মায়ের দেওয়া রাস্তার নামফলক ভেঙে দিলেন এমপি পুত্র
সালথা, ফরিদপুর থেকে : ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়ন হতে সদরপুর উপজেলার হাটকৃষ্ণপুর পর্যন্ত যাতায়াতের ‘ওয়াহেদ সরদার সড়ক’ এর নামফলক ভেঙে ফেলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ছেলে আয়মন আকবর চৌধুরী বাবলুর নেতৃত্বে সড়কটির নামফলক ভেঙে সেখানে নতুন একটি নামফলক স্থাপন করা হয়েছে। স্বাধীনতার পর হতে সরদার বাড়ি সড়ক হিসেবে পরিচিত এ সড়কটি আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরপর আব্দুল ওয়াহেদ সরদার সড়ক নামে পরিচিত।
২০০৯ সালে নগরকান্দা উপজেলা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সড়কটিকে আব্দুল ওয়াহেদ সরদার সড়ক নামে নামকরণ করা হয়।আর ২০১৪ সালে সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী নিজে উপস্থিত থেকে ওয়াহেদ সরদার সড়কের নামফলকটি স্থাপন করেন।ভেঙে ফেলা ওই নামফলকে ওয়াহেদ সরদারের নামের পাশে সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর নামও লিখিত ছিল।মায়ের হাতের স্থাপিত নামফলক ছেলের হাতে ভেঙে ফেলার এ ঘটনা পুরো নগরকান্দা উপজেলায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।বিষয়টি বৃহস্পতিবার টক অব দ্য নগরকান্দায় পরিণত হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ওয়াহেদ সরদারের নামে সড়টির নামফলক ভেঙে ফেলার জন্য তালমার মোড়ে সকালে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদ উপনেতার ছেলে আয়মন আকবর চৌধুরী বাবলু। দুপুরে সমাবেশ শেষে বাবলু চৌধুরীর নেতৃত্বে হাতুড়ি শাবল নিয়ে বিক্ষুব্ধরা নামফলক ভেঙে সেখানে বিশ্ব জাকের মঞ্জিল সড়ক নামে সড়কটির নতুন নামফলক স্থাপন করে।
জানা যায়, নগরকান্দার প্রভাবশালী সরদার পরিবার সূদীর্ঘকাল আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত। এই পরিবারের কর্ণধার ওয়াহেদ সরদারের বড় ছেলে মনিরুজ্জামান সরদার ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের বিগত কমিটির সহ-সভাপতি এবং নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন।তিনি আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পরপর তিনবার নগরকান্দা উপজেলা চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন। ওযাহেদ সরদারের সেঝো ছেলে সরদার বদিউজ্জামান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক। আরেক ছেলে সরদার সাইফুজ্জামান বুলবুল ছাত্রলীগ থেকে ৮২ সালে রাকসুর নির্বাচিত বার্ষিকী সম্পাদক ছিলেন এবং বর্তমানে নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। আর একেবারে ছোট ছেলে সরদার আশরাফুজ্জামান বাদল নগরকান্দা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। পারিবারিকভাবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত এই পরিবারটিকে স্বাধিনতাবিরোধী আখ্যা দিয়েই বৃহস্পতিবার সড়কটির নামফলক ভেঙে ফেলা হল।
এব্যাপারে মনিরুজ্জামান সরদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার পিতা ওয়াহেদ সরদারকে স্বাধীনতার পক্ষের প্রাণ ছিলেন উল্লেখ্য করে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তার পিতার অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপই সংসদ উপনেতা তার পিতার নামে সড়কটির নামকরণ করেছিলেন। তবে বর্তমানে ডাঙ্গি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কালামের ষড়যন্ত্রের কারণেই বাবলু মামা এরকম একটি জঘণ্য কাজ করতে পারলেন।’ অপরদিকে সাইফুজ্জামান বুলবুল সরদার এ কাজের দরুন উল্টো আয়মন আকবর চৌধুরীকে রাজাকার হিসেবে
উল্লেখ করে বলেন, বাবলু মামার আশেপাশে এখন আর প্রকৃত আওয়ামী লীগাররা নয়, আওয়ামী লীগ বিরোধীরা আছে।
উল্লেখ্য, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর নির্বাচনী এলাকা নগরকান্দা-সালথা উপজেলায় আয়মন আকবর চৌধুরী সকলের কাছে ‘মামা’ হিসেবেই পরিচিত।
মন্তব্য চালু নেই