লিওনেল মেসিকে আসলে নতুন করে চেনানোর, তাঁর কীর্তি নতুন করে বোঝানোর চেষ্টা করাই ভুল। এ ক্ষেত্রে পেপ গার্দিওলার উক্তিটাই সম্ভবত সবচেয়ে যথার্থ, ‘মেসিকে বর্ণনা করার চেষ্টা করতে যাওয়া বৃথা, ওকে শুধু দেখুন।’

বার্সেলোনার জার্সিতে প্রতি সপ্তাহান্তে লিগের ম্যাচে কিংবা সপ্তাহের মাঝপথে চ্যাম্পিয়নস লিগ-কিংস কাপের ম্যাচেই দেখা মেলে আর্জেন্টাইন অধিনায়কের। সাপের মতো এঁকেবেঁকে ডিফেন্ডারদের ছিটকে ফেলা দৌড়, ধনুক-বাঁকা ফ্রি কিক কিংবা অদ্ভুত সৌন্দর্যে সতীর্থকে দিয়ে পেনাল্টি থেকে গোল করানো—মেসির পায়ে ফুটবল মানে যেন শুধু ফুটবল নয়, মোৎজার্টের সুরের মূর্ছনা, সবুজ মাঠের ক্যানভাসে পিকাসোর রংতুলির আঁচড়।

তাঁর ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই নিয়মিত দেখা মিলছে এই সৌন্দর্যের। যদিও নিয়মিত আলোচনায় তিনি আছেন ২০০৭-০৮ থেকে। এর আগে কিছু অদ্ভুত কীর্তিতে নাম ছড়ালেও গত আট বছর ধরেই ফুটবলের আলোচনায় মেসির সরব উপস্থিতি। থাকবেন নাই-বা কেন? একের পর এক কীর্তি গড়ে যে ফুটবল প্রেমীদের বাধ্য করছেন আলোচনা করতে।

এ সময়ে তাঁর খেলার ধরনে যেমনি পরিবর্তন এসেছে, তেমনি পরিবর্তন এসেছে আভরণ-অবয়বেও। এক সময়ের লম্বা কাঁধ ছড়ানো চুল আর নেই, মুখে কৈশোরের সারল্যের ছাপও সরে গেছে অনেকটাই। কিন্তু কেমন ছিলেন স্পটলাইটে আসার আগের সেই মেসি?

স্প্যানিশ ক্রীড়াদৈনিক স্পোর্ত তুলে ধরেছে ‘আগের মেসি’র কিছু ছবি, যেগুলো আপনি হয়তো না-ও দেখে থাকতে পারেন। বা দেখে থাকলেও আরেকবার স্মৃতিগুলোকে জাগিয়ে তুলতে পারেন এই ছবিগুলো দেখে—

.অক্টোবর, ২০০৫—মেসির পায়ে নাচছে বিশ্ব: প্রতীকী ধরে নিতে পারেন ছবিটাকে। বল পায়ে তো কারিকুরি (কিপি-আপি) অনেকই করেছেন, এবার ভূ-গোলক নিয়েও কিছুক্ষণ কারিকুরি করলেন মেসি। হয়তো তখনই বার্তা দিতে চেয়েছিলেন, ‘পায়ের নাচনে নাচাব বিশ্ব।’

.ডিসেম্বর, ২০০৫—হাঙরের মুখে মেসি: বল পায়ে মেসিকে এগিয়ে আসতে দেখা প্রতিপক্ষ গোলকিপারদের কাছে হাঙর-দর্শনের মতো হতে পারে। কিন্তু ছবিটিতে মেসিকে দেখুন, হাঙরের কবলে পড়েও কেমন দাঁত কেলিয়ে হাসছেন! নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না, হাঙরটা একটা মূর্তি মাত্র।

.আগস্ট, ২০০৬—পুলিশ মেসি: ক্রুজার বাইক, তাতে পুলিশের ব্যাজ—সবই ঠিক আছে। শুধু পোশাকটা একদমই পুলিশের মতো হলো না।

.অক্টোবর, ২০০৬—মেসি যখন তিরন্দাজ: তির-ধনুক হাতে নিশানা ভেদের অনুশীলনে মগ্ন মেসি। এভাবে ম্যাচের পর ম্যাচ প্রতিপক্ষের গোলপোস্ট ভেদ করার রহস্য তাহলে এ-ই?

.ডিসেম্বর, ২০০৬—বড়দিনের উৎসবে: শুধু ২৫ ডিসেম্বর নয়, প্রতি সপ্তাহেই মেসি ভক্তদের জন্য বড়দিনের আনন্দ এনে দেন। সান্তা ক্লজের মতো তাঁর ঝোলায় থাকে বিস্ময়-উপহার!

.এপ্রিল, ২০০৭—মেসির কাঁধে মেসির হাত: ওই বছর থেকেই রোনালদিনহোর ছায়া থেকে ধীরে ধীরে বের হয়ে আসতে শুরু করেছিলেন। ভক্তদের মধ্যেও শুরু হয়ে গিয়েছিল মেসি-ম্যানিয়া। সেটি কিছুটা কি ছুঁয়ে গিয়েছিল বার্সেলোনা তারকাকেও? হার্ড বোর্ডে গড়া নিজেরই প্রতিকৃতির পাশে দাঁড়িয়ে আছেন মেসি, যেন মেসিরই এক ভক্ত তিনি!

ডিসেম্বর, ২০০৯—ছয় শিরোপার স্মৃতি: স্বপ্নময় একটা মৌসুম কাটিয়েছে বার্সেলোনা। প্রথম ক্লাব হিসেবে এক বর্ষপঞ্জির ছয়টি শিরোপাই জিতেছে বার্সা, তাতে মূল অবদান ছিল ওই মৌসুমেই নাম্বার টেন হয়ে ওঠা মেসির। ছবিতে তাসের কার্ডটি ছয়টি শিরোপারই প্রতীক। তুরুপের তাসটি আসলে কে, বলে না দিলেও চলছে।

.ফেব্রুয়ারি, ২০১০—প্রাচীন মেসি: ছয় বছর আগের এই ছবিটি। ছবিতে মেসি নিজেকে সাজিয়েছেন পুরো প্রাচীন রূপে। আফ্রিকান শিশু অপহরণ ও দত্তক নেওয়ার নামে আফ্রিকান শিশুদের অধিকার হরণের বিরুদ্ধে ‘আফ্রিকার জন্য অশ্রু’ নামের লড়াইয়ে সমর্থন জানাতে মেসির এই বিশেষ বেশে তোলা ছবি।