মিঠাপুকুরে মুখ দিয়ে লিখে জেএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে জুবায়ের
মো: শামীম আখতার, উপজেলা প্রতিনিধি, মিঠাপুকুর (রংপুর) : রংপুরের মিঠাপুকুরে শারিরিক প্রতিবন্ধকতা দমাতে পারেনি জেএসসি পরীক্ষার্থী জুবায়েরকে। চলতি জেএসসি পরীক্ষায় বালারহাট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে জুবায়ের হোসাইন খাতায় লিখছে মুখ দিয়ে। ইতোমধ্যে, বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষায় ভাল লিখেছে সে। পিএসসিতে মুখ দিয়ে লিখেই পেয়েছিলো জিপিএ-৪ পয়েন্ট ২৫।
জুবায়ের হোসাইন উপজেলার বালারহাট ইউনিয়নের হযরতপুর গ্রামের হত দরিদ্র কৃষক জাহিদ সরওয়ারের ছেলে। ২ ভাই ১ বোনের মধ্যে জুবায়ের দ্বিতীয়। বড়ভাই উমাজুল জাদিদ উল্লাস স্নাতক শেষে বে-সরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করছেন। ছোট বোন জান্নাতুল ফেরদৌস জুই পড়ছে নবম শ্রেণীতে। তাদের সাথে পাল্লা দিয়ে লেখাপড়ায় বেশ ভাল করছেন জুবায়ের।
জুবায়ের হোসাইনের বাবা জাহিদ সরওয়ার বলেন, মুখে কলম দিয়ে লেখার অভ্যাস করতে সময় লেগেছে জুবায়েরের। প্রথমে মুখে কলম নিয়ে দাত দিয়ে চেপে ধরে সে। এরপর টার্গেট মত স্থানে লিখতে কোন সমস্যা হয়না তার। তিনি আরও বলেন, খাতায় লেখা শেখাতে জুবায়েরের প্রায় বছরখানেক সময় লেগেছে। এখন সে স্বাভাবিক মানুষের মত মুখে কলম নিয়ে লিখতে পারে। ছোট বোন জান্নাতুল ফেরদৌস জুই বলেন, আমরা জুবায়েরকে কখনই প্রতিবন্ধি মনে করি না। সে স্বাভাবিকভাবে জীবন যাপন করতে না পারলেও লেখাপড়ায় বেশ পাকা।
মা উম্মে কুলছুম বলেন, ছোট থেকেই জুবায়ের লেখাপড়ার প্রতি বেশ ঝোক ছিল। বড় ভাইয়ের বই-খাতাগুলোর দিকে সব সময় চেয়ে থাকতো। কিন্তু, হাত দিয়ে ধরতে পারতো না। আমরা পরিবারের লোকজনেরা সিধান্ত নিলাম তাকে স্কুলে ভর্তি করার জন্য। তিনি আরও বলেন, জুবায়ের হাটা-চলা করতে পারেনা। ভ্যান গাড়িতে করে সে স্কুলে যাওয়া-আসা করে। স্কুলের খাতায় লেখার সময় মুখে কলম নিয়ে খাতায় লিখে সে।
বালারহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে জেএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে জুবায়েরের পরীক্ষার জন্য আলাদা কক্ষের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সে কক্ষে পাতানো রয়েছে একটি বেড় ও বালিশ। বালারহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব আজিজুল ইসলাম বলেন, জুবায়ের হোসাইন আলাদা কক্ষে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। শিক্ষাবোর্ডের অনুমতি নিয়ে তাকে ৩০ মিনিট অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, জুবায়েরেরর শিক্ষা গ্রহনের প্রতি বেশ আগ্রহ। আমি আশাকরি সে ভাল করবে। ঠিকমত কথা বলতে না পারলেও ভাঙ্গা ভাঙ্গা শব্দে জুবায়ের হোসাইন বলেন, আমি লেখাপড়া শিখে মানুষেরমত মানুষ হতে চাই। উপজেলা নির্বাহি অফিসার মামুন-অর-রশীদ বলেন, শারিরিক প্রতিবন্ধকতাও জুবায়েরকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। তার উজ্বল ভবিষ্যত কামণা করছি।
মন্তব্য চালু নেই