মাশরাফির জন্য জয়ের পথেই টাইগাররা

তাহলে কি বাংলাদেশ ক্রিকেট দল তাদের প্রাণপ্রিয় ‘লিডার’কে যথাযোগ্য সম্মানের সাথেই বিদায় দিতে যাচ্ছে টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে। কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল কিন্তু সেই পথেই হাঁটছে। তার মানে, বিদায়ী ম্যাচে মাশরাফিকে জয় উপহার দিয়ে দুই ম্যাচের সিরিজ ড্র করার দারুণ এক সম্ভাবনা তৈরি করেছে টাইগাররা। আগে ব্যাট করে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৯ উইকেটে ১৭৬ রান তুলেছিল টাইগাররা। এরপর জেগে ওঠা বোলাররা ৪০ রানেই ফেলে দেন ৫ উইকেট। এই রিপোর্ট লেখার সময় বড় ধাক্কা সামলে শ্রীলঙ্কা একটু গুছিয়ে উঠেছে বটে কিন্তু আর কিছুটা জোর ধাক্কা দিলেও শ্রীলঙ্কার মাটিতে প্রথমবার টি-টুয়েন্টি জয়ের ইতিহাস হবে টাইগারদের। সেখান থেকে আর উইকেট না হারিয়ে ৯৮ পর্যন্ত গেল স্বাগতিকরা। কিন্তু সাকিব আল হাসান আবার আঘাত হানলেন। সর্বশেষ খবর, ১৩ ওভারে ৬ উইকেটে ৯৯ রান শ্রীলঙ্কার।

থিসারা পেরেরা ও চামারা কাপুগেদারা ষষ্ঠ ওভারে ৭.৩ ওভারে ৫৮ রানের জুটি গড়ে ধ্বংসস্তুপ থেকে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু ব্যাটে পারফর্ম করার পর বল হাতেও বাংলাদেশের টি-টুয়েন্টি দলের সম্ভাব্য পরবর্তী অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বল হাতেও সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ৫.২ ওভারে প্রথম ৫ উইকেট হারানোর পর ১২.৫ ওভারে গিয়ে ষষ্ঠটি হারিয়ে ধুঁকতে শুরু করে স্বাগতিকরা। সাকিব তুলে নেন ২৭ রান করা থিসারাকে। একমাত্র কাঁটা হয়ে ছিলেন কাপুগেদারা। ৪ ওভারে ৩ উইকেট সাকিবের।
শ্রীলঙ্কা শিবিরে প্রথম দুটি আঘাতই হানেন সাকিব আল হাসান। শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনারকেই ফিরিয়ে দেন সাকিব। মাহমুদউল্লাহ বিদায় করেন লঙ্কান অধিনায়ক উপুল থারাঙ্গাকে। এরপর নিজের প্রথম ওভার করতে এসেই মোস্তাফিজের জোড়া আঘাত। প্রথম দুই বলেই আসেলা গুনারত্নে ও মিলিন্দা সিরিওয়ার্দানেকে ফিরিয়ে দিয়ে মোস্তাফিজ জাগিয়ে ছিলেন হ্যাটট্রিক সম্ভাবনা। কিন্তু লাসিথ মালিঙ্গার মতো তার সেই আশা পূরণ হয়নি। হতে দেননি থিসারা পেরেরা।

তবে হ্যাটট্রিক না হলেও লঙ্কান ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে পেরেছেন মোস্তাফিজ। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে জয়ের স্বপ্ন দেখাই যায়। কারণ জিততে হলে লঙ্কানদের করতে হবে আরও ১২২ রান। হাতে রয়েছে ১২টি ওভার ও ৫টি উইকেট।

এর আগে টস জিতে নিজের বিদায়ী এবং সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে প্রথমে ব্যাটিং নেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশ ৯ উইকেট হারিয়ে করে ১৭৬ রান। সৌম্য সরকার ও ইমরুল কায়েস উদ্বোধনী জুটিতেই তুলে ফেলেন ৭১ রান। সেটাও মাত্র ৬.২ ওভারে। সৌম্য-ইমরুলের এনে দেওয়া এই ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে এক পর্যায়ে প্রথম ১০ ওভারেই বাংলাদেশ তুলে ফেলে ১০১ রান। ১২ ওভারে ১১৮। কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে তখন বাংলাদেশের স্কোর প্রথম বারের মতো ২০০ পেরোনোরই আভাস। কারণ তখনো ৮ ওভার বাকি, হাতে ৮টি উইকেট। কিন্তু ২০০ ছোঁয়া তো হলোই না, হলো না লঙ্কানদের বিপক্ষে করা এর আগে করা সর্বোচ্চ ১৮১ পেরিয়ে যাওয়াও। বাংলাদেশের ইনিংস বরং আটকে গেল ১৭৬ রানেই। লাসিথ মালিঙ্গার হ্যাটট্রিক জাদুর কারণে শেষ ৮ ওভারে বাংলাদেশ তুলতে পেরেছে মাত্র ৫৮ রান। হারায় ৭টি উইকেট।

কোমরের চোটের কারণে মাশরাফির বিদায়ী ম্যাচে নেই তামিম ইকবাল। তার পরিবর্তে একাদশে ঢুকেছেন ইমরুল কায়েস। সৌম্যর সঙ্গে ইনিংস ওপেন করেন তিনিই। তো সৌম্য-ইমরুল দারুণ একটা সূচনাই এনে দিয়েছিলেন দলকে। কিন্তু দারুণ সেই পথ চলায় হঠাৎই ছন্দপতন। যুগপত প্যাভিলিয়নে ফিরে যান সৌম্য-ইমরুল দুজনেই। সৌম্যকে ফিরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের দুর্দান্ত ওপেনিং জুটিটা ভাঙেন আসেলা গুনারত্নে। একটু পর ইমরুল রান আউট। আউট হওয়ার আগে সৌম্য ১৭ বলে ৩৪ ও ইমরুল ২৫ বলে করেছেন ৩৬ রান। দুই ওপেনারকে হারানোর পরও রানের চাকা ঠিক রেখেছিলেন সাব্বির রহমান ও সাকিব আল হাসান। তৃতীয় উইকেটে দুজনে ৪৬ রানের জুটি গড়ে দলকে বড় সংগ্রহের ইঙ্গিতই দিচ্ছিলেন। কিন্তু দলকে ১২৪ রানে রেখে সাব্বিরের বিদায়ের পরই মোড়কটা লাগে বাংলাদেশ ইনিংসে। ১৮ বলে ১৯ রান করা সাব্বিরকে বিদায় করেন ভিকুম সঞ্জয়া। একটু পর ৩১ বলে ৩৮ রান করা সাকিবও আউট। তাকে বোল্ড করে দেন নুয়ান কুলাসেকারা। তার খানিক পর মোসাদ্দেককে ফেরান থিসারা পেরেরা।

এরপরই মালিঙ্গার হ্যাটট্রিক ম্যাজিক। যার শুরুটা মুশফিকুর রহীমকে দিয়ে। এক ছক্কা এক চারে ৬ বলে ১৫ রান করে মুশফিক বোল্ড। পরের বলে মাশরাফিও বোল্ড। নিজের বিদায়ী ম্যাচে আজন্ম লড়াকু মাশরাফি গোল্ডেন ডাক! টি-টুয়েন্টি ক্যারিয়ারের শেষ ইনিংসে শূন্য রানেআউট হয়ে মাশরাফি স্মরণ করিয়ে দেন ইতিহাসের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে বিবেচিত স্যার ডন ব্র্যাডম্যানকে। মাশরাফিকে বিদায় করে দিয়ে মালিঙ্গা দাঁড়িয়ে যান হ্যাট্রিকের দরজায়। অভিষিক্ত মেহেদী হাসান মিরাজ লঙ্কান পেসারের সেই আশা পূরণ করে দিয়েছেন। অভিষেকেই গোল্ডেন ডাক মেরে!

মাশরাফির বিদায়ী ম্যাচটা বাংলাদেশের বাঁচা-মরার। হারলে সিরিজে ২-০ তে হোয়াইটওয়াশ হতে হবে। টেস্ট-ওয়ানডের পর টি-টুয়েন্টি সিরিজটাও ১-১ ড্র করতে হলে শেষ ম্যাচে জিততে হবে। সেটা হলে মাশরাফির বিদায়টাও হবে স্মরণীয়।



মন্তব্য চালু নেই