মিতু হত্যা : রহস্য উন্মোচনে মুসাই শেষ ভরসা
স্ত্রী মিতু হত্যাকাণ্ডে সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে নানা কারণে সন্দেহ করছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ। তবে সন্দেহ করলেও এ ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত কোনো তথ্যপ্রমাণ এখনও মেলেনি। তাই গ্রেফতার বা তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেয়া যাচ্ছে না। সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার মঙ্গলবার দুপুরে বলেন, যে মুসার নেতৃত্বে মিতু খুন হয়েছেন সেই মুসাই এখনও তাদের কাছে বড় ভরসা। মুসাকে পাওয়া গেলেই এ মামলার তদন্তে বড় ধরনের নাটকীয় পরিবর্তন আসতে পারে। এর আগে নয়। তাই মুসাকেই হন্য হয়ে খুঁজছেন তারা। কেননা কিলিং মিশনে অংশ নেয়া আসামিদের অনেকে ১৬৪ ধারায় প্রদত্ত জবানবন্দিতে বলেছেন, মুসার নির্দেশেই তারা টাকার বিনিময়ে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে। কিন্তু বাবুল আক্তারের বড় সোর্স হওয়া সত্ত্বেও মুসা কার নির্দেশে বাবুল আক্তারের স্ত্রীকে হত্যা করল সে বিষয়টি তারা জানতে চায়। তাই মুসাকে পাওয়া গেলেই সেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে। তখন জানা যাবে মুসার নির্দেশদাতা বাবুল আক্তার না অন্য কেউ।খবর যুগান্তরের।
একদিকে স্ত্রী খুন হওয়া, অন্যদিকে পুলিশ বাহিনী থেকে অব্যাহতি দেয়ার কারণে বাবুল আক্তারের সব কূল গেল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। মঙ্গলবার পুলিশ বাহিনীতে বিদায় ঘণ্টা বাজার মধ্য দিয়ে মূলত বাবুল আক্তারের ভবিষ্যৎই এক রকম অন্ধকারে পতিত হয়েছে বলেও তারা মন্তব্য করেন।
এদিকে কেন বাবুল আক্তারকে স্ত্রী হত্যায় পুলিশ সন্দেহ করছে- এমন প্রশ্নের জবাবে সিএমপি কমিশনার বলেন, নানা কারণ আছে। বাবুল আক্তার একজন চৌকস অফিসার। তিনি চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ছিলেন। অনেক বড় বড় ঘটনা উদঘাটন করেছেন। অনেক অনাবিষ্কৃত ও চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার ক্লু উদঘাটন করেছেন। কিন্তু নিজের স্ত্রী হত্যাকাণ্ডের ক্লু উদঘাটনে তাকে শুরু থেকেই তৎপর দেখা যায়নি। মামলা দায়েরের পর একবারের জন্যও তিনি চট্টগ্রাম আসেননি। প্রথমদিকে স্ত্রী হত্যার কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকলেও তিন মাস গত হয়েছে। এরই মধ্যে তিনি চাইলে মামলার আইও বা তদন্তকারী সংস্থাকে সহযোগিতা করতে পারতেন। তিনি সেটিও করেননি। এটিই অস্বাভাবিক। তাদের সন্দেহ যদি সঠিক হয় এবং স্ত্রী হত্যায় জড়িত থাকার উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায় তবে বাবুল আক্তারকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। কেননা কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
মুসাকে বাঁচিয়ে রাখা হলে অনেক রাঘব বোয়ালের নাম বের হয়ে আসবে- এ কারণে তাকে আটকের পর গুম করেছে পুলিশ। তাই মুসাকে আর পাওয়া যাবে না। তাছাড়া মিতু হত্যার নির্দেশদাতা সম্পর্কে কিলিং স্কোয়াডের সদস্য রাশেদ ও নবীও অনেক কিছুই জানতেন। কিন্তু তারাও কথিত ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন বলে মুসার স্ত্রী পান্না আক্তার ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রের এমন অভিযোগ।
এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, এসব অভিযোগ সঠিক নয়। কতজন কত কিছুই বলবে। এসব গুজবে কান দিয়ে লাভ নেই। তারা চান মিতু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের মুখোশ উন্মোচিত হোক।
যদি জড়িত নাই থাকেন তবে বাবুল আক্তারের পদত্যাগপত্র গৃহীত হল কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘বাবুল আক্তার পদত্যাগপত্র কেন দিলেন সেটা যেমন তার ব্যক্তিগত বিষয়, তেমনি পুলিশ হেডকোয়ার্টার কোন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করল সেটিও পুলিশ হেডকোয়ার্টারের বিষয়। এ নিয়ে তার মন্তব্য করার কিছু নেই।’ তিনি বলেন, ‘আমরা মামলার সুষ্ঠু তদন্ত করছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে খুঁজে বের করার চেষ্টাও করছি। এতে যদি বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় অবশ্যই তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিএমপির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মো. কামরুজ্জামান বলেন, ঘটনার পর তারা বিভিন্ন সময়ে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জানতে বাবুল আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু বাবুল আক্তার নিজে থেকে কখনোই যোগাযোগ করেননি। বাবুল আক্তারকে গ্রেফতার বা তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে কামরুজ্জামান বলেন, এটা পুলিশ হেডকোয়ার্টারের বিষয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ মামলার তদন্ত কখন শেষ করা যাবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাবে না।
প্রসঙ্গত, বুধবার বিকালেও মামলার আইও কামরুজ্জামান সিএমপি কমিশনারের সঙ্গে মিতু হত্যা মামলার তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেন।
গত ৫ জুন নগরীর জিইসি মোড়ে প্রকাশ্য দিবালোকে এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে গুলি করে ও ছুরিকাঘাতে খুন করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় বাবুল আক্তার বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। প্রথমে জঙ্গিরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ধারণা করেছিল পুলিশ। ঘটনার তিন দিন পর ৮ জুন হাটহাজারী থেকে আবু নছর গুন্নু নামে মাজারের এক খাদেমকে এ মামলায় গ্রেফতার করে পুলিশ। ১১ জুন নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় শাহজামান রবিন নামে অপর একজনকে। মোবাইল ট্র্যাকিং ও ভিডিও ফুটেজে ঘটনাস্থলে তাদের থাকার তথ্য পেয়েই গ্রেফতার করা হয় বলে পুলিশ জানায়। ঘটনার ২১ দিন পর ওয়াসিম ও আনোয়ার নামে কিলিং মিশনের দুই সদস্য গ্রেফতার হলে ঘটনার আদ্যোপান্ত বের হতে থাকে।
একে একে মিতুর কিলিং মিশনে অংশ নেয়া সবার নাম প্রকাশ পায়। আর এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে স্বামী বাবুল আক্তারই সম্পৃক্ত ছিলেন এমন অভিযোগ ওঠে খোদ পুলিশের বিভিন্ন মহল থেকে। একপর্যায়ে বাবুল আক্তারকে ২৪ জুন আটক করে ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তাকে ঘিরে সন্দেহের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
মন্তব্য চালু নেই