মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে খালেদার মন্তব্যে ভুল দেখছে না বিএনপি

প্রায় আট মাস আগে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধে প্রকৃত শহীদের সংখ্যা নিয়ে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে কোনো ভুল দেখছে না বিএনপি।

ওই ঘটনায় নড়াইলের আদালতে মামলা দায়েরের পর মঙ্গলবার বিএনপি নেত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ঘটনায় দলটি অভিযোগ করেছে, ‘বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করা হচ্ছে।’

বুধবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই বিষয়ে কথা বলেন দলটির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।

তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া একটি তথ্যভিত্তিক বাস্তব কথা বলেছিলেন যে, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন দলিল-দস্তাবেজে এবং পুস্তকে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য রয়েছে। এটা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। উনি এটা রেফারেন্সে বলেছেন।’

‘উনার বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো হয়েছে তাতে যদি আইনের বিষয়েও আসি, দেখা যাবে, সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ছাড়া কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রদ্রোহ বা মানহানির মামলা করতে পারেন না। অথচ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একজন কথিত মুক্তিযোদ্ধা নড়াইলের আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মঙ্গলবার ওই মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে,’ বলেন তিনি।

বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করে খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, বিএনপি মহাসচিবসহ সকল নেতার বিরুদ্ধে মামলার পাহাড় গড়ে উঠছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন।

গত বছরের ২১ ডিসেম্বর জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের এক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আজকে বলা হয়, এতো লক্ষ লোক শহীদ হয়েছেন। এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে যে, আসলে কত লক্ষ লোক মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। নানা বই-কিতাবে নানারকম তথ্য আছে।’

তার ওই বক্তব্যের পর বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

বিএনপি নির্মূল করতে শাসক দলের নেতারা প্রকাশ্যে বক্তব্য রাখছেন দাবি করে দলটির এই নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখনই দেশ পরিচালনায় আসে তখনই তাদের মনগড়া একটি গণতন্ত্রের ফর্মুলা আবিস্কার করে। বেশ কিছুদিন ধরে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা বারবার করে একটি কথা বলে আসছেন, বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করা হবে, বিএনপিকে নির্মূল করা হবে, বিএনপিকে এদেশে আর কোনোদিনই ক্ষমতায় আসতে দেওয়া যাবে না, হবে না।’

‘এই যে হুমকি-ধমকি গণতন্ত্রের কোন ভাষায় পড়ে আমরা বুঝি না। তবে ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী সংজ্ঞার মধ্যে নি:সন্দেহে পড়ে,’ বলেন তিনি।

জানিয়ে আলাল বলেন, বিএনপিকে নির্মূল করা যাবে না। যতই নির্মূল করার চিন্তা করেন না কেন, ইতিহাস বলে, সেটা সম্ভব নয়। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান শাহাদৎবরণের পর বিএনপি আবার সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছে। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে জেলে নিয়ে য়াওয়ার পরও বিএনপি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে। এখনও করে যাচ্ছে।’

বিএনপিকে নির্মূলের চিন্তা থেকে সরে ‘গণতন্ত্রের পথে’ আসতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান দলটির এই যুগ্ম মহাসচিব।

‘বিএনপিকে নির্মূল করার চিন্তা থেকে সরে এসে সঠিক পথে গণতন্ত্রের বহু দলের ও মতের কথা বলার যে অধিকার, সেই সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার সুযোগ দিন। তা না হলে স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদি হিসেবে যে আখ্যা পেয়েছেন তার একটি অনুকুল জবাব বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকে সময় মতো পাবেন,’ বলেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স, প্রশিক্ষন বিষয়ক সম্পাদক এবি এম মোশাররফ হোসেন, সহ.সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল খান, সহ.দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন, বেলাল আহমেদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য জামাল শরীফ হিরু।



মন্তব্য চালু নেই