মেট্রো সুড়ঙ্গে ভূত !

পাতাল পথে ভূতের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে! এ নিয়ে হুলস্থুল কলকাতা মেট্রো রেলে৷ ভয়ে জবুথবু ট্রেনের চালক থেকে মেট্রোর সাধারণ কর্মীরা৷ আতঙ্কের রেশ যাত্রী মহলেও৷ এতটাই ভয় ছিল যে, তদন্তে নামতে বাধ্য হয়েছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ৷

কীভাবে ছড়াল গুজব?

মেট্রো রেল সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে রবীন্দ্র সদন মেট্রো স্টেশনের আপ প্ল্যাটফর্মে ঢোকার ঠিক আগে মোটরম্যান দেবাশিস চক্রবর্তী দেখতে পান, অন্ধকার সুড়ঙ্গের ভেতর এক ব্যক্তি রেল লাইনের ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন৷ তক্ষুনি তিনি জরুরি ব্রেক কষে ট্রেনটিকে থামিয়ে দেন৷

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন মেট্রো কর্মীরা৷ প্রথমে ভাবা হয়েছিল, কেউ হয়তো ভুল করে লাইন দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সুড়ঙ্গে চলে এসেছে৷ কিন্ত্ত সুড়ঙ্গে তন্নতন্ন করে তল্লাশি চালিয়েও সেই ব্যক্তির খোঁজ মেলেনি৷

সিসিটিভি ক্যামেরাতেও তার ছবি ধরা পড়েনি৷ এর জেরেই আতঙ্ক ছড়ায় মেট্রো কর্মীদের মধ্যে৷ গুজব ছড়িয়ে পড়ে, মেট্রো লাইনে ঝাঁপ দিয়ে যারা আত্মহত্যা করেন, তাদের অতৃপ্ত আত্মা নিশ্চয়ই ঘুরে বেড়ায় সুড়ঙ্গের ভেতর৷ সেই ভূতই হয়তো সেদিন ট্রেনের গতিপথ আগলে দাঁড়িয়েছিল৷

কিন্তু তল্লাশি চালিয়ে টিকিটিরও সন্ধান মেলেনি৷ এর আগে ট্রেন চালাতে গিয়ে অনেক মেট্রোচালকই এ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন বলে কানাঘুষা শুরু হয়ে যায়৷ শুধু গুজব রটলে ক্ষতি ছিল না কিন্ত্ত তার জের পড়ছে রোজকার কাজকর্মেও৷

মেট্রো রেলের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, আতঙ্ক এতটাই চেপে বসেছে যে, কর্মীরা রাতে লাইন পরীক্ষা করতে যেতেও ভয় পাচ্ছেন৷ চালকরাও দুরু দুরু বুকে ট্রেন নিয়ে সুড়ঙ্গে ঢুকছেন৷ সুড়ঙ্গ দিয়ে যাওয়ার সময় উত্‍সাহী যাত্রীদের কেউ কেউ ট্রেনের জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকছেন, যদি একবার ভূতের দেখা মেলে৷

দেখা না মিললেও গণেশের দুধ খাওয়ার মতোই গুজব ছড়াচ্ছে হু হু করে৷ কলকাতার মেয়র পদে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের অভিষেক, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজ্য সফরের খবরে কান না দিয়ে ভূতের গল্পে এখন মশগুল মেট্রো যাত্রীরা৷ মেট্রো ভবনে ফোন করে অনেকে ভূতের হাল হকিকত জানতে চাইছেন৷ যাত্রীদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত হতে হচ্ছে মেট্রো কর্মীদের৷

বাধ্য হয়ে তাই তদন্তে নেমেছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ৷ ভূতের গুজব অবশ্য তারা উড়িয়ে দিয়েছে৷ মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, এটা নিছকই গুজব৷ এর সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই৷

মেট্রো কর্তাদের ধারণা, ওইদিন মেট্রো রেলেরই কোনো কর্মী লাইনে নেমেছিলেন৷ লাইন রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিযুক্ত কর্মীরা ট্রেন চালু অবস্থাতেই লাইনে নেমে কাজ করেন৷ মোটরম্যানদের কাছে তার আগাম খবর থাকে৷

কিন্ত্ত এ ক্ষেত্রে কাউকে না জানিয়েই সম্ভবত তিনি লাইনে নেমেছিলেন৷ অনেক সময় আবার কর্মীরা সুড়ঙ্গে ঢুকে প্ল্যাটফর্মের কিছুটা দূরে গিয়ে শৌচকর্ম করেন৷ কর্তৃপক্ষের ধারণা, এ নিয়ে হইচই হওয়ায় তিনি হয়তো মুখে কুলুপ এঁটেছেন৷

তথ্যসূত্র : এই সময়



মন্তব্য চালু নেই