মৌসুম এখন ইবাদত-বন্দেগীর

পবিত্র রমজানুল মোবারকের চতুর্থ দিবস আজ। দুুুনিয়ার ব্যস্ততায় মানুষ ভুলে যায় তার সৃষ্টিকর্তার হুকুম। এ ক্ষেত্রে মুসলমানদের কাছে রমজান এমন এক মাস- যখন তারা সবচেয়ে বেশি পরিমাণে মনোযোগী হয় প্রভূর রেজামন্দি হাসিলে এবং তার আনুগত্য প্রদর্শনে। আসলে রমজান শুধু কোন ব্যক্তি মুসলমানের জন্য নয়, গোটা উম্মাহর জন্যই ইবাদত-বন্দেগীর এক বিশ্ব মৌসুম । এ দিনগুলোতে সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমান মহামহিম খোদাতায়ালার রহমত বরকত ও মাগফিরাতের শামিয়ানায় ঠাঁই নিয়ে থাকে এক বুক আশা নিয়ে।

কুরআন হাদীস ও পূর্ববর্তী মুসলিম মহামনীষীদের জীবনালেখ্য থেকে রমজানুল মোবারকের ব্যাপক তাৎপর্য ও মর্যাদার শিক্ষা পাওয়া যায়। এ মাসের ইবাদত-বন্দেগী ও ধর্মকর্মের পুণ্য পুরস্কারের কথা বিঘোষিত হয়েছে পবিত্র গ্রন্থসমূহে। এ মাসকে বলা হয়েছে, শাহরুম মুবারক বা মহান আল্লাহ পাকের অবারিত করুণার মাস। কোন কোন মনীষী বলেছেন, রজব হলো পুণ্যের বীজ বপন করার, শাবান হচ্ছে খেতে পানি সিঞ্চনের আর রমজান হলো ইবাদতের ফসল ঘরে তোলার মাস।

হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাআলার কসম! মুসলমানদের জন্য রমযানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমযান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসেনি। কেননা মুমিনগণ এ মাসে (গোটা বছরের জন্য) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষত্রুটি অন্বেষণ করে। এ মাস মুমিনের জন্য গনীমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ। -মুসনাদে আহমদ, মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, সহীহ ইবনে খুযাইমা, তাবারানী, বাইহাকী শুয়াবুল ঈমান।

পূর্বেই আলোচনা হয়েছে, এ মাসের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, যার জন্য মহান আল্লাহ এ মাসকে নির্ধারণ করেছেন। এ মাস কল্যাণ ও বরকতের মৌসুম। নেক আমল সম্পাদনের মৌসুম। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান পাবার জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করতেন। রজব মাস আসলে তিনি এ বলে দোয়া করতেন ‘হে আল্লাহ রজব ও শাবানকে আমাদের জন্য বরকতময় কর এবং আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দাও।’- বাইহাকি/শুআবুল ঈমান, বাযযার/মুসনাদ।

নবীজী সাহাবাদেরকে এ মাসের আগমনে সুসংবাদ প্রদান করতেন এবং তাদেরকে এর বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা করে শুনাতেন। বলতেন, ‘হে লোক সকল! এক মহান বরকতময় মাস তোমাদের উপর ছায়া ফেলেছে।’ আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের নিকট রমজান এসেছে, বরকতময় এক মাস। আল্লাহ তাআলা তোমাদের ওপর এর রোজা ফরজ করছেন। এ মাসে আকাশের সবগুলো দরজা খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের সবক’টি দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং দুষ্ট-অবাধ্য শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। এতে রয়েছে এমন এক রজনী, যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। যে এ রাতের কল্যাণ হতে বঞ্চিত হয় সে (সর্বৈবভাবে) বঞ্চিত হয়।- আহমাদ, আল-মুন্তাখাব এবং নাসায়ী।

মহানবী (স.) এ মাসে ফরজ কিংবা নফল- সালাত, দান-সদকা, সৎ কাজ, দয়া-অনুগ্রহ, আল্লাহর ইবাদতে ধৈর্য্য ধারণ ইত্যাদি নেক আমল সম্পাদনে শ্রম ব্যয়ে উৎসাহ প্রদান করতেন। আরো উৎসাহ দিতেন মাসের দিবসগুলো রোজার মাধ্যমে আর রজনীগুলো সালাতের মাধ্যমে আবাদ করতে। প্রতিটি মুহূর্ত কোরআন তেলাওয়াত, আল্লাহ জিকিরে অতিবাহিত করতে। এ মাসের ইবাদতের দিকে বেশি গুরুত্ব দিতেন খোদ নবী করীম (স.)। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, প্রতি রমজানেই রাসূলে কারীম (স.) শেষ দশদিন ই’তিকাফ করতেন। কিন্তু ওফাত পূর্ব রমজানে তিনি ই’তিকাফ করেছেন বিশ দিন। (বুখারী শরীফ)।

এ মহিমান্বিত মাসকে উদাসীনতা ও উপেক্ষার মাধ্যমে নষ্ট করা মানে নিজেই বঞ্চিত হওয়া। কল্যাণকর মৌসুম অতিবাহিত হয়ে যায়, ইবাদত বন্দেগীর উর্বর মৌসুম হেলায় হারিয়ে কেন এই বঞ্চিত হওয়া। আসুন, এ মাসে সর্বপ্রকার ইবাদত-বন্দেগীর আঞ্জাম দিয়ে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ হাসিলে সচেষ্ট হই।



মন্তব্য চালু নেই