কে পাচ্ছেন ঢাকা উত্তরে বিএনপির সমর্থন
মাহিতে সিদ্ধান্তহীনতা, আলোচনায় ববি হাজ্জাজ
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে সমর্থন দেওয়া নিয়ে এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে বিএনপি জোট। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুর প্রার্থিতা চূড়ান্তভাবে বাতিলের পর যোগ্য প্রার্থীর সঙ্কটে পড়েছে তারা।
আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল রাজনীতিতে নতুন হওয়ায় বিকল্প হিসেবে ‘বিকল্প ধারা বাংলাদেশের’ যুগ্ম-মহাসচিব মাহি বি চৌধুরীকে প্রার্থী করার চিন্তা-ভাবনা চলছে বিএনপিতে। তবে তাতে নাখোশ জোটভুক্ত কেউ কেউ।
ইতোমধ্যে ২০ দলীয় জোটের কয়েকজন শরিক, মাহির ব্যাপারে তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছেন। এমনকি খোদ বিএনপিতেই একটি অংশ মাহি বি চৌধুরীকে সমর্থন দিতে চাচ্ছেন না।
মাহির বিকল্প হিসেবে আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়ালকে নিয়েও বিএনপির ছোট একটি অংশ আলোচনা করছে। তবে বড় অংশই তাকে আমলে নিতে চাচ্ছে না।
এ অবস্থায় বিএনপি জোটের শীর্ষ মহলে নতুন আরেকটি নাম আলোচনায় এসেছে। আর তিনি হলেন, ধনকুবের প্রিন্স মুসা বিন শমসেরের ছেলে ববি হাজ্জাজ। জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিশেষ উপদেষ্টার পদ থেকে কিছুদিন আগে বহিষ্কৃত হয়েছেন ববি।
বিএনপি জোটের শরিক এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব শাহাদত হোসেন সেলিম বলেন, ‘মাহি বি চৌধুরীর সমর্থন মেনে নেবে না এলডিপি। আমরা জাতীয় নির্বাচনের জন্য বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধেছি। শেষ পর্যন্ত যদি তারা (বিএনপি) মাহিকে সমর্থন দেয় তাহলে আমাদের সমর্থন থাকবে না।’
তিনি বলেন, ডা. বি চৌধুরীর বিকল্পধারা বিএনপিতে একীভূত এবং জোটে আসার কথা ছিল। তখন দলটির মহাসচিব মেজর (অব.) মান্নান বলেছিলেন, তার লাশও বিএনপিতে যাবে না। এমন একটি দলের যুগ্ম-মহাসচিবকে (মাহি) কেন বিএনপি সমর্থন দেবে তা বুঝে আসে না।’
শাহাদত হোসেন সেলিম আরও বলেন, ‘অতীতের বড় কিছু ভুলের জন্য আমাদের মাশুল দিতে হচ্ছে। আবারও যদি রাজনীতিতে ভুল করা হয় তাহলে তা জোটের জন্য খারাপ পরিণতি বয়ে আনবে।’
বিএনপির শরিকদের অভিযোগ, তাবিথ আউয়ালের চাইতে মাহি বি চৌধুরী শতগুণে যোগ্য হলেও তার এবং তার বাবার অতীতের ভূমিকাগুলো বার বার উঠে আসছে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কাছে। অধ্যাপক ডা. বি চৌধুরী বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিব হওয়া সত্ত্বেও বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় স্বপদ থেকে সরে দাঁড়াতে হয় তাকে। বিএনপি ছেড়ে গড়ে তোলেন বিকল্পধারা বাংলাদেশ।
তাদের অভিযোগ, কিছু অনুসারী নিয়ে বি চৌধুরীই প্রথম বিএনপিতে ভাঙ্গন শুরু করেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে গোপন আঁতাতের কারণেই সেই সময় বি চৌধুরী প্রেসিডেন্ট পদ থকে সরে যান।
বি চৌধুরীর ছেলে তখনকার সংসদ সদস্য মাহি বি চৌধুরী পেছন থেকে কলকাঠি নেড়েছিলেন বলে বিএনপি জোটের শরিকদের কেউ কেউ অভিযোগ করেন।
এদিকে তাবিথ আউয়ালের প্রতি বিএনপি এবং ২০ দলের বড় একটি অংশের সমর্থন থাকলেও তার বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকে ঋণখেলাপীর অভিযোগ রয়েছে। ফলে মিন্টুর মতো তাবিথকে নিয়েও ঝুঁকি রয়েছে। ঋণখেলাপীর কারণে শেষ পর্যন্ত বাবার পথেই তাবিথকে যেতে হয় কিনা—এ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে শীর্ষ মহলে।
সোমবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে মিন্টুর স্ত্রী নাসরিন আউয়াল ও ছেলে তাবিথ আউয়াল দেখা করেন। পরে তাবিথ আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা পারিবারিক কুশল বিনিময়ের জন্যই চেয়ারপারসনের বাসায় গিয়েছিলেন। এর বাইরে আর কিছু নয়।’
সবমিলিয়ে মাহি বি চৌধুরী বিএনপির ‘বিকল্প’ এবং ‘শেষ ভরসা’ হলেও খুব সহজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না বিএনপির শীর্ষ নেতৃারা।
এদিকে সোমবার বিকেল থেকেই মাহির বিকল্প হিসেবে ববি হাজ্জাজকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে বিএনপি ও জোটের আরেকটি অংশ। তারা বলছেন, যদি ‘অন্যের ঘরের ছেলেকে’ই সমর্থন দিতে হয়, সেক্ষেত্রে মাহির বিকল্প হিসেবে ববি হাজ্জাজই যোগ্য প্রার্থী। তার যেমন প্রতিপত্তি রয়েছে, তেমনি নাগরিক সমাজের মাঝে অল্প সময়ের মধ্যে পরিচিতও বেড়েছে। এ ছাড়া ববিকে জাপা থেকে বহিষ্কার করায় কোনো অসুবিধা থাকার কথা নয়।
সূত্রটি বলছে, ইতোমধ্যে বিএনপির শীর্ষ মহলে ববিকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। ২০ দলের শরিক একটি দলের প্রধান এবং সমমনা অন্য একটি দলের প্রধানের সাথে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্যের সঙ্গে ববির হাজ্জাজকে নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে ববি যদি বিএনপিতে আসার ব্যাপারে আগ্রহী না হন তাহলে তাকে সমর্থন করা হবে না।
এ ব্যাপারে উত্তর সিটি করপোরেশনের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী, সবার সমর্থন চাই। আমাকে যারাই সমর্থন দেবে আমি খুশি হব। আমি জনগণের সমর্থন চাই।’
তবে এ ব্যাপারে বিএনপির কারো সঙ্গে কোনো কথা হয়নি বলে জানান ববি।
এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক সেনাপ্রধান লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘উত্তরের মেয়র প্রার্থী কে হবেন, তা আজকালের (মঙ্গল-বুধবার) মধ্যেই জানতে পারবেন।’
তবে মাহী বি চৌধুরীকে সমর্থন দিতে চান জোটের এমন নেতারা জানান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে মাহিকেই সমর্থন দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ বি. চৌধুরী অনেকদিন ধরেই বিএনপি জোটের চলমান আন্দোলনের সাথে ঐক্যমত পোষণ করে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন।
তারা বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠা মহাসচিব হিসেবে এবং অতীতে জাতীয়তাবাদী দলের রাজনীতিতে বি চৌধুরীর ভূমিকা ছিল। দলের এই ক্রান্তিকালে বেগম খালেদা জিয়া তাকে কাছে পেতে চান।
মন্তব্য চালু নেই