মানবেতর জীবন যাপন করছে পুলিশের ধাওয়ায় নিহত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কমলের পরিবার
পুলিশের ধাওয়া খেয়ে পানিতে ডুবে নিহত রাঙামাটির সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জিয়াউল হক কমলের পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছে। উপার্জনের আর কোন পথ না থাকায় কমলের স্ত্রী একমাত্র সন্তান নিয়ে অনাহারে অর্ধহারে দিন কাটাচ্ছেন। একমাত্র সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত কমলের স্ত্রী শিউলি বেগম কাজের আশায় দলের নেতা ও প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কিন্তু কেউ তাকে আশার আলো দেখাতে পারেননি। হতাশায় ভরা শিউলি বেগমের জীবন আর চলছে না।
২০১৪ ইং সালের ৬ ফেব্রুয়ারী রাতে কেতায়ালী থানার সামনে থেকে পুলিশের ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে বাঁচতে গিয়ে শহরের তবলছড়ি মিনিস্ট্রিয়াল ক্লাবের পেছনে কাপ্তাই লেকে ঝাপ দিলে কমলের মৃত্যু হয়। কমল শহরের আসামবস্তির শান্তি নগরের মৃত মুক্তিযোদ্ধা নাজমুল হকের সন্তান। কমলের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলায় ওয়ারেন্ট আছে বলে দাবি পুলিশের। কমলের পরিবারের দাবি ঐ দিন রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার সময় কমল তার আসামবস্তিস্থ বাসায় যাওয়ার সময় কোতয়ালী থানার সামনে এসআই ইদ্রিছের নেতৃত্বে একদল তার গতিরোধ করে আটক করে নিয়ে যাবার চেষ্টা করে। পুলিশ কমলের কাছ থেকে টাকা আদায়ের জন্য আটক করতে চেয়েছিলো। আত্মরক্ষার জন্য কমল কাপ্তাই হ্রদে ঝাপ দেয় বলে তার পরিবারের দাবি।
এদিকে ঘটনার পরদিন সকালে কাপ্তাই হ্রদ থেকে কমলের লাশ উদ্ধার করা হলে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে। এ ঘটনাকে হত্যাকান্ড হিসেবে দাবি করে নেতাকর্মীরা কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অপসারন ও এসআই ইদ্রিছের শাস্তির দাবিতে লাগাতার হরতালের আল্টিমেটাম দেয়।
ঘটনার সুষ্ট তদন্ত ও বিচারের আশ্বাসে আন্দোলন থেকে নেতাকর্মীদের নিভৃত করে জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতারা। আওয়ামীলীগ নেতাদের হস্তক্ষেপের কারণে হত্যা মামলা করেননি বলে জানান কমলের স্ত্রী শিউলি বেগম।
এদিকে ঘটনার পর রাঙামাটি পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কমলের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেয়া হয়। তৎকালীন পুলিশ সুপার আমেনা বেগম নিহত কমলের স্ত্রীকে একটি চাকুরির আশ্বাস দেন। জীবন নির্বাহের জন্য কিছু করার আশ্বাস দেন জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। আশ্বাসের পর এক বছর পার হলেও নিহত কমলের পরিবারের খবর রাখেননি কেউই। স্বামীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর বিচার না পেয়ে হতাশায় নিমজ্জিত শিউলি বেগমের জীবন। কমলের একমাত্র সন্তান মোঃ আব্দুল্লাহ হক সোহাগের পড়া লেখাও এখন অনিশ্চতায়।
কমলের স্ত্রী শিউলি বেগম জানান, চাকুরীর আশ্বাস নিয়ে বর্তমান পুলিশ সুপারের কাছে গেলে তিনি আশানুরুপ কোন জবাব দেননি। তবে তিনি শিউলি বেগমকে দুই হাজার টাকা সহযোগিতা করেন। এদিকে দলের নেতারা এ বিষয়ে অনেকটা দায়সারা বলে জানান শিউলি বেগম।
তৎকালীন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও বর্তমান জেলা যুবলীগের সভাপতি আকবর হোসেন চৌধুরী জানান, কমল তার সময়ের বরকল উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন পুলিশের নির্দয়তার কারণে কমলের মৃত্যু হয়েছে।
এ ঘটনার পর পুলিশ প্রশাসন কমলের স্ত্রীকে চাকুরীর আশ্বাস দিলেও পরবর্তিতে তারা কথা রাখেননি। এ নিয়ে জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতারাও উদাসিন বলে তিনি অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে তিনি পুলিশ প্রশাসনের সাথে কথা বলবেন বলে জানান।
কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনু সোহেল ইমতিয়াজ জানান, কমলের বিরুদ্ধে কোতয়ালী থানায় বন্যপ্রাণী পাচার মামলায় ওয়ারেন্ট ছিলো। তার মৃত্যুপর পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবারের সদস্যকে চাকরী দেয়ার আশ্বাসের ব্যাপারে তিনি বলেন এরক কোন বিষয় আমি জানি না।
মন্তব্য চালু নেই