মানুষরূপী হায়েনার হাতে ফুল ফোটার আগেই ঝরে গেল.....

মামার বাড়ি থেকে ফেরার পথে কিশোরীকে গণধর্ষণের পর নির্মম হত্যা

ফুল ফোটার আগেই ঝরে গেল সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া দুরন্ত গাম্য বালিকা সারা গ্রাম, সারা পাড়া যে মাতিয়ে রাখত। গ্রামের মানুষের কাছে আদরের রিক্তা, শিক্ষকদের কাছে মধ্যমনি ও পিতা-মাতার চোখের মনি। অথচ সেই তাজা প্রাণ মানুষরূপী কতিপয় হায়েনার হাতে কু-লালসার শিকার হয়ে অকালে প্রাণ দিল। গত ২৭ জুলাই সোমবার পিতা-মাতা অপেক্ষায় ছিল মামা বাড়ি থেকে তার আদরের সন্তানটি কখন ফিরবে। ঐ দিনই সকালে ভাঙ্গা উপজেলার সীমান্তবর্তী গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার ফতেপট্টি গ্রামে মামার বাড়ি থেকে ফেরার পথে সপ্তম শ্রেণিতে পড়–য়া শিক্ষার্থী রিক্তা আক্তার (১৪) এর উপর কয়েক হায়েনার কুদৃষ্টি পড়ে।
হায়েনার দল কিশোরীটিকে গণধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যা করে। নিষ্ঠুর এ হত্যাকান্ডে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ এলাকার সর্বস্তরের মাঝে বইছে প্রচন্ড ক্ষোভ।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে ২৫ জুলাই মাকে নিয়ে উক্ত কিশোরীটি ভাঙ্গা উপজেলার গঙ্গাধরদী গ্রামে মামার বাড়িতে বেড়াতে আসে। তাকে রেখে ঐ দিনই তার মা বাড়িতে ফিরে আসে। গত ২৭ জুলাই রিক্তা তার মামাতো বোন তানজিলাকে নিয়ে ট্রলার যোগে তাদের বাড়িতে রওনা দেয়। মামাতো বোন তানজিলা রিক্তাকে তাদের গ্রামের নদীর ঘাটে ট্রলার থেকে নামিয়ে তার শ্বশুর বাড়িতে চলে যায়।

এদিকে তার বাড়িতে ফিরতে দেরী হওয়ায় পিতা মাতা উদ্বিগ্ন হয়ে তাকে খুজতে বের হয়। অনেক খোজা খুজির পরও তাকে না পেয়ে এলাকার লোকজনও খুজতে বের হয়। অবশেষে দুপুরের পর পাশ্ববর্তী সৈদ্দী গ্রামের একটি ঝোঁপের মধ্যে ক্ষতবিক্ষত, রক্তাক্ত ও সম্পূর্ণ বিবস্ত্র অবস্থায় তার লাশ পাওয়া যায়। এতে দেখা যায় তার শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গসহ বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত আঘাতের চি‎হ্ন। যাতে গণধর্ষণের স্পষ্ট আলামত পাওয়া যায়।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, দীঘনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির এই কোমলমতি শিক্ষার্থী তার মামার বাড়ি থেকে ফেরার পথে বাড়ির সামান্য কিছু দূরে হায়েনাদের কুদৃষ্টি পড়ে। তারা কিশোরীকে ধরে ঝোঁপের মধ্যে নিয়ে গিয়ে উপর্যুপরি গণধর্ষণের পর পৈশাচিক কায়দায় শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের পর নির্মম ভাবে হত্যা করে। খবর পেয়ে মুকসুদপুর থানার অধিনস্ত সিন্দিয়াঘাট ফাড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধারের পর ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেন।

রিক্তার লাশ উদ্ধারের খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় জনগণ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের জনগণ ছুটে আসে। তারা একনজর তার লাশ দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। প্রষ্ফুটিত গোলাপের মতো কিশোরীটিকে গণধর্ষনের পর নির্মম হত্যাকান্ডে তারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারা মানুষরূপী এ হায়েনাদের শাস্তির দাবি জানান।

এ ঘটনায় রিক্তার পিতা আ: রাজ্জাক শেখ বাদী হয়ে মুকসুদপুর থানায় একটি ধর্ষণ ও হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বখাটে যুবক ফতেপট্টি গ্রামের আব্দুল খালেক শেখের পুত্র তুষার শেখ (২৪), মৃত সোরহাব শেখের পুত্র হাইউল শেখ(২৩), মৃত হাবিবুর রহমানের পুত্র নুর আলম (৩০) ও আওলাদ শেখের পুত্র উজ্জ্বল শেখ (২৬) কে গ্রেফতার করে আদালতে ১০দিনের রিমান্ড আবেদনের পর জেল হাজতে প্রেরণ করে।

এ প্রতিবেদকের কাছে এলাকার সর্বস্তরের জনগণ রিক্তার ধর্ষক ও হত্যাকারীদের অভিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান। এ ঘটনায় এলাকার শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের মধ্যে চরম আতংক বিরাজ করছে। সবার একটাই প্রশ্ন, মানুষরূপী হায়েনার হাতে আর কতকাল এই ভাবে নির্যাতনের শিকার হবে? এই হায়েনাদের রুখবে কে?



মন্তব্য চালু নেই