মসজিদের দানবাক্সের টাকা মেরে কোটিপতি!
চট্টগ্রামের পটিয়ায় শাহচান্দ আউলিয়ার (রহ.) মসজিদের দানবাক্সের টাকা মেরে এখন কোটিপতি নুরুল কবির ওরফে বাচ্চু মৌলভী! ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মসজিদের দানবাক্সের টাকা লোপাট করে আসার বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ার পর এলাকাবাসী রুখে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে প্রশাসন ওই দানবাক্সে ঝুলিয়ে দিয়েছে তালা। আর দানবাক্সে তালা ঝুলানোর কারণে পাগলপ্রায় হয়ে উঠেছেন বাচ্চু মৌলভীসহ তার সতীর্থরা। দানবাক্সের চাবি নেয়ার জন্য প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলে ধরনা দিচ্ছেন তারা। শাহচান্দ আউলিয়া মসজিদ উন্নয়ন কমিটি, স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। বিষয়টি পটিয়ার এমপি সামশুল হক চৌধুরী পর্যন্ত গড়িয়েছে।
সূত্র জানায়, পটিয়া পৌর সদরে অবস্থিত শাহচান্দ আউলিয়া (রহ.) মসজিদ উন্নয়নের জন্য মাজারসংলগ্ন এলাকায় একটি দানবাক্স স্থাপন করা হয়। ২০ বছর আগে মাদ্রাসার তৎকালীন অধ্যক্ষ পীরজাদা মাওলানা মুহাম্মদ মুছা ওই দানবাক্সের চাবি হস্তান্তর করেন মসজিদের ইমাম নুরুল কবিরকে। দানবাক্সের টাকায় মসজিদের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হবে এমনই সিদ্ধান্ত ছিল। বেশ কয়েক বছর দানবাক্সের টাকা মসজিদের উন্নয়ন কাজে ব্যয়ও হয়। গত ১৫ বছর ধরে দানবাক্সের টাকা আর পাচ্ছিল না মসজিদ পরিচালনা কমিটি। প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা দানবাক্সে পড়লেও ওই টাকা বাচ্চু মৌলভী নিজেই আত্মসাৎ করতে থাকেন বলে অভিযোগ ওঠে।
১৫ বছর আগেও বাচ্চু মৌলভী পৌরসদরে ভাড়া বাড়িতে থাকলেও এরই মধ্যে তিনি বনে গেছেন গাড়ি বাড়িসহ অঢেল সম্পত্তির মালিক। মসজিদের ইমামের দিনে দিনে ফুলে ফেঁপে ওঠা দেখে টনক নড়ে মুসল্লিসহ সংশ্লিষ্টদের। এর পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি মসজিদের উন্নয়নের জন্য গঠন করা হয় মসজিদ উন্নয়ন কমিটি। ওই কমিটি দানবাক্সের টাকা চাইতে গেলেই বাধে বিপত্তি। জানা যায়, তিনি নিজের আত্মীয়স্বজন ও কতিপয় লোক নিয়ে গোপনে গঠন করেন ওয়াকফ কমিটি। নিজেদের কোনো জায়গা জমি মসজিদে না থাকলেও ওয়াকফ কমিটি করে নিজেই মসজিদের হর্তা-কর্তা বনে যান। নিজেই দানবাক্সের মালিক দাবি করতে থাকেন। এদিকে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর মসজিদ উন্নয়নের কাজে সম্পৃক্ত মুসল্লি ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা কথিত ওই ওয়াকফ কমিটির বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তারা এর বিরুদ্ধে ঢাকায় ওয়াকফ প্রশাসকের কাছে আবেদন জানালে তদন্ত শেষে ওয়াকফ প্রশাসক গত ৩১ মার্চ কথিত ওয়াকফ কমিটি বাতিল করে দেন। এরপরও গত ১২ এপ্রিল মসজিদের আলোচিত সেই দানবাক্স খুলে টাকা তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় মসজিদ উন্নয়ন কমিটির কর্মকর্তারা আপত্তি জানালে বাচ্চু মৌলভী ও তার লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে যান। এ সময় তারা উন্নয়ন কমিটির সদস্য নুরুল ইসলামকে মারধর করেন। খবর পেয়ে পটিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং আলোচিত সেই দানবাক্সে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
এদিকে মসজিদের ‘দানবাক্সের টাকা মেরে কোটিপতি’ হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নুরুল কবির এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কোনো টাকা মারিনি। যারা টাকার হিসাব চাচ্ছে তাদের কেন আমি টাকা বুঝিয়ে দেব? প্রয়োজনে সরকারকে টাকার হিসাব দেব।
উৎসঃ মানবকন্ঠ
মন্তব্য চালু নেই