মাকে খুঁজে পায়নি সেই আবির, তবে আদালতে পেল বাবাকে

ছোট্ট প্রাণের চাওয়া ছিল মায়ের স্নেহ পাওয়া। ভেবেছিল মায়ের কোলে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমাবে। তাতেই বুঝিবা গত কয়েক বছরে ছোট্ট শরীর আর মনের ওপর যে নির্যাতন হয়েছে, তা আর মনেই রইবে না। কিন্তু মায়ের পরশের আশায় বগুড়া থেকে ঢাকায় ছুটে আসা ১৪ বছরের আবিরকে এক বুক হতাশা নিয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে আগের জীবনে। মাকে খুঁজে পায়নি সে। বাবা তাকে ফিরিয়ে নিতে এসেছেন।

‘মাকে খুঁজতে এসে কারাগারে আবির’ শিরোনামে ২৬ জুন প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখে তাকে নিতে এসেছেন বাবা। বুধবার বেলা আড়াইটায় ঢাকা জজকোর্টে অবস্থিত শিশু আদালত বাবার কাছে আবিরকে ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন।

এর আগে সকালে আবিরের বাবা আবদুল মান্নান (৪০) ছেলেকে জিম্মায় নেওয়ার জন্য শিশু আদালতে আবেদন করেন। তিনি বলেন, পত্রিকায় ছেলের ছবি ও সংবাদ দেখে তিনি ঢাকায় এসে থানায় যোগাযোগ করেন। থানা থেকে তাঁকে জানানো হয়, আবিরকে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে আজ আদালতে আনা হবে। এ খবর পেয়েই তিনি আদালতে আসেন। আদালতের কাছে আবেদন করেন ছেলেকে ফিরে পাওয়ার জন্য।

এ ব্যাপারে সরকারি কৌঁসুলি শাহাবুদ্দিন মিয়া বলেন, ‘যেহেতু বাবা নিতে এসেছেন, তাই আদালতের কাছে আমরা ছেলেকে বাবার জিম্মায় দিতে বলি। আদালত বেলা আড়াইটায় শুনানি শেষে আবিরকে তার বাবার কাছে দেওয়ার নির্দেশ দেন।’

আবদুল মান্নান দাবি করেন, পাঁচ বছর আগে তাঁর স্ত্রী (আবিরের মা) তাঁকে ছেড়ে যান। এরপর স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর আর কোনো যোগাযোগ নেই।

এদিকে আদালতে বাবাকে দেখে খুশি হলেও মাকে ফিরে পাওয়ার আকুতি ঝরছিল আবিরের কণ্ঠে। আদালতে আবির বলেছে, সে তার মায়ের অভাব অনুভব করে সব সময়। মাকে দেখতে মন চায়। মায়ের কাছে থাকতে ইচ্ছা করে।

এর আগে গত শনিবার শেরেবাংলা নগর থানায় আবির এ প্রতিবেদককে জানায়, তার পুরো নাম মনির হোসেন। বাবার নাম আবদুল মান্নান। মায়ের নাম দুলালি বেগম। বগুড়ার সদর উপজেলার সাবগ্রাম উত্তরপাড়ায় তার বাড়ি। সাবগ্রাম উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। তার মা ছেড়ে আসার পর তার বাবা আবার বিয়ে করে নতুন সংসার শুরু করেন। নিজের মা-ও বিয়ে করেন ঢাকায়। এক বছর আগে ফোনে মায়ের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। তখন সে তার মাকে জানায়, সৎমা তাকে নির্যাতন করেন। সে আর বাবার সঙ্গে থাকবে না। এরপর থেকে মায়ের সঙ্গে প্রায়ই তার ফোনে কথা হতো। গত শুক্রবার তাঁর মা তাকে ঢাকার ফার্মগেটে আসতে বলেন। মায়ের কথামতো শনিবার বিকেলে ফার্মগেটে নেমে মায়ের জন্য অপেক্ষা করে। কিন্তু মায়ের মোবাইল বন্ধ পায় ছেলেটি। এরপরও মায়ের মোবাইল খোলা পায়নি। একপর্যায়ে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের বাসায় বাসায় ঘুরে মাকে খুঁজতে থাকে। পূর্ব রাজাবাজারের বাসিন্দা শহীদুল হক নামের এক ব্যক্তি আবিরকে শেরেবাংলা নগর থানায় নিয়ে যান। গত রোববার শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রুবেল আজাদ আবিরকে আদালতে হাজির করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর ঢাকার শিশু আদালতের বিচারক রুহুল আমিন আবিরকে টঙ্গীর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেন। খবর: প্রথম আলো

আরো পড়ুন : 

সেদিন থেকে তার কষ্টের জীবন শুরু



মন্তব্য চালু নেই