মানুষের খুলিতে মুক্তা!

খুলিতে মুক্তা! প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছে মৃত মানুষের খুলি খুবই সাধারণ বিষয়। বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান খনন করার সময় অনেক খুলি উদ্ধার করতে দেখা যায়। এই খুলিগুলো গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা আমাদের ফেলে আসা সময় সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন। খুলি থেকে মৃতদেহ সম্পর্কে জানার প্রক্রিয়াকে বলা হয় কার্বন ডেটিং। এই পদ্ধতিতে খুব সহজেই গবেষকদের পক্ষে জানা সম্ভব হয়, খুলিটি আসলে কোন সময়কার। সম্প্রতি একদল প্রত্নতত্ত্ববিদ প্রাচীন নগরী রোমের রাস্তার তলদেশ থেকে মনি-মুক্তাখচিত একটি খুলি আবিষ্কার করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, খ্রিস্ট ধর্ম প্রবর্তনের প্রথম দিকের কোনো ধর্ম প্রচারকের খুলি এটা।

প্রাপ্ত তথ্য মতে জানা যায়, খ্রিষ্ট ধর্ম প্রচারের সেই শুরুর সময়ে যারা ধর্মপ্রচারের কাজ করতেন তাদের মৃত্যু হলে মৃতদেহকে অনেক মূল্যবান খনিজ পাথর দিয়ে সাজিয়ে কবর দেয়া হতো। পরবর্তী সময়ে খ্রিস্টান সমাজের প্রচার কাজে এই মনি-মুক্তাখচিত খুলিগুলোকে বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হতো পবিত্রতার নিদর্শন হিসেবে। গোটা ইউরোপে ছড়িয়ে দেয়া এই খুলিগুলোকে খুবই মূল্যবান হিসেবে ধরা হয়। এই পবিত্রতার নিদর্শনগুলোর অধিকাংশই ধ্বংস হয়ে ফেলা কিংবা চুরি করা হয় প্রোটেস্ট্যান্টদের উত্থানের সময়।

মুক্তাখচিত খুলি2এই খুলিগুলোকে যখন ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল তখন এগুলোর সঙ্গে দামি পাথর, কাপড়, স্বর্ণের মুকুট, বর্ম এবং পরচুলাও দেয়া হতো। নির্দিষ্ট চার্চের ভেতরে অনেক নিরাপত্তার বলয়ের মধ্য দিয়ে জনসাধারণকে দেখানোর জন্য এই খুলিকে রাখা হতো। ধনীরা যাতে ভাবতে পারে যে, মৃত্যুর পরেও তাদের জন্য সমৃদ্ধ জীবন অপেক্ষা করে আছে সেটাকে প্রতিষ্ঠিত করতেই চার্চে এই খুলিগুলোকে রাখা হতো। পাশাপাশি খ্রিস্টান ধর্মের উপর যেন মানুষের বিশ্বাস অটুট থাকে সেদিকেও নজর দেয়া হতো। বিশেষ বিশেষ দিনে এই খুলিকে ছুয়ে ধর্ম রক্ষায় শপথের আয়োজন করা হতো প্রোটেস্ট্যান্টদের উত্থানের আগ পর্যন্ত।

ঐতিহাসিক এবং গবেষক পল কুন্ডোনারিস এই খুলির খোঁজে ইউরোপের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে গিয়েছেন। যে যে সন্যাসীদের খুলিকে পবিত্র বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল তৎকালীন চার্চ কর্তৃপক্ষ থেকে, সেই সন্যাসীদের উপর দীর্ঘদিন ধরেই গবেষণা করে আসছেন তিনি। পলের গবেষণায় দেখা যায়, এখনও ইউরোপের অনেক চার্চে খুব গোপনে এই খুলি সংরক্ষণ করা হচ্ছে এবং প্রাচীন রীতি মেনে কিছু গোষ্ঠি জীবনযাপন করছে।



মন্তব্য চালু নেই