মেদযুক্ত খাবারের জন্য গুনতে হবে অতিরিক্ত টাকা!
ভারতের প্রথম প্রদেশ হিসেবে ফ্যাট ট্যাক্স বা মেদযুক্ত খাবারের ওপর কর আরোপ করছে কেরালা।বার্গার, পিজা, ডোনাট কিংবা টাকোর মতো পশ্চিমা খাবার খেতে হলে এখন অতিরিক্ত পয়সা গুনতে হবে কেরালার বাসিন্দাদের।–বিবিসি।
প্রদেশটির সদ্যনির্বাচিত কম্যুনিস্ট সরকার বলছে, মানুষ যাতে তাদের খাবারের বিষয়ে আরো সচেতন হয় সেই উদ্দেশ্যেই এই আরোপ করা হচ্ছে।
পছন্দের পিজা অর্ডার দেয়া কিংবা বার্গারে কামড় বসানো এখন কেরালাবাসীর জন্য আরো ব্যয়বহুল হয়ে দাড়াচ্ছে।
বিভিন্ন ব্যান্ডের রেস্টুরেন্ট চেইনের ফাস্ট ফুডের ওপর সাড়ে ১৪ শতাংশ কর আরোপের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে কেরালা সরকার।এই করকে বলা হচ্ছে ফ্যাট ট্যাক্স বা মেদের ওপর কর।
জাঙ্ক ফুড বা মেদবহুল খাবার থেকে মানুষকে সরিয়ে নিতে এ ধরনের কর আরোপ করা হয়েছে ডেনমার্ক এবং হাঙ্গেরিতে।
ভারতের জন্য এই উদ্যোগ সম্পূর্ণই নতুন এবং অনেকের বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট ধারণাও নেই। যার ফলে এর প্রতিক্রিয়াও মিশ্র।
অনেকে মনে করছেন এটি সঠিক পদক্ষেপ। তাঁদের মতে জাঙ্ক ফুডের কারণে অনেক রোগ-বিমারেও আক্রান্ত হচ্ছে অনেকেই।
“মানুষ যখন নিজেদের স্বাস্থ্যের যত্ন নিচ্ছে না, তখন সরকারকে কিছু উদ্যোগ নিতে হবে যাতে করে মানুষজন এসব অস্বাস্থ্যকর খাবার থেকে সরে এসে তাদের স্বাস্থ্যের উপযোগী খাবারে ফিরে যায়”।
আবার অনেকের মতে এই উদ্যোগে খুব একটা ফলপ্রসু হবে না। তারা বলছেন মানুষের যদি আগ্রহ থাকে তাহলে সে এসব খাবার খাবেই। কর বসালেও কোন লাভ হবে না।
ভারতে সবচেয়ে বেশি স্থুলতার হারের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কেরালা।আর এই কারণ দেখিয়েই কেরালার সরকার বিভিন্ন ফাস্ট ফুড চেইন যেমন ম্যাকডোনাল্ডস, ডমিনোস কিংবা পিজা হাটের ওপর এই বিশেষ চাপ আরোপ করছে।
সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, এ ধরনের রেস্টুরেন্ট চেইনগুলোই তরুণদের আরো স্থূল করে তুলছে এবং উচ্চমূল্যের কারণে তারা এ ধরণের খাবার খেতে গিয়ে দু’বার চিন্তা করবে। কিন্তু স্থানীয় ভাজা-পোড়া খাবার যেমন বড়া ডাল কিংবা কলা ভাজি, এসব খাবারও উচ্চ ক্যালরিসম্পন্ন এবং জনপ্রিয় হলেও, এই খাবারগুলোর ওপর কিন্তু কোন কর আরোপ করা হচ্ছে না।
এ কারণে অনেকেই এই কর আরোপকে আসলে স্থূলতার বিরুদ্ধে কোন উদ্যোগ নয়, বরং বহুজাতিক রেস্তোঁরাগুলোর ওপর এক ধরনের আঘাত হিসেবে দেখছেন।
সরকার বারবার নিজেদের পরিকল্পনার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরলেও অনেক খাদ্য বিশেষজ্ঞই মনে করছেন খাবারের ওপর কর আরোপ করা সঠিক পদক্ষেপ নয়।
কোচিন হাসপাতালের ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ ড. রামাকৃষ্ণন বলছিলেন “স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করলে এটি সঠিক পদক্ষেপ নয়। মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর এটি তেমন কোন প্রভাব ফেলবে না। বিশেষ করে কেরালা রাজ্যে। এর ফলে শুধুমাত্র সরকারের পকেটই ভারী হবে। যেটা করা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে, সচেতনতা তৈরি করা। উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবারের খারাপ প্রভাব সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করাটাই বেশি জরুরী”।
খাবারের কারণে হোক, কিংবা ব্যায়াম না করার কারণেই হোক, বর্তমানে প্রতি ৫ জন ভারতীয় নাগরিকের একজন অতিরিক্ত ওজনসম্পন্ন কিংবা স্থূল।
কিন্তু যেহেতু পশ্চিমা কায়দায় ফাস্ট ফুড এখনো তুলনামূলকভাবে নতুন এবং অনেক ভারতীয় এটিকে স্ট্যাটাস সিম্বল বা মর্যাদার প্রতীক হিসেবে দেখেন, সেকারণে এই কর গিলতে হয়তো অনেকের জন্যই কঠিন হবে।
মন্তব্য চালু নেই