যদি মৃত্যুর পরেও মেসেজ করা যায়, তাহলে কি করবেন?
মৃত্যু এমন এক সত্য যা মানুষ সহজে মেনে নিতে চায় না। তবু মৃত্যুকে অস্বীকার করার উপায় নেই। আপনজন হারাতে কেউই চায় না। তাই আপনজনের মৃত্যুর পরেও মানুষ বেঁচে থাকে তার স্মৃতি আঁকড়ে ধরে।
আমরা সবসময় মৃত মানুষের ব্যবহার্য অনেক যত্নে সংরক্ষণ করি। কারণ এর ভেতরই তাদের খুঁজে ফিরি। দিন যত যাচ্ছে, মানুষের আবেগ ততই কমছে ধরে নেয়া হচ্ছিল। কিন্তু এই ডিজিটাল যুগেও কিন্তু আবেগী লোকের অভাব নেই। যারা প্রযুক্তির সঙ্গে ধরে রেখেছে নিজের অকৃত্রিম আবেগ। তাইতো মৃত্যুকে হারাতে না পারলেও স্মৃতিকে ধরে রাখতে পারার নতুন নতুন প্রয়াস দেখা যাচ্ছে।
ইউজেনিয়া কুইডা, তার বন্ধু রোমানের মৃত্যুকে কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না। রোমানের স্মৃতি তাকে তাড়া করছিল। জীবনের প্রতিটা ছন্দে বন্ধুত্বের সুর তা মনের গহীনে স্বজন হারানোর করুন সুরে বাজছিল। মন চাইছিল, বন্ধুর সঙ্গে কথা বলতে, মন বলছিল, এই বুঝি বন্ধু মেসেঞ্জারে টেক্সটের জবাব দেবে। কিংবা তার জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে উইশ করবে!
কিন্তু রোমান যে এসব কিছুর বাইরে, চলে গেছেন অন্য জগতে। যেখান থেকে কেউ ফিরে আসেনা। কিন্তু বন্ধুর মন বলে কথা। হয়তো বন্ধুকে সশরীরে ফিরিয়ে আনা যাবেনা, কিন্তু ডিজিটালি? হয়তো সম্ভব। কেমন হয় যদি তাকে মেসেজ দেয়া হলে তার উত্তর আসে? কেমন হয়, সে বিভিন্ন বিষয়ে মন্তব্য করলে?
এমন চিন্তা থেকেই প্রয়াত রোমানের প্রিয় বন্ধু ইউজেনিয়া কুইডা কাজ শুরু করলেন অন্তত ডিজিটালি রোমানকে ফিরিয়ে আনতে। তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স নিয়ে কাজ শুরু করলেন তার দলকে নিয়ে। রোমানের সকল মেসেজ, পোস্ট, অন্যান্য আচরণ, ভালোলাগা বা খারাপ লাগা, পছন্দের গান কিংবা বই এই সকল তথ্য সংগ্রহ করলেন। তারপর তৈরি করলেন রোমানের একটি ‘বোট’।
আজকাল বোট বা ওয়েব রোবট অনেক জনপ্রিয়, আপনি নিশ্চয়ই আপনার মেসেঞ্জারেও দেখেছেন। যদি না দেখে থাকেন, আজই খেয়াল করুন মেসেঞ্জারের সার্চ অপশনে। যেখানে আপনি আপনার বন্ধুদের সার্চ করবেন ঠিক তার নিচেই আরেকটি লাইন দেখাবে বিভিন্ন নামের। সেখানে নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে অনেক ফ্যাশন ডিজাইনার এমনকি ক্রিকেট স্কোর জানানোর অনেক বোট পাবেন আপনি। যারা আপনি মেসেজ দিলেই সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দেবে। এরা আসলে মানুষ কেউ নন, এরা কৃত্রিমভাবে সফটওয়্যারের মাধ্যমে চ্যাটবট হিসেবে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ রাখে।
আগে থেকে যে ধরনের তথ্য এতে ইনস্টল করা হয়, এটি আপনাকে সেভাবেই জবাব দেবে। ঠিক এই পন্থাই অবলম্বন করা হয়েছে প্রয়াত রোমানকে ডিজিটালি ফিরিয়ে আনতে।
আপনিও কি চান, আপনার মৃত্যুর পর আপনার এমন একটি ভার্চুয়াল উপস্থিতি থাকুক। বন্ধুরা যখন আপনাকে মিস করবে, আপনাকে মেসেজ দেবে, আপনি আপনার স্বভাব সুলভ জবাব দেবেন? তবে আর খুব বেশি অপেক্ষা করতে হবে না। হয়তো অচিরেই ইউজেনিয়া কুইডা’র টিম আপনাকেও আপনার প্রিয়জনের সান্নিধ্যে রাখার ব্যবস্থা করবে।
তবে এটা নিয়ে বিতর্ক আছে, অনেকে এটাকে অন্য আবেগে ব্যাখ্যা করছেন। কেউ কেউ হয়তো হঠাৎ প্রয়াত কারো মেসেজ পেলে ভয় বা ভড়কে যেতেও পারেন। তাই এটা নির্ভর করছে সম্পূর্ণ আপনার ওপর এবং আপনার প্রিয়জনের ওপর, তারা আপনার মৃত্যুর পর কিভাবে আপনাকে দেখতে চায়, মনের আয়নায় নাকি চ্যাটবোট হিসেবে?
মন্তব্য চালু নেই