মানুষের বড় হওয়ার ক্ষেত্রে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভূমিকা
প্রাথমিক বিদ্যালয় একটি মানুষের শিক্ষা জীবনের প্রথম ধাপ। মানুষের সারা জীবনে অর্জিত শিক্ষার বড় বড় ডিগ্রীগুলো প্রাথমিক শিক্ষার উপরই দাড়িয়ে থাকে। একটি ১০০ তলা বিল্ডিংয়ের উপরের ৯৯ তলা যেমন ১ম তলার উপর দাড়িয়ে থাকে, ঠিক তেমনি হাই স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় বড় ডিগ্রী গুলো প্রাথমিক শিক্ষার উপর ভর করে থাকে। একশ তলা ভবনের উপরের নিরানব্বই তলা যতই মজবুত ও সু-সজ্জিত হোক না কেন যদি নিচের অংশ দুর্বল হয় তবে ভবনটি যেমন নিরাপদ নয়। তেমনি একজন ব্যক্তির যদি প্রাথমিক শিক্ষায় অপূর্ণতা থাকে আর সে যদি দেশে বিদেশে অনেক বড় বড় ডিগ্রীও নিয়ে আসে, আমি মনেকরি তার শিক্ষা জীবন অপূর্ণ।
আপনারা কি কখনো ভেবে দেখেছেন- ১ ছাড়া ১ কোটি লেখা যায় না। আপনি এক কোটি লিখতে যদি এক কোটি শূন্যও (০) ব্যবহার করেন তবুও কোটি হবে না যদি না আগে ১ লিখা হয়। ঠিক তেমনি প্রাথমিক শিক্ষা ছাড়া সকল শিক্ষাই মূল্যহীন। অপরপক্ষে, যদি কারও প্রাথমিক শিক্ষা পরিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর কোন কারণ বশত আর লেখাপড়ার সুযোগ নাও আসে তবুও সে কিছু শিক্ষিত এবং যদি সে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাটুকু ও কাজে লাগাতে পারে তবুও তার পক্ষে সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। এবং এই কথাটির শত শত উদাহরণ রয়েছে যারা শুধুমাত্র সাফল্য নয় সাফল্যের একেবারে শীর্ষ স্থান দখল করেছে। টমাস আলভা এডিসন পৃথিবী আলো করা বিজ্ঞানী ছিলেন। ক্লাস সেভেনে পড়া অবস্থায় একবার সে মাষ্টার মশাইয়ের চিঠি হাতে বাড়ি ফিরল, চিঠিতে লেখা ছিল আপনার টমি এত বোকা যে তাকে লেখাপড়া করানো আমাদের পক্ষে অসম্ভব। সেই টমি পরবর্তী কালে টমাস আলভা এডিসন হয়েছিলেন যিনি বৈদুতিক বাতি আবিষ্কার না করলে হয়ত পৃথিবীর আধার দূর হতো কি না তা বলা মুশকিল।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে মানুষের ভালো চাকুরী, বড় ব্যবসা অথবা বড় হওয়ার ক্ষেত্রে ৮৫% ভূমিকা পালন করে তার সপ্ন, বিশ্বাস, আচার আচরণ, মূল্যবোধ, চরিত্র, লক্ষ্য ইত্যাদি যার জন্য কোন সার্টিফিকেট নেই আর এই গুলোর ৯৯% ই প্রাথমিক শিক্ষায় অর্জন করা হয়। এবং মাত্র ১৫% কাজে লাগে তার উচ্চ শিক্ষার ডিগ্রী। সুতরাং প্রাথমিক শিক্ষায় ত্র“টি থাকলে ৮৫% শিক্ষা ত্র“টি থাকে।
একটি কথা সবাই জানে শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড, আর আমি বলি প্রাথমিক শিক্ষা পুরো শিক্ষা জীবনের মেরুদন্ড।
আমাদের দেশে যা খুবই অবহেলিত। তাই তো আমরা জাতি হিসেবে আজও মেরুদন্ড সোজা করে দাড়াতে পারিনি। আমি মনে করি একটি শিশুর পেছনে সর্বোচ্চ ব্যয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে করা উচিত এবং পর্যায় ক্রমে তার বেতন কমানো উচিত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের বেতন ফ্রি করে দেওয়া উচিত যা জার্মানীর শিক্ষা ব্যবস্থায় চালু আছে। সর্বোচ্চ মেধাবী এবং শিক্ষিতদের প্রাইমারী স্কুলে নিয়োগ দেওয়া হবে আর সবচেয়ে বেশী সুযোগ সুবিধা প্রাইমারী শিক্ষকদেরই থাকবে তাহলেই আমরা উন্নত মেধা তালিকায় যেতে পারব। আমরা শুধু সার্টিফিকেটের পেছনে দৌড়াই আমরা বুদ্ধিচর্চা করি না, আমাাদের জ্ঞানের পিপাসা নেই আছে টাকার নেশা। আমরা অপরের কু-অভ্যাস নকল করতে বেশী ভালোবাসি কিন্তু নিজেরা আবিষ্কারের নেশায় আসক্ত হই না। তাই তো আমরা পর নির্ভরশীল। বাঙ্গালী জাতিকে একটি আতœনির্ভরশীল জাতিতে রুপান্তরিত করতে হলে শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে।
বাংলাদেশে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলো খুবই অবহেলিত। এখান কার শিশুরা আধুনিক যুগোপযোগী শিক্ষা থেকে অনেক পিছিয়ে। সরকারের এসব বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া উচিত।
শুধু সরকার নয় যেহেতু আমাদের ছেলে মেয়েরা পড়াশোনা করে সুতরাং শিশুরা প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা পাচ্ছে কিনা সে দিকে আমাদেরও বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে।
পুখরিয়া ইছাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে আমি চির ঋণী। তাই এই স্কুলের শত বছর পূর্তিতে আমার পরামর্শ থাকবে সরকার উদ্যোগ না নিলেও যেন আমার শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষকরা যেন এই বিদ্যালয়ে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করে পুখরিয়া ইছাপুর সরকারী প্রাথমিক কে প্রাথমিক শিক্ষার একটি মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
মন্তব্য চালু নেই