তিন সিটি নির্বাচন

মানা হচ্ছে না ইসির নির্দেশ

বাধ্যবাধকতা থাকলেও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অনেক নির্দেশই মানছে না সরকার। লোকবল চেয়ে ইসির পাঠানো চিঠিকে তোয়াক্কা করছে না জাতীয় সংসদ। আর বিধি লঙ্ঘন করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে কয়েকটি প্রকল্প।

এ সব অভিযোগ করে নির্বাচন কমিশনের একজন কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, নির্বাচনকালে ইসির সব নির্দেশ রাষ্ট্রের যেকোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও নির্বাহী কর্তৃপক্ষ মানতে বাধ্য।

প্রকল্প বন্ধ করতে চিঠি

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনকালীন নতুন প্রকল্প অনুমোদন না দিতে গত ১৯ মার্চ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করে ইসি। কিন্তু স্থানীয় সরকার বিভাগ ইসির নির্দেশ অমান্য করে উত্তর সিটির করপোরেশন এলাকায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প অনুমোদনের সব প্রস্তুতি শেষ করে।

কমিশন সূত্র আরও জানায়, ২০০ কোটি টাকার প্রকল্পটি ইসির নজরে এলে তা স্থগিত রাখতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়।

গত সোমবার ইসির উপ-সচিব মো. সামসুল আলম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিবের কাছে পাঠানো হয়। এ ছাড়াও চিঠির অনুলিপি মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত ও অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আরাস্তু খানের কাছেও পাঠানো হয়।

ঢাকা (উত্তর-দক্ষিণ) ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় নতুন ভিজিডি কার্ড ইস্যুসহ নতুন কোনো অনুদান ও ত্রাণ বিতরণ এবং প্রকল্প অনুমোদন স্থগিত রাখতে স্থানীয় সরকার বিভাগকে গত ১৯ মার্চ চিঠি দিয়ে অনুরোধ করে নির্বাচন কমিশন।

কিন্তু স্থানীয় সরকার বিভাগ ইসির নির্দেশ অমান্য করে উত্তর সিটির করপোরেশন এলাকায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০টি ওয়ার্ডের ১৯ কিলোমিটার এলাকার উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করে। গত ৭ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘কনস্ট্রাকশন এ্যান্ড ইমপ্রুভমেন্ট অব রোডস, ড্রেইনস এ্যান্ড ফুটপাতস অব গুলশান, বনানী এ্যান্ড বারিধারা ডিপ্লোমেটিকস এরিয়াস’ শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্বাচন কমিশন থেকে পরিকল্পনা কমিশনে সোমবার রাতে চিঠি দিলে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রকল্পটি স্থগিত করা হয়।

স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানো চিঠিতে আরও জানানো হয়, সিটি করপোশেন নির্বাচন আচরণ বিধিমালাসহ সংশ্লিষ্ট প্রবিধানগুলো অনুসরণের বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে পরিপত্র জারি করতে অনুরোধ করা হয়েছিল। সেই পরিপত্র জারি করা হয়েছে কিনা, জানাতে বলা হয়। তা ছাড়া পরিপত্র জারি করা হলে তার একটি অনুলিপিও পাঠানোর অনুরোধ করে ইসি। একইসঙ্গে আলোচ্য প্রকল্পের সকল কার্যক্রম স্থগিত রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়।

ইসির উপ-সচিব মো. সামসুল আলম বলেন, ‘নির্বাচন চলাকালে সিটি করপোরেশন এলাকায় এ ধরনের প্রকল্পের কার্যক্রম স্থগিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এর আগেও ইসি নতুন প্রকল্পের অনুমোদন না দিতে অনুরোধ করা হয়েছিল।’

ইসির চিঠির জবাবে সংসদ সচিবালয়

এ ছাড়া গত ৪ মার্চ ঢাকা (উত্তর-দক্ষিণ) সিটি করপোরেশনের জন্য প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল তৈরির জন্য জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে জনবল চেয়ে চিঠি দেয় ইসি। চিঠির জবাবে সংসদ জানায়, ‘তারা জনবল দিতে পারবে না।’

প্যানেল প্রস্তুত প্রসঙ্গে ৩০ মার্চ সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সেকেন্দার হায়াত রিজভী স্বাক্ষরিত চিঠিতে ইসিকে জানানো হয়, ‘সংবিধানের ৭৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, জাতীয় সংসদের নিজস্ব সচিবালয় প্রতিষ্ঠিত। এর নিজস্ব আইনে কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ নিয়োগপ্রাপ্ত। তা ছাড়া জাতীয় সংসদ সচিবালয় সরকারের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়গুলোর মতো নয়, বিধায় সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দায়িত্ব পালনের জন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর তালিকা পাঠানোর অনুরোধ এ কার্যালয়ের জন্য প্রযোজ্য হবে না।’

ইসির উপ-সচিব মো. সামসুল আলম বলেন, নির্বাচন চলাকালে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তার বিষয়ে সিটি করপোরেশন আইনে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে বিধিমালার অধীন সকল ক্ষমতা ইসি প্রয়োগ করতে পারবে।’

তিনি বলেন, বিধিতে আরও বলা হয়, ‘নির্বাচনে সহায়তা করতে রাষ্ট্রের যে কোনো ব্যক্তি বা নির্বাহী কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে পারবে এবং নির্দেশনা পেলে ওই ব্যক্তি বা নির্বাহী কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব পালন কিংবা সহায়তা করতে বাধ্য থাকবে।’ কিন্তু সংসদ সচিবালয়ের ক্ষেত্রে তার প্রয়োগ হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির এক সহকারী সচিব বলেন, ‘জাতীয় সংসদ সচিবালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় যা করেছে, সেটা আমরা প্রত্যাশা করিনি। সবার সহযোগিতা না পেলে এত বড় নির্বাচন করা ইসির জন্য কঠিন।’

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত ও অবকাঠামো বিভগের সদস্য আরাস্তু খান বলেন, ‘নির্বাচন চলাকালে প্রকল্প দেওয়া অবশ্যই বিধি লঙ্ঘন। বিষয়টি আগে জানা ছিল না। প্রকল্পটি স্থগিত রাখতে সোমবার রাতে নির্বাচন কমিশন চিঠি দেয়। ফলে প্রকল্পটি স্থগিত রাখা হয়।

তফসিল অনুযায়ী, ২৮ এপ্রিল ঢাকা (উত্তর-দক্ষিণ) ও চট্টগ্রাম সিটিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তিন সিটিতে অর্ধশতাধিক মেয়র ও দেড় হাজার কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। প্রার্থীরা ৯ এপ্রিল পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সুযোগ পাবেন।

সোমবার মধ্যরাত থেকে সীমিত আকারে প্রচারণা শুরু হয়েছে। ১০ এপ্রিল প্রতীক বরাদ্দ হলে চূড়ান্ত প্রচারণা শুরু করবে প্রার্থীরা।



মন্তব্য চালু নেই