মোবাইল ফোন ছাড়া কতক্ষণ থাকতে পারবেন?

যদি আপনাকে জিজ্ঞেস করা হয়, মোবাইল ফোন ছাড়া কতক্ষণ থাকতে পারবেন? থাক, জবাব ভাবতে আর মাথা ঘামানোর দরকার নেই। মনোবিজ্ঞানীদের বরাত দিয়ে যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে এই প্রশ্নের উত্তর। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৮ থেকে ২৬ বছর বয়সী ব্যক্তিরা মাত্র কয়েক মিনিট তাদের ফোন থেকে দূরে থাকতে পারেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের কাছ থেকে মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, তাদের আচরণে যাদের কাছ থেকে মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়নি তাদের চেয়ে বেশি চাপের লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে।

গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যাদের অন্য একটি মোবাইল ফোন দেওয়া হয়েছিল, তাদের আচরণেও কম চাপের লক্ষণ দেখা গেছে, যদিও ফোনটি তাদের নিজস্ব ফোন ছিল না।

গবেষকরা বলছেন, মোবাইল ফোন ব্যবহার করে যে আরাম পাওয়া যায়, তার সঙ্গে বাস্তবে একটি মানুষের সঙ্গে ভাববিনিময় করে পাওয়া আরামের তুলনা চলে।

এমনকি গবেষকরা এই আরামকে তুলনা করেন কম্বল জড়িয়ে শুয়ে থাকা এক শিশুর আরাম অনুভূতির সঙ্গে। মোবাইল ফোন বিষয়ক এই গবেষণা পরিচালনা করেন হাঙ্গেরির এয়োটভস লর‍্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল মনোবিজ্ঞানী। আর এই গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় জার্নাল কম্পিউটার্স ইন হিউম্যান বিহ্যাভিয়ারে।

এই গবেষণার অন্যতম একজন গবেষক ভেরোনিকা কনক বলেন, ‘বস্তুর প্রতি আসক্তি আপনাকে তার মুখাপেক্ষী করে তুলতে পারে, অনেকটা প্রিয় মানুষের ছবি অথবা পুতুলের মতো।’

ভেরোনিকা আরো বলেন, ‘মোবাইল ফোন অবশ্যই অসাধারণ বস্তু, কারণ এটি আর শুধু একটি গুরুত্বপূর্ণ বস্তু নয়, এটি এখন আমাদের সামাজিক যোগাযোগেরও প্রতিনিধিত্ব করছে।’

১৮ থেকে ২৬ বছর বয়সী একদল ব্যক্তির ওপর এই গবেষণা করা হয় এবং তাদের প্রতিটি আচরণ ভিডিওতে ধারণ করার পাশাপাশি প্রত্যেকের হৃদস্পন্দন পর্যবেক্ষণ করা হয়।

দলের অর্ধেক ব্যক্তিদের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে নেওয়া হয় এবং একটি আলমারির ভেতর রাখা হয়।

৮৭ অংশগ্রহণকারীর প্রত্যেককেই নিজস্ব কক্ষে বসতে দেওয়া হয় এবং তাদের ল্যাপটপে কিছু অঙ্ক ও পাজল করতে দেওয়া হয়।

প্রায় সাড়ে তিন মিনিটের মধ্যে তাদের আচরণে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। যাদের কাছে ফোন ছিল না, তাদের আলমারিতে রাখা ফোনের চারপাশে ঘোরাঘুরি বাড়তে থাকে এবং সে সময় তাদের আচরণে মানসিক চাপবোধের লক্ষণ দেখা যায়, যেমন—সময়ের সঙ্গে তাদের হৃদস্পন্দনের পরিবর্তন।

এর পাশাপাশি যাঁরা ফোন ছাড়া ছিলেন, তাঁদের মধ্যে অস্থির ভাব, নিজের মুখমণ্ডলে বারবার হাত বা নখ দিয়ে আঁচড়ানোর মতো লক্ষণ দেখা যায়। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, এসবই কোনো ব্যক্তির ওপর থাকা চাপ প্রকাশের লক্ষণ।

গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের বিভিন্ন প্রতিক্রিয়াকে কতিপয় আবেগপূর্ণ শব্দ দ্বারা পরীক্ষা করা হয় এবং তাদের কাছ থেকে যে সাড়া পাওয়া যায় তাতে দেখা যায় তারা এই বিচ্ছেদকে ‘ব্রেকআপ’ (বিচ্ছেদ) বা ‘লস’ (হারিয়ে ফেলা) শব্দ দিয়ে প্রকাশ করেন।

ভেরোনিকা আরো বলেন যে তিনি মনে করেন, তরুণদের মোবাইল ফোনের সঙ্গে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে : ‘বাচ্চারা যারা একেবারে শৈশব থেকেই মোবাইল ফোন ব্যবহার করে, আমি মনে করি তারা এর সাথে অনেক বেশি সংযুক্ত।’

তাদের এই ফলাফল শুনে আপনি অতটা অবাক নাও হতে পারেন। তবে ভেবে দেখুন, যদি আপনার মোবাইলটির চার্জ ফুরিয়ে যায় বা আপনি সেটা কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে থাকেন তাহলে আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে নিজের ভেতর কী রকম চাপ অনুভূত হয়।

মোবাইল ফোন থেকে এই দূরে থাকার এই ভয়ের একটি নামও দেওয়া হয়েছে গবেষণা থেকে—‘নোমোফোবিয়া’। যা ‘নো মোবাইল ফোন ফোবিয়া’র ইংরেজি সংক্ষিপ্তরূপ।

ভিন্ন একটি গবেষণায় দেখা যায়, প্রতি পাঁচজন ব্যক্তির মধ্যে চারজন ব্যক্তি এই নোমোফোবিয়ায় আক্রান্ত।



মন্তব্য চালু নেই