মারা যাচ্ছে সেই মৃত সাগর !

মধ্যপ্রাচ্যে জর্ডান এবং ইসরায়েলের সীমান্তে অবস্থিত ডেড সি সম্পর্কিত একটি চমকপ্রদ তথ্য হলো এর পানি এতটাই ঘন যে তাতে নাকি রীতিমত বসে থাকা যায়।

কিন্তু সেই মৃত সাগর দিন দিন সঙ্কুচিত হয়ে আসছে এবং সত্যি সত্যিই মারা যাচ্ছে ডেড সি। তিরিশ বছর আগে যখন ইজরায়েলের এনগেডি রিজর্টটি তৈরি হয়েছিল তখন ডেড সির পানি ছিল তার দেয়ালের গা ঘেঁষে।

কিন্তু এখন এই সমুদ্র এত দ্রুত সঙ্কুচিত হয়ে আসছে যে তার পানি দেখতে হলে পর্যটকদের জন্য তৈরি এক ট্রেনে পাড়ি দিতে হয় প্রায় ২ কিলোমিটার। তবে ডেড সি-র প্রাচীন সব গুণাবলী অবশ্য এখনো অটুট রয়েছে।

এখনো আপনি চাইলে খনিজ সমৃদ্ধ এবং স্বাস্থ্যকর কাদামাটি গায়ে মাখতে পারবেন কিংবা ঘন লবণাক্ত পানিতে নামতে পারবেন। তাতে ভেসে ভেসে বই পড়তে পারেন।

ডেড সি-র পানিতে এভাবে ভেসে থাকার আগ্রহেই সেখানে যান অনেক পর্যটক। ইউক্রেন থেকে আসা পর্যটক নাতালিয়া বলছেন তার এত দীর্ঘ যাত্রা বৃথা নয়।

তিনি বলছেন, “আমি এর আগে কখনো এই কাদামাটি ব্যবহার করিনি। আমার খুবই ভাল লেগেছে। আমার মনে হচ্ছিলো কোন এক শক্তি আমাকে আকাশের দিকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে।”

বেশ কয়েক বছর হলো ডেড সির আশেপাশের চেহারা খুব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। গতবছরও এখানে পর্যটকদের জন্য থাকার জায়গা, দোকানপাট সহ আরো অনেক ধরনের সুযোগ সুবিধা ছিল।

কিন্তু এখন তার কিছুই আর বলতে গেলে নেই। কারণ পুরো এলাকা জুড়ে তৈরি হচ্ছে সিংকহোল। প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি হওয়া মাটির গর্তে দেবে যাচ্ছে পুরো ভবনও।

“এটি খুবই নাটকীয় ঘটনা এবং দুশ্চিন্তারও বিষয়। বিশেষ করে যারা এই সৈকতের ওপর নির্ভর করে জীবনধারণ করত তাদের জন্য”, বলছিলেন অধ্যাপক গিডিবেয়ার, যিনি সিংকহোলের বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ।

গত কয়েক বছরে পুরো এলাকায় কয়েক হাজার চোরাবালির মত সিংকহোলে দেবে গেছে প্রচুর স্থাপনা।

“অতীতে ভূতত্ত্ববিদরা প্রাচীন চিহ্ন দেখে বোঝার চেষ্টা করতো যে এসব সিংকহোল কিভাবে তৈরি হয়। এখানে আমরা চোখের সামনে দেখছি যে সিংকহোল কিভাবে তৈরি হয়। একজন ভূতত্ত্ববিদ হিসেবে এটি দেখতে পারা এবং এনিয়ে গবেষণা করতে পারাটা অনেক বড় একটা ব্যাপার।”

ডেড সির চারপাশে হাঁটলেই মনে হয় যে ভূতত্ত্বের ব্যবহারিক দিকটি আপনি নিজ চোখে দেখছেন। লবণের তৈরি মাটি পায়ের নিচে পড়ে ক্রিস্টালের মত চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে পড়ছে।

কিন্তু কেনো মৃত্যু ঘটছে ডেড সির? কারণটা হলো যে জর্ডান নদী থেকে এখানে পানি আসে, সেই নদীর পানি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যদিও এই সমস্যা সমাধানের একটি পরিকল্পনা আছে।

লোহিত সাগর থেকে মরুভূমির ওপর দিয়ে একটি পাইপলাইন তৈরি করা। যেই প্রকল্পটি হবে অনেক ব্যয়বহুল। তবে পরিবেশবাদী গোষ্ঠি ইকোপিসের সালাম আব্দুর রহমান বলছেন, এই অর্থ ব্যয় করাটা যুক্তিসঙ্গত।

“ডেড সি সুন্দর কি না সেটি আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমরা মনে করি ডেড সি হচ্ছে জীবনধারণের অবস্থার একটি নির্দেশক। এই অঞ্চলে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা যে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে, ডেড সি তারই নিদর্শন। যে কারণে ডেড সি রক্ষা করতে পারলে একটি ইঙ্গিত পাওয়া যাবে যে আমরা আমাদের পরিবেশের রোগ সারিয়ে তাকে সুস্থ করে তুলছি”-বিবিসি



মন্তব্য চালু নেই