মুখমণ্ডল প্রতিস্থাপনে যুগান্তকরী সাফল্য
মানুষের মুখের বিভিন্ন অংশ প্রতিস্থাপনের মত বিরল ও জটিল অস্ত্রোপচার করেন অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছেন মার্কিন চিকিৎসক ডাক্তার সামীর মারদানি। এর মাধ্যেমে একজন মৃত ব্যক্তির নাক, চিবুক, মুখ, ঠোঁট, চোয়াল, গাল, এমনকী দাঁতগুলোও অন্য আরেক জন জীবিত মানুষের নষ্ট হওয়া মুখে প্রতিস্থাপনে সক্ষম হয়েছেন এই চিকিৎসক।
যা দেখে রোগী মিনেসোটার ২১ বছরের তরুণ অ্যান্ডি স্যান্ডনেস অভিভূত হয়েছে। তার নাক, চিবুক, মুখ, ঠোঁট, চোয়াল, গাল, এমনকী দাঁতগুলোও মৃত তরুণ ক্যালেন রসের। অন্য লোকের চেহারা নিয়ে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা অ্যান্ডি অস্ত্রোপচারের পর কথা বলতে সক্ষম ছিলেন না। কিন্তু আয়নায় তিনি নিজের মুখ দেখে চিকিৎসক ও পরিবারের সদস্যদের ধন্যবাদ জানান। এবং বলেন, “আমার প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছে।”
মিনেসোটাতেই থাকতেন মরণোত্তর দেহ দাতা ক্যালেন রস। ২০১৬ সালের জুনে আত্মহত্যা করেন তিনি। তখন তার স্ত্রী লিলি অন্তসত্ত্বা ছিলেন। আত্মহত্যার আগে তার প্রয়াত স্বামী ক্যালেন মরণোত্তর দেহ দানের ইচ্ছার কথা জানান। স্বামীর ইচ্ছাকে সম্মান জানাতে লিলি তার দেহ দান করতে রাজি হন, কিন্তু তার মুখমণ্ডল আরেকজনকে দেওয়ার ব্যাপারে তিনি মোটেও রাজি ছিলেন না। সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে লিলি লিলি জানান, আমি চাই নি পথ চলতে গিয়ে হঠাৎ দেখব আমার স্বামী ক্যালেন ঘুরে বেড়াচ্ছেন।’ তবে চিকিৎসকরা তাকে আশ্বাস দেন যে, স্যান্ডনেসের চোখ ও কপাল তার নিজেরই থাকবে। তার শুধুমাত্র চোখের নিচের অংশগুলো প্রতিস্থাপন করা হবে। যে কারণে ক্যালেনের সঙ্গে তার চেহারার মিল থাকবে না। এতেই রাজি হলেন লিলি।
মিনোসোটার রচেস্টারে মেয়ো ক্লিনিকে গত বছর জুন মাসে এই বিরল ও জটিল অস্ত্রোপচার করেন ডাক্তার সামীর মারদানি, যিনি মুখমণ্ডল পুর্নগঠন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এজন্য তাকে তিন বছরে ৫০টি মৃতদেহের ওপর অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে।
অপারেশনটি খুবই জটিল, কারণ নিজের স্নায়ু ব্যবহার করে অন্যের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের কাজ যাতে ঠিকমত করতে পারেন চিকিৎসককে সেই সম্বন্বয়ের কাজটা নিশ্চিত করতে হয়েছে- যেমন হাসা, চোখ খোলা বা বোজা, বা দাঁত ব্যবহার করা। স্যান্ডনেস এখনও লিলিকে দেখেন নি। কিন্তু তাকে চিঠি লিখে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
মরণোত্তর দেহ দানকারী দুই তরুণ একে অপরকে চিনতেন না, কিন্তু একটা ব্যাপারে তাদের মধ্যে মিল ছিল। তারা দুজনেই আত্মহত্যার জন্য নিজেদের গুলি করেছিলেন। ২০০৬ সালে অ্যান্ডি স্যান্ডনেসের আত্মহত্যার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ওয়াওমিং এলাকার এই তরুণ প্রাণে বেঁচে যান, কিন্তু মুখমণ্ডল সম্পূর্ণ বিকৃত হয়ে যায়। অনেকগুলো অস্ত্রোপচার করেও তার চেহারা চলনসই করতে পারেন নি চিকিৎসকরা। অ্যান্ডি তখন সবাইকে বলতেন শিকার করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় তার মুখ নষ্ট হয়ে গেছে।
সূত্র : বিবিসি
মন্তব্য চালু নেই