মাছি তাড়ানোর ঘরোয়া সমাধান
ভাবুন তো আপনি একটি ফল খেতে যাচ্ছেন এবং দেখলেন সেটার ওপর মাছি বসে আছে! খুবই অরুচিকর ব্যাপার। শুধু কি তাই? এটা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।
কেননা মাছি ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য ক্ষতিকর জীবাণু বহনকারী। তবে মাছি শুধু ফলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এরা একই সঙ্গে বাড়িঘর, খাবারের দোকান, পয়োনিষ্কাশন নালা, নর্দমা এবং যেখানে খাবারের গন্ধ পায়, সেখানে হাজির হয়।
ফলের মাছি অত্যন্ত ছোট আকারের হয়, অনেক সময় খোলা চোখে এদের দেখা কষ্টকর হয়ে যায়। এরা মূলত চিনির মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট হয়, যা ফলে থাকে। মাছি সাধারণত অতিরিক্ত পাকা বা পচা ফলে বসে। কারণ এতে তাদের শুঁড় বসাতে সুবিধা হয়। পচা কলা, আম, আপেল, আঙুর বা যেকোনো বেশি পাকা ফল বিশেষ করে যেসব ফেলে দেওয়া হয় বা ফ্রিজের বাইরে রাখা হয়, সেগুলোর ওপর মাছি বসে।
মাছি থেকে দূরে থাকার সবচেয়ে বড় প্রতিরোধক বিষয় হলো, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সচেতনতা। যদি কেউ পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে সচেতন হয় তাহলে তার বাড়িতে মাছির উপদ্রব থাকবে না।
সারা বছর দেখা গেলেও প্রধানত গ্রীষ্মকালে মাছি বা কীটপতঙ্গের উৎপাত বেড়ে যায়। বাড়ির বাইরে খোলা স্থানে বা আবর্জনার স্তূপের ওপর ভনভন করতে দেখা যায়। তবে বাড়ির ভেতর, রান্নাঘরে বা খাওয়ার টেবিলে ঢুকতেও তাদের কোনো কষ্ট করতে হয় না। মাছি একবারে হাজার হাজার ডিম পাড়তে পারে। মাছিগুলোর প্রজনন হয় অত্যন্ত ঘন ঘন। সঠিক সময়ে এর সুরাহা না হলে, এটা বড় ধরনের উপদ্রবে পরিণত হবে।
বেশ কয়েকটি উপায়ে বিরক্তিকর ও রোগ-জীবাণু বহনকারী এই প্রাণীর উৎপাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। চলুন জেনে নিই সেই উপায়গুলো, যাতে মাছির উপদ্রব এড়িয়ে পরিষ্কার ও রোগ-জীবাণুমুক্ত খাদ্যদ্রব্য আমরা খেতে পারি।
* ফল ও শাকসবজি অবশ্যই সব সময় ভালোভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। এমনকি খাওয়ার আগে দু-তিনবার ধুয়ে নিতে হবে ফলমূল। অনেক সময় অন্যান্য পচনশীল ফলের সঙ্গে লেগে ফলের উপরিভাগ আঠালো বা চটচটে হয়। এসব ক্ষেত্রে ফল ও সবজিগুলোকে ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করলে মাছি থেকে রক্ষা করা যায়। বেশি পাকা ফল হয় ফেলে দিতে হবে, না হয় তাৎক্ষণিক খেয়ে ফেলতে হবে। বেশি পাকা ফল মাছিদের শক্তিশালী উৎস।
* আবর্জনার স্তূপ অবশ্যই ঢেকে রাখতে হবে এবং নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে ঘন ঘন আবর্জনা অপসারণ করতে হবে। তাহলে পচা আবর্জনার প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার সুযোগ থাকে না মাছিদের। আর আবর্জনার স্তূপেই মাছি ডিম পাড়ে কিন্তু আবর্জনা জমতে না দিলে মাছির বংশবিস্তারও কমে যাবে।
* প্রতিদিন ভালোভাবে রান্নাঘর পরিষ্কার করতে হবে। ফ্রিজের নিচে খাবার পড়ে থাকার বিষয়ে আমরা সচেতন থাকি না বা খেয়াল রাখি না। অনেক সময় খাবার ও হাঁড়িপাতিল রাখার আলমারি এবং চুলার নিচে খাবার পড়ে থাকে। এ বিষয়ে অনেকেই উদাসীন। অত্যন্ত ভালোভাবে পরিষ্কারই রান্নাঘরে অবাঞ্ছিত প্রাণীর প্রবেশ রুখতে পারে। এ ছাড়া বাসন মাজার ভেজা স্পঞ্জ, মপ, ঘর মোছার কাপড়, রান্নাঘর থেকে দূরে রাখতে হবে। একই সঙ্গে একটি মপ, কাপড়, বাসন মাজা স্ক্র্যাবার দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করা যাবে না। বড় (পূর্ণ বয়স্ক) মাছির ঘরে ঢোকা প্রতিহত করতে হবে, যাতে তারা ঘরে ডিম পাড়তে না পারে। ফলের রস বা কৃত্রিম রং ও গন্ধসমৃদ্ধ খাবারের পাত্র তাৎক্ষণিক ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে করে মাছির ঘরে ঢোকার সম্ভাবনা থাকে না।
* ঘরোয়া ফাঁদ পেতে মাছি মারা যায়। একটি গ্লাসে সামান্য আপেল সিডার ভিনেগার নিতে হবে। তবে গ্লাস ভর্তি করে ভিনেগার নেওয়া যাবে না। এরপর গ্লাসের মুখ সেলোফেন কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে দিতে হবে। এরপর রাবার দিয়ে গ্লাসের সঙ্গে কাগজটিকে বেঁধে ফেলতে হবে। একটি টুথপিক দিয়ে সেলোফেন কাগজের মাঝখানে একটি ছিদ্র করতে হবে। ছিদ্রটি এমনভাবে করতে হবে, যাতে সেটার মধ্য দিয়ে একটি মাছি ভেতরে ঢুকতে পারে এবং মাছিগুলো আর সেখান থেকে বের হতে না পারে। মাছিগুলো ভিনেগারের মিষ্টি গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে ভেতরে ঢুকে আটকে যাবে। এটি এমন জায়গায় রাখতে হবে যেখানে মাছির আনাগোনা সবচেয়ে বেশি। অথবা এটা ময়লা আবর্জনা জমা রাখা হয় এমন স্থানে রাখতে হবে।
* ফলের মাছি দূর করা ও মেরে ফেলতে কাগজের চোঙা হলো সবচেয়ে কার্যকরী ও সহজ উপায়। এর জন্য একটি লম্বা আকৃতির পানির পাত্র বা ফুলদানিতে যেকোনো তরল পদার্থ নিতে হবে। যা মাছিকে আকৃষ্ট করে বা মাছি ধরার টোপ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এরপর কাগজ দিয়ে চোঙা বানিয়ে তরলভর্তি ওই পাত্রে স্থাপন করতে হবে। ওই তরল পদার্থে আকৃষ্ট হয়ে মাছিগুলো কাগজের চোঙা দিয়ে ভেতরে ঢুকবে কিন্তু পালানোর সুযোগ পাবে না। যেখানে মাছি বংশবিস্তার করে সেখানে অথবা যেখানে খুব উপদ্রব সেখানে এই ফাঁদটি স্থাপন করতে হবে। একই রকম ফাঁদ বানিয়ে পাত্রে মিষ্টি গন্ধযুক্ত তরলের সঙ্গে সাবান পানি, ডিটারজেন্ট বা গরম পানিও ব্যবহার করা যেতে পারে, এতেও মাছি মরে যাবে।
মন্তব্য চালু নেই