মানুষের অঙ্গ-প্রতঙ্গের বেচাকেনা: কী বলে ইসলাম
ইসলামী শরীয়ত কোনো কোনো ক্ষেত্রে মানব অস্তিত্ব ও তার অঙ্গকে মূল্যযোগ্য সম্পদ হিসাবেও স্বীকার করেছে। যেমন, যদি কোনো মানুষকে হত্যা করা হয় অথবা তার কোনো অঙ্গ ধ্বংস করা হয় তাহলে তখন তার বিনিময়ে প্রদেয় অর্থকে শরীয়তের ভাষায় রক্তমূল্য বলা হয়। তবে এ বিষয়ে সকলেই একমত, কোনো স্বাধীন মানুষের পুরো অস্তিত্বের বেচাকেনা জায়েজ নেই। আর অতীতকালে মানুষের সৌন্দর্য রক্ষার জন্যে তো চুলের ব্যবহার ব্যাপকতর ছিল। তাই আমাদের ফকীহগণ চুলের বেচাকেনাকে নিষেধ করেছেন। আর এর কারণ হিসাবে উল্লেখ করেছেন, এতে করে মানুষের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়। (আল বাহরুর রায়েক)।
আল্লামা শামী (রহ.) চুলের সঙ্গে মানুষের নখেরও কেনা-বেচাকে নিষেধ করেছেন। (রদ্দল মুহতার) তবে দুধের বিষয়ে ফকীহগণের মতভিন্নতা রয়েছে। হানাফি ফকীহগণ মানবীয় মর্যাদা রক্ষার স্বার্থে দুধের বেচাকেনাকেও নিষেধ করেছেন (আল বাহরুর রায়েক) অবশ্য ইমাম শাফঈ (রহ.) -এর দৃষ্টিতে প্রয়োজন অনুপাতে দুধের কেচাবেচাকে জায়েজ বলেছেন।
আমরা ইবনে কুদামা (রহ.) -এর ব্যাখ্যার আলোকেই বলা যায় কিছু শর্ত মেনে মানুষের অঙ্গ কেচাবেচা জায়েজ হবে। কেননা মূল কথা হলো- ১.বর্তমানে প্রচলিত চিকিৎসা-বিজ্ঞান মানুষের জন্য মর্যাদার হানিকর নয়। ২. সুতরাং কারও দৃষ্টি ফিরিয়ে আনা বা এ জাতীয় কোনো উপকারার্থে কিংবা কারও জীবন রক্ষার উদ্দেশ্যে কাউকে অঙ্গ দান জায়েজ। শর্ত হলো- অঙ্গদানের দ্বারা অসুস্থ ব্যক্তি সুস্থ হয়ে উঠবে এমন প্রবল ধারণা থাকতে হবে। আর তা হতে হবে কোনো অভিজ্ঞ চিকিৎসকের মতামত অনুযায়ী।
কোনো মৃত ব্যক্তির অঙ্গ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে শর্ত হলো- সেই তার শরীরের মালিক। অধিকন্তু তার ওয়ারিশদেরও এ বিষয়ে রাজি থাকতে হবে। কোনো জীবিত ব্যক্তির অঙ্গ গ্রহণের জন্য স্বয়ং তার অনুমতি লাগবে। তা ছাড়া সে অঙ্গ দিয়ে যেন বড় কোন ক্ষতির মধ্যে না পড়ে সে বিষয়ের প্রতিও খেয়াল রাখতে হবে। শাফঈ ও হাম্বলি আলেমগণের মতে, মানব অঙ্গের বেচাকেনা উভয়টিই জায়েজ। তবে হানাফি আলেমগণের মতে একান্ত অনুনোপ্যায় হয়ে পড়লে শুধু কেনা জায়েজ আছে, কিন্তু বেচা জায়েজ নেই। (জাদিদ ফিকহি মাসাইল)।
মন্তব্য চালু নেই