মেয়েকে খুন করে শবদাহের আয়োজন করলেন বাবা!
যে পিতার কর্তব্য হল সন্তানকে রক্ষা করা, সেই পিতাই যে ক্ষেত্রবিশেষে সন্তানের শত্রু হয়ে ওঠে, সেই নির্মম সত্যই যেন উদ্ঘাটিত হল বিহারের গয়ায় ঘটে যাওয়া একটি ঘটনায়। পিতার হাতে খুন হতে হল এক নাবালিকাকে। ঘটনাস্থল বিহারের অতরী থানার অন্তর্গত চহলগাঁও। ১৬ বছরের গীতা কুমারী (নাম পরিবর্তিত) ভালবেসেছিল তাদেরই গ্রামের প্রবীণ। দুই জনে এক সঙ্গে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ান গীতার বাবা তপেশ্বর। তিনি মেনে নেননি গীতা-প্রবীণের ভালবাসা। অন্যত্র মেয়ের বিয়ে স্থির করে ফেলেন। নিজেদের ভালবাসাকে পরিণতি দিতে গীতা-প্রবীণ নিজেদের বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। গীতার বাড়ির লোকজনেরা আশেপাশের গ্রামে গীতার খোঁজ শুরু করেন। দুই এক দিনের মধ্যেই জানা যায়, গীতা আর প্রবীণ দুই জনে লুকিয়ে রয়েছে পার্শ্ববর্তী গ্রাম বেলাগঞ্জে। সঙ্গে সঙ্গে নিজের সাঙ্গোপাঙ্গোদের নিয়ে তপেশ্বর রওনা হয়ে যান বেলাগঞ্জের উদ্দেশে।
বেলাগঞ্জে পৌঁছে গীতা আর প্রবীণকে এক সঙ্গে আবিষ্কার করেন তপেশ্বর আর তাঁর সঙ্গীরা। সঙ্গে সঙ্গে প্রবীণকে মারধর শুরু করেন তাঁরা। বেধড়ক মারের পর প্রবীণের হাতা-পা বেঁধে ফেলা হয়। গীতা অনেক চেষ্টা করেছিল বাবাকে নিরস্ত করতে। কিন্তু তপেশ্বরের মাথায় তখন খুন চড়ে গিয়েছে। তিনি মেয়ের কথায় কান দেননি। গীতাকে নিয়ে বেলগঞ্জ থেকে নিজেদের গ্রামের দিকে রওনা হন তপেশ্বররা। কিন্তু বেঁকে বসেন গীতা। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, বিয়ে তিনি প্রবীণকেই করবেন। বাবার দেখে দেওয়া ছেলেকে বিয়ে করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। এই কথা শুনে আর নিজেকে স্থির রাখতে পারেননি তপেশ্বর। রাস্তার মাঝেই গলা টিপে মেয়েকে খুন করেন তিনি।
ইতিমধ্যে প্রবীণের বাড়ির লোকেরা খবর দিয়েছেন পুলিশে। অতরী থানার পুলিশ নদীর ধার বরাবর গীতার খোঁজ শুরু করে। তখনই তাদের চোখে প়়ড়ে, নদী তীরবর্তী একটি জায়গা থেকে সাদা ধোঁয়া উপরে উঠছে। সেই ধোঁয়া লক্ষ্য করে এগিয়ে যেতেই দেখা যায়, নদীর তীরবর্তী একটি নির্জন অংশে চিতা তৈরি করে গীতার দেহ দাহ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তপেশ্বর এবং তাঁর সঙ্গীসাথীরা। দূর থেকে পুলিশকে দেখতে পেয়েই চম্পট দেন তাঁরা। পুলিশ তাড়া করেও ধরতে পারেনি তাঁদের।
চিতার কাছে পৌঁছে দেখা যায়, গীতার দেহ চিতায় শোওয়ানো হলেও, তখনও পর্যন্ত শবদেহটি মোটামুটি অক্ষতই রয়েছে। দেহটি উদ্ধার করে পোস্টমর্টেমের জন্য পাঠানো হয়েছে। অতরী থানার দারোগা কৃষ্ণ কুমার সংবাদমাধ্যমকে জানান, যা কিছু ঘটেছে, তা প্রকাশ্য রাস্তাতেই ঘটেছে। গ্রামবাসীদের মুখ থেকেই গোটা ঘটনার মোটামুটি একটা বিবরণ পাওয়া গিয়েছে। তপেশ্বরের নামে অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট জারি করা হয়েছে। তপেশ্বর এবং তাঁর সঙ্গীসাথীদের খোঁজ চলছে।
মন্তব্য চালু নেই