মানুষের হাতে তৈরী নয়, জেনে নিন ৫০০ বছরের পুরানো জীবন্ত শেকড়ের সেতু সম্পর্কে!

বিস্ময়! যার কোনো শেষ নেই। রহস্যঘেরা প্রকৃতির ভাঁজ খুলে প্রতিনিয়ত এমন কিছু বিষয় সামনে এসে হাজির হচ্ছে, যা আমাদের বিস্মিত করে, বিমোহিত করে। এমন একটি বিস্ময়ের নাম ‘জীবন্ত শেকড়ের সেতু’।

আগেই বলে রাখি, জীবন্ত শেকড়ের সেতু যারা দেখেননি, তাদের কাছে এটি বিস্ময়। কারণ, এই সেতুর ইতিহাস আনুমানিক ৫০০ বছরের পুরোনো।

f678

কোথায়?
ননগ্রিয়াত একটি ছোট্ট গ্রামের নাম। যার আকাশে পোয়াতি মেঘেরা খেলা করে। থেকে থেকে, কখনো বা অঝোর ধারায় রিমঝিম ছন্দে নেমে আসে বৃষ্টি। বৃষ্টি আর বৃষ্টি। সবুজ পাতায় বৃষ্টিরা ঝাপটা মারে অনবরত। জলে-জঙ্গলে টাপুরটুপুর ছন্দ। এখানে সবুজ হয়ে ওঠে প্রাণ। প্রাণের খোলায় ছড়িয়ে যায় প্রেমের বীজ। তারপর…পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে আসা ছোট্ট নদীর স্রোতে হারিয়ে যায় মন। এমন সময় যদি চোখে পড়ে সেই নদীর ওপর একটি শেকড়ের সেতু গা এলিয়ে আছে, তখন অনুভূতি কেমন হবে? তা আর নাই বা বলি। যে যার মনের আকাশে শত রঙে স্বর্গরাজ গড়ুক, তাতে কার কী!

se4

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয় মাওসিনরামে। কিছু দিন আগেও এই রেকর্ড ছিল চেরাপুঞ্জির। তাতে কী। এখনো সারা বছর বৃষ্টিময় থাকে। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী জনপদ বৃষ্টিবহুল এই চেরাপুঞ্জি। ইস্ট কাসি হিলস জেলার উপজেলা চেরাপুঞ্জির মূল শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে জঙ্গলাবৃত্ত গ্রাম ননগ্রিয়াত, যেন পাথর দিয়ে বাঁধানো উঁচুনিচু বন। মাঝে মাঝে বাড়ি। অনিন্দ্য, নান্দনিক চারদিক। চোখ জুড়ানো, মন ভোলানো প্রকৃতির শোভা।

dr56y

আদিবাসী কাসি সম্প্রদায়ের বসবাস এখানে। তাদের ভাষাও কাসি। ভারতীয় হলে কী হবে, হিন্দি তারা বোঝে না। দাপ্তরিক ভাষা ইংরেজি। তবে হাজার বছর ধরে কাসিতে কথা বলে আসছে তারা। সেখানে সবকিছুর সঙ্গে তাদের মিতালি। সবুজের সমারোহের সঙ্গে মিশে থাকে তারা। ছোট্ট নদী তারা হেঁটে, বেশি প্রয়োজন হলে সাঁতরে পার হয়ে যায়। কিন্তু যখন ঢল নামে তখন তো গতি থাকে না- না হাঁটায়, না সাঁতরানোতে। এই সমস্যা মোকাবিলায় বুদ্ধি খাটিয়ে প্রকৃতিকে কাজে লাগানোর কৌশল আয়ত্ত করেন কাসিদের পূর্বপুরুষরা, যার ফলে সৃষ্টি হয় শেকড়ের সেতু। ননগ্রিয়াত গ্রামের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এই সেতু, যা দেখতে অজান্তেই আপনারও মন উড়ে যাবে। আপনি দাঁড়িয়ে যাবেন কল্পনার সেতুতে, হাত বাড়িয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্যের সঙ্গে আলিঙ্গন করতে চাইবেন।

d45t

শেকড়ের সেতু
ননগ্রিয়াতের নদীর দুই ঢালু পাড়ে এক প্রজাতির রাবার গাছ দেখা যায়। এই গাছের মূল পাথরের বাধা উপেক্ষা করে মাটির সন্ধান করে নেয়। কিন্তু গাছের গোড়া ও কাণ্ড থেকে কিছু শেকড় বের হয়, যা বাধা না পেলে পানি ও পাথরের ওপর গড়িয়ে গড়িয়ে বড় হতে থাকে। গাছের দু-একটি শেকড় লম্বা হয়ে অন্য পাড়ে চলে গেলে টানটান করে বেঁধে রাখা হয়। কাসিদের কাজ শুধু এতটুকু। এরপর একটির পর একটি শেড়ক যুক্ত হতে থাকে তাতে। এভাবে চলতে থাকে ১০ থেকে ১৫ বছর। তারপর নদীর ওপর জন্ম নেয় জীবন্ত শেকড়ের সেতু।

সবচেয়ে মজার বিষয় হলো- দ্বিতল শেকড়ের সেতু। ইংরেজিতে যাকে বলা হচ্ছে, ডাবল ডেকার রুট ব্রিজ। দারুণ ব্যাপার! না দেখলে শুধু বর্ণনায় মন ভরবে না।

23e4rf

১০ থেকে ১৫ বছর বয়সি সেতু টেকসই ও নিরাপদ। এর ওপর একসঙ্গে প্রায় ৫০ জন দাঁড়ানো যায়। কাসিদের প্রতিদিনের যোগাযোগে এই শেকড়ের সেতুর ইতিহাস প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো।



মন্তব্য চালু নেই