মিঠাপুকুরে ধান কাটার মৌসুমে কৃষি শ্রমিকের তীব্র সংকট

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে এখন বাতাসে দোল খাচ্ছে পাকা সোনালি বোরো ধান। কিন্তু কৃষি শ্রমিকের অভাবে সে ধান কেটে গোলায় তুলতে পারছেন না কৃষকরা। যদিও পাওয়া যায় তাও আবার দাম বেশি। প্রতি বিঘা জমির ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা দাবি করছেন কৃষি শ্রমিকরা।

উপজেলা কৃষি অফিসের দেয়া তথ্য অনুযায়ী এ বছর মিঠাপুকুরে ৩১ হাজার ৬’শ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। গত বারের চাইতে এবার ফলনও হয়েছে বেশি। কিন্তু ধান পাকার পর থেকে দুশ্চিন্তায় পড়েছে উপজেলার কৃষকরা। ধান কাটার শ্রমিক না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। কৃষকরা জানায়, ধান কাটার শ্রমিকের অভাবে পাকা ধান ক্ষেত থেকে কাটতে না পারায় ঝড়, শিলাবৃষ্টি আর পাখির উপদ্রবে তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শ্রমিক পাওয়া গেলেও পারিশ্রমিক অনেক বেশি। সামর্থ্যবান কৃষকরা তাদের জমির ধান কাটতে পারলেও স্বল্প আয়ের কৃষকরা চরম বিপাকে পড়েছে।

উপজেলার রাণীপুকুরের লালচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক তোজাম্মল হোসেন জানান, এ বছর ৫ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। জমি চাষ, চারা রোপন, জমিতে পানি দেওয়া, নিড়ানি (আগাছা পরিস্কার) ধান কাটাসহ বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ৬ হাজার টাকা। তার ওপর এ বছর পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বাড়তি সেচ খরচ দিতে হয়েছে। এ ছাড়া সার ও কীটনাশকও রয়েছে। সবমিলিয়ে তার ৫ বিঘা জমি চাষ করতে মোট খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। এ বছর যদি ধানের দাম ভালো হয় তাহলে লাভের মুখ দেখা যাবে বলে জানান তিনি। কৃষক মহুবার হোসেন বলেন, ৩ বিঘা জমির ধান কাটার জন্য শ্রমিক পাচ্ছি না। সময় মতো যদি ধানকেটে ঘরে তুলতে না পারি তাহলে ধান নষ্ট হয়ে যাবে। তাই বাধ্য হয়ে বেশি দামে শ্রমিক নিতে হয়। গ্রামে যারা ধান কাটার কাজ করতেন তারা পেশা বদল করেছে। কেউ কাজের সন্ধানে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট অঞ্চলে পাড়ি জমিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে চারা রোপন থেকে ধান কাটা পর্য়ন্ত যে পরিমাণ খরচ হয়, ধান বিক্রি করে তারা লাভের মুখ দেখবেন কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খোরশেদ আলম জানান, সবেমাত্র ধান কাটা শুরু হয়েছে। শুরুতেই এ রকম সমস্যা দেখা দেয়াটা চিন্তার বিষয়। তবে, অত্যান্ত আধুনিক উপায়ে ধান কাটা ও মাড়াই যন্ত্র যে কোন মূল্যে কৃষকদের সরবরাহ দেয়া প্রয়োজন। তাহলে এই সমস্যা থেকে অনেকটাই পরিত্রান পাবে কৃষকরা।



মন্তব্য চালু নেই