মাহীর ভূমিকায় বিকল্পধারায় ক্ষোভ
বিকল্পধারার যুগ্ম-মহাসচিব ও ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মাহী বি. চৌধুরীর সাম্প্রতিক ভূমিকায় বিকল্পধারার নেতারাই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার মাহী বি চৌধুরী সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও পরাজয় মেনে নিয়েছি। কিন্তু ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছি।’
বিকল্পধারার নেতারা মনে করছেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর পরিচ্ছন্ন ইমেজ নিয়ে গড়ে ওঠা বিকল্পধারা বাংলাদেশ দলটির রাজনীতিতে যে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ছিল। মাহী বি. চৌধুরীর সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে তা ম্লান হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিকল্পধারার একজন যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘মাহী সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু দলের কোন মতামত নেওয়া হয় নাই। তিনি নির্বাচনে পরাজয় মেনে নিয়ে আবার ফলাফল প্রত্যাখ্যান করায় দলের ভাবমূর্তিও নষ্ট হচ্ছে। কেননা, নির্বাচন মেনে নিয়ে ফলাফল প্রত্যাখ্যান দ্বিচারিতা ছাড়া আর কিছুই না।’
বিকল্পধারার যুগ্ম মহাসচিব আব্দুর রউফ মান্নান বলেন, ‘মাহী বি চৌধুরী আমাদের দলের যুগ্ম মহাসচিব। উনি নির্বাচনে প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা করার পূর্বে আমাদের মতামত নেননি। আমরা উনাকে এসব নিয়ে বলেছিলাম। কিন্তু উনি বলেছেন, আমি আমার লোক নিয়েই নির্বাচন করব।’
দলের মতামত না নিয়ে সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ, পরে ফলাফল প্রত্যাখ্যানের ঘটনায় নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ প্রসঙ্গে মাহী বি. চৌধুরী রবিবার বলেন, ‘আমি তো দলের প্রার্থী ছিলাম না, একটি অনলাইন সংগঠনের সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করেছি। আমি বিকল্পধারার সমর্থন নেইনি।’
নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যা্খ্যান প্রসঙ্গে সাবেক এ সংসদ সদস্য বলেন, ‘আমি নির্বাচন মেনে নিয়েছি। কিন্তু ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছি। আমরা একটি জরিপ করে দেখেছি, নির্বাচনে আমরা পরাজিত হলেও আমাদের আরও বেশি ভোট পাওয়ার কথা ছিল। তবে এই নির্বাচন আমরা প্রত্যাখ্যান করছি না।’
‘বিকল্পধারার নেতারা এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন’— এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী জানতে চাইলে মাহী প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘আমি আবারও বলছি, দল নয়, একটি অনলাইন সংগঠনের প্রার্থী ছিলাম আমি। এর বেশি কিছু আমি বলব না।’
বিকল্পধারার একজন শীর্ষ নেতা রবিবার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বিকল্পধারার নেতাদের মতামত না নিয়ে সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে অংশ নেওয়া ও নির্বাচনের আগে হঠাৎ করেই আহত হয়ে অন্যদল সমর্থিত প্রার্থীর নামে হামলার অভিযোগ করার বিকল্পধারার ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। দলের নেতারাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মাহী যতই বলুক, তিনি দলের সমর্থন নেননি। কিন্তু মাহী তো বিকল্পধারার প্রতিষ্ঠাতা বি. চৌধুরীর সন্তান। এমনকি দলের মুখপাত্র ও যুগ্মমহাসচিব।’
প্রসঙ্গত, সিটি নির্বাচনের দুইদিন আগে ২৬ এপ্রিল দুর্বৃত্তের হামলায় আহত হওয়ার পর মাহী বি. চৌধুরী ঢাকা উত্তরে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ আনেন বলে দাবি করেছিলেন ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক নেতা অভিযোগ করেন, মাহী বি. চৌধুরী সরকারের এজেন্ট হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘মাহীর বিষয়ে আমি আর কিছুই বলতে চাই না। সে আমাদের দলের কেউ না। তার বিষয়ে আমি কোনো কিছুই বলতে চাই না।’
বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. নুরুল আমিন বেপারি বলেন, ‘মাহী বি. চৌধুরী তো আমাদের মতামত নিয়ে প্রার্থী হননি। দলের কেউ তার সঙ্গে প্রচারণাতেও নামেনি। তার বিষয়ে আর কিছু বলতে চাই না।’দ্য রিপোর্ট
মন্তব্য চালু নেই