মুঘলদের ইতিহাস মুছে ফেলতে চায় ভারতীয়রা!

ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে মুঘল সাম্রাজ্য। বলা যায়, মুঘলদের সময়েই ভারতীয় উপমহাদেশ তার স্বর্ণযুগে প্রবেশ করে। ১৬ এবং ১৭ শতকজুড়ে ভারত শাসনকালে এখানকার শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি- সবকিছুতেই অসমান্য প্রভাব রেখেছেন তারা।
তবে কিছু ভারতীয় সম্প্রতি দাবি তুলেছেন, ভারতের ইতিহাস থেকে মুঘল শাসনের অধ্যায় মুছে ফেলা হোক। তাদের পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দেয়া হোক বাবর, আকবর, শাহজাহানদের নাম। এ নিয়ে সামাজিকমাধ্যমেও চালানো হচ্ছে প্রচারণা। ইংরেজিতে ‘রিমুভ মুঘলস ফ্রম বুকস’ নামে ফেসবুকে একটি হ্যাশট্যাগও ব্যবহার করা শুরু করেছেন তারা।
প্রশ্ন হচ্ছে, মুঘলরা ভারতের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়া সত্ত্বেও কেন তাদের অধ্যায় ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার দাবি করছেন কিছু ভারতীয়। মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবর ১৫২৬ সালে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদিকে পরাজিত করার মাধ্যমে ভারতে তাদের শাসনের সূচনা করেন। মুঘল শাসকরা দক্ষিণ এশিয়ায় মূলত ইসলাম ধর্মের অবস্থানকে জোরদার করেছেন এবং মুসলিম শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং তাদের বিশ্বাস ছড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের শাসনের পুরোটা সময়জুড়ে ভারতের স্থাপত্যশিল্প, সাহিত্য এবং রন্ধনশিল্প খ্যাতির শীর্ষে আরোহণ করে।
এতসব সত্ত্বে অনেক ভারতীয় মনে করে, নিজেদের শাসনামলে অসংখ্য হিন্দুকে হত্যা করেছে মুঘলরা। অনেককে জোর করে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করেছে এবং হিন্দুদের অনেক মন্দির ধ্বংস করেছে। সম্প্রতি ভারতের মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী এবং হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি’র সদস্য স্মৃতি ইরানির একটি বক্তব্যের পরই দেশটিতে মুঘলদের ইতিহাস মুছে ফেলার দাবি ওঠে। তিনি তার বক্তব্যে ভারতের প্রাথমিক পর্যায়ের একটি বইয়ে দেশটির জাতীয় বীর শিবাজিকে অপমান করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন এবং ভারতের ধর্মীয় উত্তেজনাকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
এরপরই ভারতীয় অনলাইন অ্যাকটিভিস্টরা মুঘল সাম্রাজ্য বিষয়ক বিতর্ক সামনে নিয়ে আসেন। সামাজিকমাধ্যম টুইটারে ৩৫ হাজারেরও বেশি বার ব্যবহার করা হয় ‘রিমুভ মুঘলস ফ্রম বুকস’ কথাটি। অনেকে মুঘল সম্রাটদের জঙ্গি গোষ্ঠি ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সাথে তুলনা করেন।
একটি সামাজিকমাধ্যমে একজন তার মন্তব্যে লিখেছেন, ‘এটাই ভালো যে আমরা বইপুস্তক থেকে মুঘলদের মুছে ফেলি। তারা ছিল ভারতের আইএস।’ তবে আরেকজন অবশ্য বলেছেন, ‘মুঘলদের ইতিহাস বই থেকে মুছে দেয়ার দরকার নেই। তবে ভারতীয়দের ওপর তাদের নির্মমতা তুলে ধরতে হবে, যা আইএস আজকের দিনে করছে।’
মুঘলদের বিরুদ্ধে একটি বড় ধরনের প্রচারণা চলা সত্ত্বেও অনেকে অবশ্য এর বিরোধীতাও করেছেন। তাদের দাবি, মুঘলদের ইতিহাস সংরক্ষণ করা হোক। মুঘলদের ইতিহাস মুছে ফেলার বিরুদ্ধে তারা তাদের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তাজমহল, লালকেল্লাসহ ভারতের বেশ কিছু বিখ্যাত স্থাপনা মুঘলদের নির্মিত। আর এ কারণে মুঘলদের ইতিহাস মুছে ফেলার বিপক্ষে দেশটির জনপ্রিয় লেখক চেতন ভাগত। তিনি তার টুইটারে লিখেছেন, ‘আজ বলছেন ‘রিমুভ মুঘলস ফ্রম বুকস’ (মুঘলদের বই থেকে মুছে ফেলা হোক)। এরপর কী? লাল কেল্লা, তাজমহল ধ্বংস করে দেয়া হোক? আমাদের ঐতিহ্য ধরে রাখা দরকার, ধ্বংস করা নয়।’
স্থাপত্য এবং শিল্পে মুঘলদের অবদান ছাড়াও অনেকে মুঘল খাবারের জনপ্রিয়তার কথা উল্লেখ করেন। কারণ মুঘলদের সময়ে চালু করা খাবার ভারতে অত্যন্ত জনপ্রিয়। বিশেষ করে বিরিয়ানির মতো খাবারগুলো ভারতের ঐতিহ্যবাহী খাবার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। একজন কৌতুক করে তার টুইটারে লিখেছেন, ‘মুঘলদের ইতিহাস পাঠ্যবই থেকে বাদ দিন- ভালো কথা। তবে তাদের যেন রেস্তোরাঁ থেকে বাদ দেয়া না হয়।’
মন্তব্য চালু নেই