মিঠাপুকুরে কৃষি জমির টপ সয়েল দিয়ে ইট তৈরী : ফলনবিপর্যয়ের আশংকা

রংপুরের মিঠাপুকুরে ভাটা মালিকরা ইট তৈরীর কাজে কৃষি জমির টপ সয়েল ব্যবহার করার কারনে উপজেলায় কৃষিক্ষেত্রে বড়ধরনের বিপর্যয়ের আশংকা করছেন কৃষিবিদরা। কতৃপক্ষের নাকের ডগার উপর দিয়ে প্রকাশ্যে অবৈধ এ কার্যকলাপ চললেও রহস্যজনক কারনে তাদের টনক নড়ছেনা। সাধরনত গ্রামীন কৃষকদের অসচ্ছলতার সুযোগ নিয়ে ভাটা মালিকরা কৃষি জমির টপ সয়েল বিক্রি করতে উৎসাহিত করে থাকেন।

ইট ভাটার সাথে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, এ কাজে কৃষি জমির মালিকদের বাগিয়ে আনার জন্য বিভিন্ন এলাকায় ভাটা মালিকদের কমিশন এজেন্ট রয়েছে। তারা প্রথমে এলাকা ঘুরে-ঘুরে কৃষি জমির মালিকের তালিকা তৈরী করেন। তাদের তৈরী তালিকা অনুযায়ী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জমির মালিকদের প্রলুব্ধ করে ৪ থেকে ৮ ইঞ্চি টপসয়েল ক্রয় করা হয়। এজন্য জমির মালিকদের অর্থও প্রদান করা হয়।

বর্তমানে জমিতে ফসল ফলানো লাভজনক না হওয়ায় অনেক কৃষকই টপসয়েল বিক্রি করছেন নির্দ্বিধায়। যা ইট তৈরী ও গর্ত ভরাটের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। কৃষিবিদদের মতে, জমির টপ সয়েলের ৪ থেকে ৬ ইঞ্চি মাটিতে পুষ্টি বেশী থাকে, যা ফসল উৎপাদনে কার্যকর ভূমিকা রাখে। বর্তমানে প্রতিবছর যে হারে কৃষি জমির টপ সয়েল অপসারন করে ইটভাটা সহ অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে এতে করে প্রতিনিয়ত জমির পুষ্টি ও উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। এই ক্ষমতা বাড়াতে কৃষক জমিতে রাসায়নিক সার প্রয়োগের মাত্রা কয়েকগুন বাড়িয়ে দিলেও ভাল ফলাফল পাচ্ছেন না। জমির টপ সয়েল অপসারন অব্যাহত থাকলে সার প্রয়োগ করার পরও ভবিষ্যতে ওইসব জমি পরিত্যক্ত হবার আশংকা রয়েছে। ইটভাটার প্রতিযোগীতা শুরু হওয়ায় মিঠাপুকুর উপজেলায় এ বছর ভাটার সংখ্যা ২২ টিতে দাঁড়িয়েছে। কয়েকটি ছাড়া এসব ইটভাটার বৈধ কোন কাগজপত্র নেই।Mithapukur Photo.1

অথচ অনেক স্থানেই ভাটা তৈরীর আগে এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশসহ অবৈধ ভাটাবন্ধের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও কোন ফল পাননি। পরিবেশ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে লোকালয়েও ইটভাটা স্থাপিত হচ্ছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলায় অবৈধভাবে গড়ে তোলা ওইসব ভাটায় ইট তৈরীর কাজে বিপুল পরিমান মাটির দরকার হয় প্রতি বছর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভাটা মালিক জানান, প্রতি বছর ইট তৈরীর জন্য মাটির প্রয়োজন হয়। এই প্রয়োজন মেটাতে আমাদের অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয়।

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, ভাটায় ইট তৈরীর জন্য বিস্তীর্ণ ফসলী জমিতে মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। প্রতিদিন অসংখ্য শ্রমিক মাটি কেটে ভ্যান, বড় বড় ট্রলী ও ট্রাক্টর যোগে বিভিন্ন ইটভাটায় পৌঁছে দিচ্ছে। একই চিত্র গোটা উপজেলার।

এ ব্যাপারে জমির মালিকদের সাথে কথা হলে তারা জমির মাটির উপরের অংশ অপসারন করলে উর্বরা শক্তি কমে যায়- এ কথা স্বীকার করে বলেন, বর্তমানে আবাদ করার চেয়ে মাটি বিক্রি করা অনেক লাভজনক। কারণ এতে কোন বিনিয়াগ এবং শ্রম নেই। ৫০ শতক জমি থেকে বছরে ১০-১২ হাজার টাকার বেশী আয় করা যায় না, কিন্তু মাটি বিক্রি করলে ২০/২২ হাজার টাকা পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহা. হারুন-অর-রশীদ জানান, কৃষকরা যাতে জমির টপসয়েল বিক্রি করতে বিরত থাকে সে বিষয়ে কৃষি অফিসারের সাথে কথা বলব। আর যারা পরিবেশ আইন ও ভূমি নীতিমালা লংঘন করছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।



মন্তব্য চালু নেই