মধ্যবর্তী নির্বাচনে ‘না’

মধ্যবর্তী নির্বাচনে সায় নেই সরকারের। বিএনপি এবং তাদের মিত্র ১৯ দল নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা এবং মধ্যবর্তী নির্বাচনের যে দাবি তুলেছে তাতে কর্ণপাত করছে না সরকারে থাকা আওয়ামী লীগ।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলসহ গণফোরাম ও সিপিবি আগাম নির্বাচনের জন্য আলাদাভাবে সরকারের প্রতি চাপ সৃষ্টি করে চলেছে। প্রধানমন্ত্রীর কথার সূত্র ধরে বিএনপি আরো একধাপ এগিয়ে বলেছে, সময়মতো নির্বাচনের কথা বলে সরকার দ্রুত নতি স্বীকার করতে যাচ্ছে। তাদের উচিৎ এখনই নির্বাচন দিয়ে জনমত যাচাই করা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, বিএনপি এমন এক সময় এ দাবি তুলেছে যখন কূটনৈতিকভাবে ভালো অবস্থান তৈরি করেছে সরকার। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ঘিরে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়িয়েছিল বিএনপি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আমেরিকার ভরসাও পেয়েছিল। কোনোভাবেই ওই নির্বাচনকে সমর্থন দেয়নি তারা। আওয়ামী লীগও নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ে। সে অবস্থার উত্তরণ ঘটিয়েছে সরকার, আর ব্যর্থতার কবলে পড়েছে বিএনপি।

কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন (সিপিএ) ও ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ)- এ দুটি সংস্থার সর্বোচ্চ পদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীর বিজয়কে কূটনৈতিক বিজয় হিসেবেও দেখছে সরকার সংশ্লিষ্টরা। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে আর কোনো প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে না সরকারকে।

একে সংসদীয় গণতন্ত্রের বিজয় এবং ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে মূলত সংসদীয় পদ্ধতি চালু রাখা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে বিএনপি ওই নির্বাচনকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে আগাম নির্বাচন দেওয়ার দাবি অব্যাহত রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক সরকার যেকোনো সময় নির্বাচন দিতে পারে।’ তবে ২০১৯ সালের আগে কোনো আগাম নির্বাচন হবে না, এমন স্পষ্ট ইঙ্গিত দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর মতে, দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে এখনই নির্বাচন নয়। যে অসমাপ্ত কাজ এবং উন্ননমূলক কাজ পড়ে আছে তা সম্পন্ন করা জরুরি। রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের জন্য ২০১৯ সালের আগে আর নির্বাচন হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বাস এই সময়ের মধ্যে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ।

তবে বিএনপি সরকারের এই যুক্তি মানতে রাজি নয়। ‘সময়মতো নির্বাচন’ প্রধানমন্ত্রীর এই উক্তিকে সরকারের দুর্বলতা হিসেবেই দেখছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম। তার মতে, ওই কথা বলে সরকার নতি স্বীকার করতে শুরু করেছে।

আন্দোলন করে বিএনপি বা তার মিত্র দলগুলো সরকারকে মধ্যবর্তী নির্বাচনে বাধ্য করতে পারবে না, এমনই ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

ব্যবসায়ী নেতা লিয়াকত আলী ভূইয়া বলেছেন, ‘বিএনপি যে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি করেছে তা হয়তো মানবে না সরকার। কারণ, নির্বাচনে যাওয়ার জন্য যে জনসমর্থন দরকার তাতে অনেকটাই ভাটা পড়েছে আওয়ামী লীগের। এই চার বছরে উন্নয়নমূলক কাজ করে কিছুটা হলেও জনসমর্থন উদ্ধারে চেষ্টা করবে দলটি। এই সময়ের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতিও সেরে ফেলবে। যে কারণে এখনই নির্বাচনের কথা ভাববে না সরকার। এটাই স্বাভাবিক।’

এ দিকে গোলাম আযমের জানাযায় বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের অনুপস্থিতি জামায়াত এবং বিএনপির মধ্যে নতুন করে দূরত্ব তৈরি করেছে। গোলাম আযমের ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আযমী চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেছেন, ‘জামায়াত ছাড়া বিএনপি সরকার গঠনে সমর্থ নয়।’ এ মন্তব্য দুই দলের মধ্যকার বিরোধকেও প্রকাশ্যে এনেছে।

রাজনৈতিক মেরুকরণেই মধ্যবর্তী নির্বাচন বা আগাম নির্বাচন না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে ধারণা করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।



মন্তব্য চালু নেই