মেয়াদ শেষের আগে নির্বাচন নয়
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘দেশে এমন কী পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে, নির্বাচন দিতে হবে? সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কোনো নির্বাচন নয়।’
শনিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘মিট দ্যা রিপোর্টার্স’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এতে সভাপতিত্ব করেন ডিআরইউর সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন বাদশাহ আর পরিচালনা করেন ডিআরইউর সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস হোসেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘তারেক রহমান সম্পর্কে কথা বলা সমীচীন নয়। সে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করার কারণেই দেশে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। তারেক রহমানের বক্তব্যের আগে বিএনপি দেশের বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশ করেছে। তখন কেউ বাধা দেয়নি।’
আগামী ৫ জানুয়ারি নিয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপি গাজীপুরে ছাত্রলীগকে মোকাবেলা করে সেখানে জনসভা করতে পারেনি। আর আগামী ৫ জানুয়ারিও আওয়ামী লীগকে মোকাবেলা করে বিএনপি কোনো কিছুই করতে পারবে না।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির শাসনামলে আওয়ামী লীগের সমাবেশেও ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু আমরা সেই ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সমাবেশস্থলে গিয়েছি। বিএনপি সরকার সেই সমাবেশে টিয়ারসেল নিক্ষেপ করেছিল। বিএনপির আমলে নারায়ণগঞ্জে একটি জনসভায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল। সেই সমাবেশে আমরা নেতাকর্মীসহ গিয়েছিলাম। পরে সরকার পুলিশ দিয়ে সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ফলে নেতাকর্মীরা মাঠ থেকে চলে যায়। কিন্তু আমি এবং আব্দুর রাজ্জাক ভাই খালি মাঠে বক্তব্য দিয়েছি। মাঠ ছেড়ে যাইনি।’
খালেদা জিয়ার সাত দফা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘মধ্যবর্তী নির্বাচন ও সংলাপের কোনো সম্ভাবনা নেই। সংলাপ হবে সরকারের মেয়াদ শেষে।’
তিনি আরো বলেন, ‘১৯৯৬ সালে ১৫ জানুয়ারি নির্বাচন করে ক্ষমতা দখল করেছিল বিএনপি। তখন কিন্তু ইচ্ছা করে ক্ষমতা ছাড়েনি দলটি। আওয়ামী লীগের আন্দোলনের কারণেই বিএনপি পরবর্তীতে নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়েছিল। এখন কী এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে নির্বাচন দিতে হবে?’
৫ জানুয়ারি সংঘর্ষ হতে পারে এমন আশঙ্কা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘৫ জানুয়ারি রাজপথে যদি কেউ আইন নিজের হাতে তুলে না নেয় তাহলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে। আর যদি কেউ নিজের হাতে আইন তুলে নেয় তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দায়িত্ব পালন করবে।’
মন্ত্রী আরো বলেন, ‘বিএনপি একদিকে বলে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবে। আরেক দিকে বলে ৫ জানুয়ারির পর থেকে চূড়ান্ত লড়াই হবে। সরকার তো কাউকে লড়াই করতে দিতে পারে না। তাছাড়া আন্দোলন করতে একটা লক্ষ্য থাকা প্রয়োজন। কিন্তু বিএনপির কোনো লক্ষ্য নেই। আন্দোলন করার মত কোনো ক্ষমতাও নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেন। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নও করেন। তার লক্ষ্য বর্তমান সরকারের মেয়াদ পূর্ণ করা।’
সাংবদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচন বানচালের জন্য বিএনপি-জামায়াত আন্দোলন করেছিল। কিন্তু সরকার মেয়াদের শেষ সময় ছিল বলে বেশি কঠোর অবস্থান নিতে পারেনি। এবার সরকারের মেয়াদ ৪ বছর বাকী আছে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে আরো কঠোর অবস্থানে যাবে সরকার। ফলে বিএনপির এখন উচিৎ, তৃণমূলকে সংগঠিত করে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেয়া।’
ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ একটি পবিত্র সংগঠন। কিছু ব্যক্তির কারণে এ সংগঠনের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। এটা যাতে না হয়, সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদের নির্বাচন হলেই এ সমস্যার সমাধান হয়ে যেত এবং তৃণমূল থেকে নেতৃত্ব উঠে আসতো।’
দলের সিনিয়র নেতারা বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকদের সম্পর্কে যেসব কথা বলছে এতে সেসব দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো মুখি না। আমাদের দেশের স্বার্থ যেখানে আছে, আমরা সেই মুখি। আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্বে বিশ্বাস করি। আর ব্যক্তিগত আক্রমণের কারণে কোনো দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে না। কারো মন্তব্যের কারণে কারো সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খারাপ হবে না।’
জিএসপি সম্পর্কে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো দেশেই বর্তমানে আমেরিকা থেকে জিএসপি সুবিধা পায় না। এটা মেয়াদউর্ত্তীণ হয়ে গেছে। এটা হয়তো আর কখনো তারা চালু করবে না। তারা যাদের জন্য জিএসপি সুবিধা চালু করেছিল তাদের এখন ডিউটি ফ্রি করে দিয়েছে। পৃথিবীর কোথাও জিএসপি নিয়ে আলোচনা হয় না। এটা হয় শুধু আমাদের দেশে।’
দেশের উন্নয়ন সম্পর্কে জানতে চাইলে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘যেখানে বিশ্বের বড় বড় গবেষণা প্রতিষ্ঠান বলছে আমরা ইমাজিন টাইগার। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি আমাদের লক্ষ্য পূরণে। আর সেখানে আমাদের দেশের কয়েকটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান নেগেটিভ বলছে। তারা হাফফুল বলতে পারে না।’
মন্তব্য চালু নেই