মোবাইল ফোন ও ফেসবুকের কারনে ছেলে মেয়েদের ঘর ছাড়ার প্রবনতা বেড়ে গেছে
ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী তানিয়া আক্তার (ছদ্মনাম) একদিন বিদ্যালয় থেকে বাড়ি না ফেরায় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তার অভিভাবক। পুলিশ বিদ্যালয়ে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, মুঠোফোনে নিয়মিত কথা হতো এমন এক বন্ধুর সঙ্গে আছে সে। দুদিন পর পুলিশ ছেলেটি ও তানিয়াকে উদ্ধার করে।
গত দুই মাসে তানিয়ার মতো একাধিক কিশোর-কিশোরী ঘর ছেড়ে পালিয়েছে। অভিভাবকদের পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে বিচলিত নগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও। তাঁদের মতে, মুঠোফোন ও ফেসবুক সহজলভ্য হয়ে ওঠায় কিশোর-কিশোরীরা আবেগের সম্পর্কে জড়াচ্ছে। এ বয়সে ভালো-মন্দ বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তৈরি হয় না বলে অনেকে ভুল পথেও পা বাড়াচ্ছে। এসব ঘটনায় কিশোরীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে নগরের একটি বিদ্যালয় পরিদর্শন করে শিক্ষার্থীদের মুঠোফোন থেকে দূরে থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন সিএমপির পুলিশ কমিশনার।
নগরের পাথরঘাটা এলাকার দশম শ্রেণির এক ছাত্রী পরিবারের কাউকে না জানিয়ে একটি ছেলের সঙ্গে গাজীপুরে চলে যায়। পরিবারের পক্ষ থেকে অপহরণ মামলা করা হলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। পরে আবারও মেয়েটি ওই ছেলের সঙ্গে চলে যায়। এবার যাওয়ার আগে বাসার দরজা বাইরে থেকে তালাবন্ধ করে যায়। যাতে পালানোর পর সহজে ধরা না পড়ে।
দুটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা হলেও নগরের ১৬ থানা ও নগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে প্রতিদিন অসংখ্য অভিযোগ আসছে এবং মামলা হচ্ছে। পুলিশের মতে, কিশোর-কিশোরীরা এ ধরনের আবেগের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে অনেক সময় ভুল পদক্ষেপ নিচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে অপরাধীও হয়ে উঠছে।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘যখনই কোনো অভিযোগ কিংবা মামলা হয়, আমরা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করি। গত দুই মাসে নগরে যেসব অপহরণের ঘটনা ঘটেছে, সেসবের মধ্যে আট থেকে ১০টি ঘটনা অপহরণ ছিল না। এসব ঘটনায় দেখা গেছে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েরা আবেগের সম্পর্কে জড়িয়ে স্বেচ্ছায় ঘর ছেড়ে চলে গেছে।
তিনি অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, কিশোর-কিশোরীরা কার সঙ্গে মিশছে, কীভাবে সময় কাটাচ্ছে, মা–বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের খেয়াল রাখতে হবে। মুঠোফোন বা ফেসবুক ব্যবহার করছে কি না জানতে হবে। ব্যবহার করলেও পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে করতে হবে, যাতে বিপথগামী না হয়। এককথায় ছেলে-মেয়ের বন্ধু হতে হবে মা–বাবাকে।
এদিকে এসব ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশ কমিশনার আবদুল জলিল মণ্ডল নগরের বিদ্যালয়গুলোতে গিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। এর অংশ হিসেবে গত ২৭ অক্টোবর তিনি নগরের ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের মুঠোফোন ও ফেসবুক ব্যবহার থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
পুলিশ কমিশনার লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা ও পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। পর্যায়ক্রমে নগরের সব বিদ্যালয়ে এ কর্মসূচি নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সৈয়দ মুহাম্মদ সাজ্জাদ কবীরের কাছে কিশোর-কিশোরীদের এই প্রবণতা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। তিনি বলেন, ইদানীং শিশু-কিশোরদের কাছে স্মার্টফোন, ট্যাবলেটসহ ইলেকট্রনিক গ্যাজেট সহজলভ্য হয়ে উঠছে। স্মার্টফোনের মাধ্যমে দ্রুতই ভোগবাদী দুনিয়ার খোঁজ পাচ্ছে তারা। এ বয়সের তরুণ-তরুণীরা সব সময় মজা পেতে চায়। তাদের মধ্যে অনুশাসন খুব একটা কাজ করে না। তাই মুঠোফোনের মাধ্যমে কার সঙ্গে সম্পর্কে জড়াচ্ছে তারা তা খতিয়ে দেখতে চায় না।
সন্তানকে মুঠোফোন থেকে দূরে রাখতে হবে কি না এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সেটা জরুরি নয়। জরুরি হলো এসবের ভালো–মন্দ বুঝিয়ে বলা। আর সেটা করতে হলে বাবা–মাকে অনেক সময় দিতে হবে। সন্তানদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে এ বয়সে সম্পর্ক গড়ে তুললে তা টিকবে না। কারও জন্যই তা সুখের হবে না।
মন্তব্য চালু নেই