‘মান্নার মৃত্যুই শাকিবকে সুপারস্টার করেছে’

ঢাকাই চলচ্চিত্রের নায়কদের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয় প্রিয় এক নাম মান্না। যার নামেই আগুন ঝরে। অকালপ্রয়াত এ নায়কের আজ অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী। ভক্তদের মনে এখনো অমলীন তিনি। এখনও তার জনপ্রিয়তা হতে পারে হালের যে কোন নায়কের কাছে ইর্ষণীয়। যে নির্মাতার মাধ্যমে নায়ক মান্নার আবির্ভাব ও উত্থান, তিনি নির্মাতা মালেক আফসারি,

লিখলেন প্রিয় বন্ধুর স্মরণে

১৯৯০ সালে ‘ক্ষমা’ ছবিতে প্রথমবারের মতো মান্নাকে নিয়ে কাজ করি। এ জন্য তাকে সম্মানী হিসেবে মাত্র ১৫ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। ৪-৫ বছর পর ‘মরণ কামড়’ ছবিতে সেই মান্নাকেই ৬ লাখ টাকা দিয়ে কাস্ট করি। এর কারণ মূলত তার আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা। এই কয়েক বছরেই সে এমন জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিলো যে মান্নার ছবি মানেই হাউজফুল। প্রযোজক থেকে পরিচালক সবাই তার পিছনে ছুটতে শুরু করলো। এরপর মান্নাকে নিয়ে একে একে ‘লাল বাদশা’,‘বোমা হামলা’,‘জেল থেকে বলছি’ কিংবা ‘রাজা’র মতো হিট ছবিগুলো নির্মাণ করি।

সবশেষ ‘উল্টা পাল্টা ৬৯’ ছবিতে তাকে নিয়ে কাজ করি। এর বাইরে মান্নার সঙ্গে অপু বিশ্বাসকে জুটি করে আরও তিনটি ছবি নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিলাম। এ জন্য সম্মানী বাবদ অপুকে ৬ লাখ টাকাও দিয়েছিলাম। যার মধ্যে ২ লাখ টাকা দিয়েছিলেন মান্না। কিন্তু শুটিং শুরুর আগেই সে আমাদের ছেড়ে চলে যায়। পরে মান্নার জায়গায় শাকিব খানকে নিয়ে ‘মনের জ্বালা’ নামে একটি ছবি নির্মাণ করেছিলাম। বাকি দুটি ছবির টাকা অপু আমাকে ফেরত দেয়।

১৯৮৪ সালে এফডিসির ‘নতুন মুখের সন্ধানে’র মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্র অঙ্গনে যুক্ত হয়েছিলেন চিত্রনায়ক মান্না। এখন যেমন একজন প্রডিউসার জোগাড় করতে পারলেই নায়ক-নায়িকা হওয়া যায়, তখন তেমন ছিলো না। তাই ক্যারিয়ারের শুরতেই আলমগীর, ইলিয়াস কাঞ্চন, রুবেল কিংবা সালমান শাহর মতো সুপারস্টারদের সঙ্গে তাকে প্রতিযোগীতায় নামতে হয়েছে। দিনের পর দিন শুটিং, ডাবিং এসব নিয়েই ব্যস্ত থেকেছেন। এমন কী ছবির জন্য নিজের পরিবারকেও খুব একটা সময় দিতে পারতো না। সারাক্ষণই এফডিসিতে পড়ে থাকতো।

মান্নার শুধু অভিনয় নিয়ে পড়ে থাকতে না। চলচ্চিত্রের ভালো মন্দ নিয়ে ভাবতেন। তাই আমাদের ছবিগুলো যখন একে একে পাইরেসি হয়ে বাজার নষ্ট হচ্ছিলো, তখন মান্নাই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তা বন্ধ করার উদ্যোগ নেন। এমন কী চলচ্চিত্রে যখন অশ্লীলতা জেঁকে বসে, মান্নার তার বিরুদ্ধেও মাঠে নামেন। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সমিতিগুলোকে কার্যকর করে তুলেন। ফলে একটা সময় ইন্ড্রাস্ট্রিতে সবার চোখের মনি হয়ে উঠেন মান্না।

বাংলা চলচ্চিত্রে বর্তমানে সুপারস্টার একজনই। কিন্তু তখন এমনটা ছিলো না। তাই কারো কাছে নির্মাতারা জিম্মিও ছিলেন না। তারপরও মান্না শুটিং শিডিউল নিয়ে খুব সিরিয়াস ছিলো। কখনও সেটে আসতে দেরি হলে আগেই ফোন করে জানিয়ে দিত। যা এখন কল্পনাও করা যায় না। তাই বলা যায়, মান্নার মৃত্যুই শাকিবকে সুপারস্টার করেছে।
মান্না ছিলো আমার বন্ধুর মতো। তার প্রতি ভালোবাসা থেকে আমার ভেতরে জন্ম নেয় ‘অন্তর জ্বালা’র গল্প। গত কয়েকমাস ধরে সেই গল্প আব্দুল্লাহ জহির বাবুকে নিয়ে সম্পূর্ণ করেছি। এতে মান্নার জন্য পাগল এক অন্ধ ভক্তকে তুলে ধরব। যে তিন বেলা না খেয়ে থাকে, তবু প্রতিদিন নিয়ম করে তিন শো মান্নার ছবি দেখে। ছবিটি মান্নাকে উৎস্বর্গ করে নির্মাণ করব।



মন্তব্য চালু নেই