কুড়িগ্রামের রৌমারী ও রাজীবপুর :

মোবাইল ফোনে জরুরী সেবা ছয় বছরে ‘শূন্য’!

স্বাস্থ্য সেবা জনগনেরর দৌরগড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে সরকার মোবাইল ফোনে জরুরী স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম চালু করে ২০০৯ সালের মে’ মাসে। কিন্তু হাসপাতালের চিকিৎসকদের চরম অবহেলার কারনে দীর্ঘ ৬বছরেও সরকারের মহোৎ ওই উদ্যোগে ভাটা পড়েছে। প্রচার-প্রচারণার অভাব আর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার দায়িত্ব অবহেলার কারনে জরুরী ওই স্বাস্থ্য সেবা সর্ম্পকে সাধারণ মানুষ এখন পরিচিতি হতে পারেনি।

বিশেষ করে কুড়িগ্রামের রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলার সাধারণ মানুষ ওই সেবার বিষয়ে কিছুই জানে না। এমনকি ওই সময়ে মোবাইল ফোনে জরুরী স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করেছে এমন কোনো তথ্য হাসপাতালের লিপিবদ্ধ নেই। অর্থাৎ ছয় বছরে ওই দুই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোবাইল ফোনে জরুরী স্বাস্থ্য সেবা নিয়েছে এমন মানুষের সংখ্যা ‘শূণ্য’।

সরকারি নিয়ম অনুসারে, হাসপাতালে উপস্থিত না হয়েও সাধারণ মানুষ বা রোগীরা সরকারি নিদির্ষ্ট ওই মোবাইল ফোনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারবে। এজন্য সরকারি ভাবে নির্দিষ্ট মোবাইল নম্বর জনস্বার্থে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রদর্শণ ও প্রচারণার জন্য সরকারি ভাবে নির্দেশনাও রয়েছে। এছাড়াও নিয়ম অনুযায়ী কর্মরত চিকিৎসক ২৪ ঘণ্টা মোবাইল ফোনে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত পরামর্শ দেবেন। প্রতিদিন কতজনকে পরামর্শ দেওয়া হলো, রোগী কী ধরনের পরামর্শ চেয়েছেন সে সব তথ্য লিপিবদ্ধ করে রাখার নিয়ম রয়েছে।

অথচ রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত ছয় বছরে কতজন রোগী মোবাইল ফোনে পরামর্শ গ্রহণ করেছেন এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। অভিযোগ রয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই জরুরী সেবা সংক্রান্ত কোনো প্রচার-প্রচারণা চালানো হয় না।

সরেজমিনে এলাকার বিভিন্ন পেশা শ্রেণির মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারের ওই জরুরী সেবার বিষয়টি কেউ অবহিত নন। রৌমারী উপজেলার বাস কাউন্টারের শ্রমিক আমজাদ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনার কাছেই আজ শুনলাম মোবাইল ফোনে জরুরী সেবা পাওয়া যায়। এর আগেও কারো কাছে আমি শুনিনি। আমার মনে বিষয়টি এখনও কেউ জানে না।’ রাজীবপুর ডিগ্রি কলেজের ছাত্র শিপন মাহমুদ বলেন, ‘মোবাইল ফোনে ডাক্তার পরামর্শ দেয় তা আমার জানা নেই। দৈনিক পত্রিকায় চিঠি লিখলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা পরামর্শ দেয় এটা আমরা জানি।’ তার মতো ওই কলেজের একটা শিক্ষার্থীকেও খুঁজে পাওয়া গেল না, যে মোবাইল ফোনে সেবা পাওয়া যায়।

রাজীবপুরের মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন আনু বলেন, ‘আমি একদিন একাধিকবার হাসপাতালের ওই মোবাইল নম্বরে ফোন দিয়েছিলাম কিন্তু কেউ রিসিভ করেননি। তারপর আর কোনো দিনও ফোন দেইনি।’ অপরদিকে শংকরমাদব উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন জানান, হাসপাতালের ওই মোবাইল নম্বর প্রায়ই বন্ধ পাওয়া যায়। আবার পাওয়া গেলে দেখা যায় যে ফোন রিসিভ করেছে হাসপাতালের কর্মচারী।

বুধবার রাজীবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নির্দিষ্ট ওই মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হয়েছে বাস্তব চিত্র জানার জন্য। অসংখ্যবার চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু প্রতিবারই তা বন্ধ পাওয়া গেছে নম্বরদুটি। পরে রাজীবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মাবুদ আলীর ব্যক্তিগত মোবাইলে কল করে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকারি ওই মোবাইলটার ব্যাটারি দুর্বল, চার্জ থাকে না।

তাছাড়া ওই মোবাইলে মাসেও একটা কল আসে না। আর একারনে ব্যটারিও পরিবর্তন করা হয়নি।’ অপরদিকে রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডা. শাহাজাহান কবীর বলেন, ‘অনেক দিন থেকেই সরকারি ওই মোবাইল ফোনটা নষ্ট।’ মোবাইলে জরুরী সেবা গ্রহণ করেছে এমন কোনো তথ্যও নেই তার কাছে।

কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. জয়নাল আবেদন, কেউ যদি জরুরী সেবার পরামর্শ না চায় তাহলে আমরা কিভাবে দিব। রৌমারী ও রাজীবপুরে মোবাইল ফোনে জরুরী সেবা সর্ম্পকে সাধারণ মানুষ কিছুই জানে না-এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ওই বিষয় এলাকায় প্রচার-প্রচারণার দায়িত্ব তো শুধু হাসপাতালের একার নয়, উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদেরও তো ভূমিকা রাখতে হবে।’



মন্তব্য চালু নেই