মোমিনের সর্বোত্তম গুণ তওবা

তওবা কবুল এবং হেদায়েত প্রাপ্তি মুসলিম উম্মাহর জন্য অনেক বড় রহমত। কোনো মানুষকে যদি বলা হয়, ‘আপনি তওবা করুন এবং হেদায়েত প্রার্থনা করুন’ তখন ওই ব্যক্তি রাগ হয় বা ক্ষেপে যায়। কারণ মানুষ সাধারণত মনে করে, তওবা করা এবং হেদায়েত চাওয়ার অর্থই হলো- সে বড় কোনো গোনাহ বা অন্যায়ে জড়িত হয়ে গেছে।

মানুষ গোমরাহ হলেই যে তওবা করে আর হেদায়েত কামনা করে আসলে ব্যাপারটি তা নয়। মুসলিম উম্মাহর জন্য তওবা কবুল এবং হেদায়েত প্রাপ্তি আল্লাহ তাআলার অনেক বড় রহমত। আল্লাহ ইবনুল কায়্যিম রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেন, ‘তওবা হলো আল্লাহ তাআলার প্রিয় বান্দাদের সর্বোত্তম স্থান এবং হেদায়েতপ্রাপ্ত লোকদের প্রথম ও শেষ সোপান।’

আল্লাহ তাআলা তওবা সম্পর্কে ঈমানদারকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা আল্লাহ তাআলার কাছে তওবা করো; আন্তরিক তওবা। আশা করা যায়, তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের মন্দ কর্মগুলো মোচন করে দেবেন এবং তোমাদের দাখিল করবেন জান্নাতে, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত।’ (সুরা তাহরিম : আয়াত ৮)।

আল্লাহ তাআলা মানুষকে আন্তরিক তওবা করার কথা বলেছেন। আন্তরিক তওবার বিবরণ বর্ণনা করে হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘মানুষ নিজের অন্যায় কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে এমনভাবে তওবা করবে, যেন ভবিষ্যতে তার দ্বারা এ ধরনের অন্যায় কাজ কোনোভাবেই সংঘটিত না হয়।’

মানুষ যে বিষয়টি সম্পর্কে বেশি গাফেল হয়ে থাকে তা হলো- ‘তওবা’। মানুষের চাহিদা অনেক বেশি। চাহিদা ও উচ্চাভিলাষের সীমা মানুষকে তওবা থেকে দূরে রাখে। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা কুরআনের অসংখ্য জায়গায় তওবার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন।

পক্ষান্তরে যারা পরকালের ভয় রাখে তারাই আল্লাহ তাআলার কাছে বেশি বেশি তওবা করে থাকে। এ কারণেই তওবা মোমিনের সর্বোত্তম গুণ। আল্লাহ তাআলা কুরআনে তওবাকারীদের পরিচয় তুলে ধরেছেন।

তিনি বলেন, ‘তারা কখনো কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেললে কিংবা কোনো মন্দ কাজে জড়িত হয়ে গেলে নিজেদের ওপর জুলুম করে ফেললে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ছাড়া আর কে আছে যে, পাপ ক্ষমা করবেন? তারা নিজের কৃতকর্মের জন্য হঠকারিতা প্রদর্শন করে না এবং জেনে-শুনে তাই করতে থাকে না। তাদেরই জন্য প্রতিদান হলো তাদের পালনকর্তার ক্ষমা ও জান্নাত, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত হচ্ছে, যেখানে তারা থাকবে অনন্তকাল। যারা কাজ করে তাদের জন্য কতই না চমৎকার প্রতিদান।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৩৫-১৩৬)।

তওবাকারীদের সম্পর্কে এ আয়াত নাজিলের পর ইবলিশ শয়তান অনেক কান্নাকাটি করেছিলেন। হাদিসে এসেছে- হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, ‘ইবলিস বলল- হে প্রভু! আপনার মহিমার শপথ, যতক্ষণ আপনার বান্দার প্রাণ তার শরীরে থাকবে; ততক্ষণ আমি তাকে বিপথগামী করা থেকে বিরত হবো না। আমি তাদের পথভ্রষ্ট করতে থাকবো।’

উত্তরে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমার ইজ্জত এবং সম্মানের কসম করে বলছি, যতক্ষণ পর্যন্ত আমার বান্দা আমার কাছে তার কৃত গোনাহের জন্য তওবা করতে থাকবে; আমি ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের ক্ষমা করতে থাকবো।’ (মুসনাদে আহমদ)।

তওবা আল্লাহ তাআলার কাছে এতো অধিক পছন্দনীয় গুণ যে বান্দা যতো অন্যায় আর অপরাধই করুক। ইবলিশ শয়তান মোমিন বান্দাকে ফাঁদে ফেলার যতো ষড়যন্ত্রই করুক না কেন। বান্দা যদি আল্লাহর রহমতের ওপর ভরসা করে তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। নিজের গোনাহের জন্য লজ্জিত হয়ে বিনয়ের সঙ্গে হৃদয় দিয়ে আল্লাহর কাছে তওবা করে এবং গোনাহ পরিহার করে। তবে অবশ্যই আল্লাহ তাআলা ওই বান্দার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকান।

শুধু রহমতের দৃষ্টিতেই তাকান না বরং বান্দার হক ব্যতীত ওই তওবাকারীর জীবনের সব ছোট এবং বড় গোনাহগুলো ক্ষমা করে দেন।

তওবার গুণ সর্বোত্তম হওয়ার কারণেই হাদিসে তওবার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। মুসলিম উম্মাহকে তওবার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি প্রতিদিন ১০০ বার তওবা করি।’ অথচ বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন মাছুম তথা নিষ্পাপ ।

সুতরাং মোমিন মুসলমানের তওবা এবং হেদায়েত কামনা করা আল্লাহ তাআলার একান্ত রহমত। এটা অসম্মানের কোনো বিষয় নয়। কুরআন ও হাদিসই যার প্রমাণ।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তওবার গুণ অর্জন করতে তার কাছে দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ কামনায় খাঁটি তওবা করে অন্যায় থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার প্রতিটি কাজে কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক সৎ কাজ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।



মন্তব্য চালু নেই