মিঠাপুকুরে ফেন্সিডিল ও ইয়াবার পাইকারি বাজার!

গাঁয়ের মেঠোপথ এখন নানা ব্র্যান্ডের মার্সিডিজ জীপ, কার, মাইক্রো আর মোটরবাইকের শব্দে মুখর। প্রতিদিন সকাল খেকে মধ্যরাত অবধি শোঁ শোঁ শব্দে ধূলি উড়িয়ে আসছে শত শত তরুণ-তরুণী, থামছে দু’চার কিংবা মিনিট পাঁচেকের জন্য। থেমে থাকা গাড়ি কিংবা মোটরবাইকের সামনে এগিয়ে আসছে বিভিন্ন বয়সের এক কিংবা দুজন শিশু-কিশোর। ঘটছে কিছু একটার হাত বদল। এর পর নিমিশেই আবার ধূলি উড়িয়ে হাওয়া। এমন দৃশ্যপট রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার প্রত্যন্ত জনপদ শুকুরেরহাট ও বৈরাগীগঞ্জ এলাকায়। আর এ সবকিছু-ই ঘটছে সর্বনাশা মাদককে ঘিরে। দেশজুড়ে বিখ্যাত হাঁড়িভাঙ্গা আম আর সুগন্ধি চাল-আলুর জন্য বিখ্যাত এই শুকুরেরহাট এখন পরিণত হয়েছে মাদকের স্বর্গরাজ্যে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন এখানে খুচরো এবং পাইকারি মিলে অন্তত ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার মাদক কেনা-বেচা হচ্ছে। মহানগরী থেকে ১৭ কিঃমিঃ এবং মিঠাপুকুর থানা সদর থেকে ৬ কিঃমিঃ দূরুত্বের এই হাট এবং এর পার্শ্ববর্তী স’মিল, পাম্পের মোড়, গোশতহাটি, নেহালের কাঁঠাল, পল্লী বিদ্যুত অফিস, হাট সংলগ্ন গেনারপাড়, তিলকপাড়া, দুর্গাপুর, চেংমারী, আখিরারহাট, নিঝাল মোসলেম বাজার, তালিমগঞ্জ, শাল্টিরহাট, মরাহাটি, বালুয়া, বৈরাগীগঞ্জ এসব এলাকাই মূলত মাদক বিক্রয়ের নিরাপদ আস্তানা। এসব এলাকায় দাঁড়ালেই ‘আলাদীনের চেরাগে’র মতোই হাজির হয় বিক্রেতারা। মূল বিক্রয়কারীরা নিজেদের অন্তরালে রেখে সহকারী হিসেবে ব্যবহার করছেন স্থানীয় দরিদ্র শিশু-কিশোরদের। মূলত এ শিশুরাই গ্রাহকের হাতে তুলে দিচ্ছে নেশার সামগ্রী। শুধু তাই নয়, স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নির্লিপ্ততায় কৃঞ্চনগরের রাঙ্গামাটি, কদমতলা, চড়ারহাট, শাল্টীরহাট, তালিমগঞ্জে নিয়মিত বসছে জুয়ার আসর। এসব আসরে সর্বস্ব হারিয়ে অনেকে মাদক ব্যবসা, সড়ক ডাকাতি, চুরিসহ নানা অপরাধ কর্মে জড়িয়ে পড়ছে।

এলাকাবাসী জানায়, আগে থেকেই এখানে ফেন্সিডিল কেনাবেচা হয়ে আসলেও ইয়াবা ট্যাবলেটের প্রসার ঘটেছে মাস ছয়েক হয়। মেলে চোলাই মদ আর গাঁজাও। আর সন্ধা হলেই সক্রিয় হয়ে ওঠে জুয়াড়িরা। ভয়ঙ্কর এই ইয়াবা স্থানীয়ভাবে ‘বাবা’ নাম ধারণ করে এখান থেকেই ছড়িয়ে পড়ছে জেলার বিভিন্ন স্থান ছাড়াও আশপাশের জেলাগুলোতে। প্রতিদিন রংপুর শহর ও বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা কার, মাইক্রো, মোটরসাইকেল নিয়ে দলে দলে আসছেন এখানে। কেউবা কোথাও আশপাশে বসেই সেরে ফেলছেন মাদক সেবনের কাজটি, কেউবা আবার নিয়ে যাচ্ছেন চাহিদামতো। তারা জানায়, আগে তারা মাদক ব্যবসায় আপত্তি ও প্রতিরোধ করলেও এখন করেন না।  কারণ এই ব্যবসায়ীরা এখন অনেকটাই সংগঠিত এবং অপ্রতিরোধ্য। এসব ব্যবসায়ী এবং সরবরাহকারীদের প্রত্যেকের নামে মিঠাপুকুর থানা ছাড়াও আশপাশের থানায় গ্রেফতারী পরোয়ানাসহ ৭-৮ টা পর্যন্ত মামলা রয়েছে। এমনকি এদের কেউ পুলিশ পেটানো মামলারও আসামি।

ইয়াবা-ফেন্সিডিলের উৎস মূলত ভারত। আসছে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ, হিলি ও ফুলবাড়ী সীমান্ত দিয়ে। মিঠাপুকুর-সাহেবগঞ্জ-মধ্যপাড়া-ফুলবাড়ী পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়কটি মাদক ব্যবসায়ীদের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। নবাবগঞ্জের ব্যপারীপাড়ার কয়েক বড় ব্যবসায়ী নির্ভয়ে মাদকের বড় চালান রাতের আঁধারে পৌঁছে দিচ্ছে শুকুরেরহাটের ব্যবসায়ীদের কাছে। মোবাইল ফোনে চাহিদা এবং বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠালেই কয়েক ঘন্টার মধ্যে চলে আসে চালান।

মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রবিউল আলম জানান, প্রতিদিন মাদকের বিরুদ্ধে মামলা এবং অভিযান অব্যাহত আছে।



মন্তব্য চালু নেই