মৃত্যু নির্ধারিত সময় ও স্থানেই অবধারিত
মৃত্যু এমন এক বিষয়। যার হাত থেকে পলায়ন করার সাধ্য কারো নেই। এ কথা বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আল্লাহ তাআলা যার মৃত্যু যেখানে নির্ধারিত করে রেখেছেন; সেখানেই তাঁর মৃত্যু হবে। এটাই আল্লাহ তার বিধান।
মৃত্যু যে নির্ধারিত সময় ও স্থানে সুনিশ্চিত তা হজরত সুলাইমান আলাইহিস সালামের যুগে তাঁর নিজের এক মন্ত্রীর মৃত্যুর ঘটনা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়। যা মুসলিম উম্মাহর জন্য চিন্তা খোরাক এবং শিক্ষণীয় বিষয়। যা তুলে ধরা হলো-
হজরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম নিজের এক মন্ত্রীর সঙ্গে কথাবার্তা বলছিলেন। এমন সময় খুব সুন্দর চেহারা ও দামি পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তি সুলাইমান আলাইহিস সালামের মজলিশে প্রবেশ করল এবং কিছুক্ষণ বসার পর চলে গেল।
তার যাওয়ার পর মন্ত্রী হজরত সুলাইমান আলাইসি সালামকে জিজ্ঞাস করলেন, হে আল্লাহর নবি! এ মাত্র আপনার নিকট যে লোকটি এসেছিলে, সে কে?
হজরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম বললেন, আমার নিকট (দামি পোশাক পরিহিত সুদর্শন) যে ব্যক্তি (এসে) বসেছিল, সে ‘মালাকুল মাউত’ অর্থাৎ মৃত্যুর ফেরেশতা।
মন্ত্রী (মালাকুল মাউত-এর) কথা শুনে তাঁর চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে যায় এবং শরীর কাঁপতে থাকে আর বলতে থাকে, হজরত! অনুগ্রহ করে বাতাসকে হুকুম দেন, সে যেন আমাকে হিন্দুস্তানে (সেখান থেকে অনেক দূর) পৌঁছে দেয়।
কারণ আমার জন্য অসম্ভব যে আমি ঐ জায়গায় (স্থানে) বসি যেখানে মৃত্যুর ফেরেশতা বসেছে।
হজরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম মন্ত্রীর আবেদন মঞ্জুর করে বাতাসকে নির্দেশ দেন, মন্ত্রীকে হিন্দুস্তান পৌঁছে দেয়ার জন্য। বাতাস (নির্দেশ মোতাবেক) তাই করল।
কিছুক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পর পুনরায় মৃত্যুর ফেরেশতা সুলায়মান আলাইহিস সালামের নিকট উপস্থিত হলো এবং বলল (হে আল্লাহর নবি) আপনার মন্ত্রী কোথায়?
হজরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম জানালেন, আপনার ভয়ের কারণে বাতাস তাঁকে হিন্দুস্তান পৌছে দিয়েছে।
মৃত্যুর ফেরেশতা বলল, কিছুক্ষণ পূর্বে আমি যখন আপনার মজলিসে এসেছিলাম, তখন ঐ মন্ত্রীকে দেখে আশ্চর্য হয়েছিলাম। কেননা আল্লাহ তাআলা আমাকে আদেশ দিয়েছিলেন যে, হিন্দুস্তান থেকে তার জান (রুহ) কবজ করার জন্য। কিন্তু আমি এসে দেখলাম সেই ব্যক্তি হাজার মাইল দূরে আপনার নিকট বসে আছে?
সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ আল্লাহর কি অপার খেলা, (মানুষের মৃত্যুর) সময় এবং স্থান পরিবর্তন হয় না।
মৃত্যুর ফেরেশতা আরো বলেন, আমি নির্দিষ্ট সময়ে হিন্দুস্তান পৌঁছি তখন আপনার মন্ত্রী হিন্দুস্তানে উপস্থিত ছিল এবং তার জান কবজ করে আবার আপনার নিকট ফিরে আসলাম।
সুতরাং আমাদের এ বিশ্বাস রাখতে হবে যে, যার যখন মৃত্যু আসবে, সে যে অবস্থায় যেখানেই থাকুক না কেন; মৃত্যুর সময় হলে কোনো ব্যক্তিকেই এক কদম সামনেও যেতে দেয়া হবে না আবার পিছনেও যেতে দেয়া হবে না।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মৃত্যুর পূর্বেই খাঁটি তাওবা করে কুরআনের বিধান পালনের মাধ্যমে সঠিক পথে চলার তাওফিক দান করুন। পরকালের সফলতা লাভে মৃত্যুর পূর্বে কবরের সম্পদ অর্জন করার তাওফিক দান করুন।
আমিন।
মন্তব্য চালু নেই