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্রের সাথেও আছে।’ তিনি বলেন, ‘অন্য কোন বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্রের সাথে চুক্তি সম্পাদনের আগে ও পরে এতো আলোচনা, বক্তব্য, বিবৃতি কোন রাজনৈতিক মহল থেকে কোন দিন উচ্চারিত হয়নি।’
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘যে সকল রাষ্ট্র আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি বিরোধিতা করেছে তাদের সাথে ইতোপূর্বে অনুরূপ চুক্তি সম্পাদনের সময় এ ধরনের প্রশ্ন উঠেনি কেন? ২০০২ সালের ডিসেম্বরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ‘বাংলাদেশ চায়না ডিফেন্স এগ্রিমেন্ট’ শীর্ষক একটি চুক্তি করেছিলেন। সে চুক্তি নিয়ে কোন ধরনের কোন আলোচনা কি হয়েছিল?।’
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, সম্পাদকম-লীর সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, একে এম এনামুল হক শামীম, আবদুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য চালু নেই